সৈয়দ মোদী, প্রকাশ পাড়ুকোন, পুল্লেলা গোপীচাঁদ, অতীতে ভারত থেকে পুরুষ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় অনেকেই উঠে এসেছেন। কিন্তু অপর্ণা পোপট বা মধুমিতা সিংহ বিস্ত বাদে সে ভাবে মহিলা খেলোয়াড়দের উত্থান দেখা যায়নি।
গত দশকের শুরু থেকে সেই চিত্রটাই বদলাতে থাকে। ভারতের ব্যাডমিন্টন আকাশে চলে আসেন সাইনা নেহওয়াল। একের পর এক বড় প্রতিযোগীদের হারাচ্ছিলেন তিনি।
পরবর্তী কালে পিভি সিন্ধু এসেছেন ঠিকই, কিন্তু তার আগে পর্যন্ত বছর পাঁচ-ছয়েক একাই রাজত্ব করেছিলেন সাইনা। সেই সময় ধুমকেতুর গতিতে উত্থান হয় তাঁর।
মায়ের অধরা স্বপ্ন পূরণ করতেই ব্যাডমিন্টনকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। বাবার বদলির পর হায়দরাবাদে এসে ব্যাডমিন্টন খেলার স্বপ্ন আরও বৃদ্ধি পায়। আট বছর থেকেই ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করেন।
জীবনে অনেক কিছু অর্জন করেছেন সাইনা। অনেক কীর্তি গড়েছেন, ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন। কিন্তু সাফল্যের পাশাপাশি দেখতে হয়েছে ব্যর্থতার মুখও।
২০০৬-এ অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। সেই শুরু। সে বছরই প্রথম ভারতীয় এবং তরুণতম এশীয় হিসেবে ‘ফোর স্টার’ প্রতিযোগিতা জেতেন। একই বছরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এশিয়ান গেমসেও অংশ নিয়েছিলেন।
২০০৭-এ মাত্র ১৭ বছর বয়সে অল ইংল্যান্ডে খেলেন। পরের পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাব জেতেন সাইনা। সে বছরই বেজিং অলিম্পিক্সে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন।
২০০৯-এর জুনে প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে বিডব্লিউএফ সুপার সিরিজ খেতাব জেতেন। বিশ্বের অন্যতম কঠিন প্রতিযোগিতা ইন্দোনেশিয়ান ওপেনে ট্রফি পান তিনি।
২০১০-এ প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে অল ইংল্যান্ডের সেমিফাইনালে ওঠেন। সে বছর কেরিয়ারের সেরা তিন নম্বর র্যাঙ্কিংয়ে উঠেছিলেন তিনি। ভারতে আয়োজিত কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পান সাইনা।
২০১২-এ আবার ইতিহাস তৈরি করেন তিনি। প্রথম ভারতীয় হিসেবে অলিম্পিক্সে পদক জেতেন। ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিলেন সাইনা। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় অবসর নেন।
২০১৫ সালে নিজেকেই ছাপিয়ে যান তিনি। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে অল ইংল্যান্ডের ফাইনালে ওঠেন। তবে হেরে যান। এর পর ইন্ডিয়া ওপেন জিতে বিশ্বের এক নম্বর মহিলা খেলোয়াড় হন। এই নজির এর আগে ভারতের কোনও মহিলা খেলোয়াড়ের ছিল না।
এর পর থেকে আস্তে আস্তে ব্যর্থতা আসতে থাকে সাইনার জীবনে। চোট থাবা বসাতে থাকে কেরিয়ারে। ২০১৬ রিয়ো অলিম্পিক্সে প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেন।
পরের বছরই আবার সাফল্য। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠে ব্রোঞ্জ জেতেন সাইনা। সে বার এই প্রতিযোগিতায় রুপো জিতেছিলেন সিন্ধু।
২০১৮ বছরটাও খারাপ যায়নি। প্রথমে কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতেন। এর পর এশিয়ান গেমসে পদক পান।
প্রথম ভারতীয় মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিক্স, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, এশীয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এশিয়ান গেমস এবং কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতেছেন তিনি।
সাম্প্রতিক কালে চোটের কারণে একের পর এক প্রতিযোগিতায় খেলতে পারেননি তিনি। করোনা অতিমারিও মানসিক ভাবে প্রভাব ফেলেছে তাঁর জীবনে।
যথেষ্ট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারার কারণে র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি হয়নি। ফলে টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যেতে পারেননি সাইনা। এই ঘটনাও তাঁকে মানসিক ভাবে আঘাত দিয়েছে।
বিয়ে করেছেন ভারতীয় ব্যাডমিন্টন পরিবারেরই খেলোয়াড় পারুপাল্লি কাশ্যপকে। সম্প্রতি বিজেপি-তে যোগও দিয়েছেন। সমর্থকদের এখন প্রশ্ন, সাইনাকে কি আর কোর্টে আগের মতো ক্ষিপ্র হতে দেখা যাবে?
সাইনা নিজে সরকারি ভাবে এর কোনও উত্তর দেননি। তবে এখন তিনি অল ইংল্যান্ড ওপেনে খেলছেন। প্রথম রাউন্ডে জিতেও গিয়েছেন। তবে আগের মতো সাফল্য এখন পাবেন কিনা, সেটা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। যদি কাঙ্ক্ষিত ফল না পান, তা হলে কি সাইনা অবসর নেবেন? সময়ই বলবে।