গেমস ভিলেজের ডাইনিং হল-এ কোচ জিশান আলি, রোহন বোপান্নাদের সঙ্গে ফুরফুরে সানিয়া মির্জা।ছবি: টুইটার
পুরো টিম এল, শুধু সাইনা নেহওয়াল কেন আপনাদের সঙ্গে এলেন না?
সাও পাওলো থেকে রিওর বিমান ধরার অপেক্ষায় থাকা গোপীচন্দ্র প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পড়লেন মনে হল। ভারতীয় ব্যাডমিন্টন দলের কোচ বললেন, ‘‘ও আলাদা আসবে কাল। বেঙ্গালুরু থেকে।’’ যার কয়েক ঘণ্টা পরে লন্ডন গেমসে ব্রোঞ্জজয়ী হায়দরাবাদি তারকা আবার জানালেন, তিনি রবিবার ভারত ছাড়ছেন। অলিম্পিক্স ভিলেজে ঢুকতে ঢুকতে সাত তারিখ।
মার্চপাস্টে তা হলে সাইনা থাকছেন না? গোপী মাথা নাড়েন। ‘‘জানি না, বলতে পারব না,’’ বলতে বলতে নিজের কাছে ডেকে নিলেন সাইনার শহরের আর এক তারকা পিভি সিন্ধুকে।
সাইনার বর্ণময় কেরিয়ারে এখন পর্যন্ত অলিম্পিক্স পদককে সেরা সাফল্য ধরা হয়। আর তখন তাঁর কোচ ছিলেন গোপী-ই, সে কথা তুললে তিনি একটা অদ্ভুত হাসি হাসলেন। দেখে বোঝার উপায় নেই, সেটা রাগের, যন্ত্রণার, না, তৃপ্তির?
সাইনার জীবন থেকে মুছে গিয়েছেন প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন গোপীচন্দ। প্রায় বছর দুই হতে চলল তাঁর অ্যাকাডেমি ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে বিমলকুমারের কাছে নিয়মিত ট্রেনিং করেন সাইনা। পেশাদার ট্যুরে মাঝারিমাপের টুর্নামেন্টগুলোয় তো বটেই, অল ইংল্যান্ড, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, প্রিমিয়ার সুপার সিরিজের মতো বড়মাপের আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনের মঞ্চে টিম ইন্ডিয়া-র কোচিংয়ে গোপী থাকলেও ইদানীং সাইনার দায়িত্বে কোর্টের ধারে দেখা যায় বিমলকে। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রাক্তন এক নম্বর ভারতীয় কন্যার ব্যক্তিগত কোচ হিসেবে। রিওতেও সেই ছবি দেখা যাবে।
সাইনার সঙ্গে যোগাযোগ করে যা জানা যাচ্ছে, শুক্রবার অবধি বেঙ্গালুরুতে বিমলের ট্রেনিংয়ে থেকে তিনি হায়দরাবাদ ফিরছেন। শনিবার বাবা হরবীর সিংহকে নিয়ে রিও রওনা দেবেন। দুবাই হয়ে। ব্যক্তিগত কোচ বিমল বেঙ্গালুরু থেকে দুবাইয়ে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেবেন। আপনার আলাদা ফ্লাইট শিডিউলের কারণ কী? প্রশ্ন করলে দিনের প্রথম দফার প্র্যাকটিস সেরে ওঠা সাইনা বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে ব্যাখ্যা দিলেন, রিওতে তাঁর প্রথম ম্যাচ ১১ অগস্ট। সাত তারিখে গেমস ভিলেজে ঢুকলেও হাতে চার দিন থাকবে ব্রাজিলের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। বেঙ্গালুরুর অত্যাধুনিক অ্যাকাডেমির সুযোগসুবিধে গেমস ভিলেজের সার্বিক ট্রেনিং সেন্টারে নাও পাওয়া যেতে পারে। সে কারণে বাড়তি যে ক’দিন সম্ভব বেঙ্গালুরুতে থেকে যাচ্ছেন। তা ছাড়া দেশের মতো রিওতেও বিমল-ই তো তাঁর কোচ হিসেবে গেমপ্ল্যান ঠিক করবেন।
যে প্রসঙ্গে গোপী এখানে ঢুকতে চাইলেন না। বরং একটু ঘুরিয়ে বললেন, ‘‘প্লেয়ারের পদক ভাগ্য তো নির্ভর করবে কার সঙ্গে তার খেলা পড়ছে, সেটার উপর।’’ জাতীয় কোচের পাশে তখন সিন্ধু, জ্বালা গাট্টা, শ্রীকান্তরা। চার বছর আগে লন্ডনে সাইনা ছিলেন গোপীর বাজি। রিওতে সিন্ধুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন হাবেভাবেই বোঝা যায়। আধঘণ্টার মধ্যে অন্তত কুড়ি মিনিট সিন্ধুকে কী সব বোঝালেন গোপী। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে দু’বারের ব্রোঞ্জজয়ী সিন্ধু বাধ্য ছাত্রীর মতো মাথা নাড়ছিলেন।
গোপীর টিমের সঙ্গে সাইনা না এসে গেমস ভিলেজে গুঞ্জন ছড়ালেও তাঁর শহরের আর এক বিতর্কিত তারকা কন্যা সানিয়া মির্জা দিন দুই হয়ে গেল পৌঁছে গিয়েছেন গেমস ভিলেজে। ভারতীয় টেনিস দলের প্রথম প্লেয়ার হিসেবে। লিয়েন্ডার, বোপান্না, প্রার্থনারা (পরের দু’জন অবশ্য ইতিমধ্যে পৌঁছেছেন) কেউ আসার আগেই হাজির বিশ্বের এক নম্বর ডাবলস প্লেয়ার সানিয়া। তাঁকে শেফ দ্য মিশন রাকেশ গুপ্তা স্বয়ং ‘রিসিভ’ করে অলিম্পিক্স স্যুভেনির তুলে দিয়েছেন হাতে। তাঁর তিন নম্বর অলিম্পিক্সে নামার আগে সানিয়া বলেছেন, এ বার ডাবলস-মিক্সড ডাবলসে যতগুলো টিম নামবে সবাই শক্তিশালী। জানিয়েছেন, মন্ট্রিয়ল থেকে আসতেও নাকি তাঁর ধকল গিয়েছে। তবুও অলিম্পিক্সে দেশের হয়ে নামাটা তাঁর কাছে সব সময় আগে। সানিয়াকে দেখতে গেমস ভিলেজে ভিড় হয়ে যাচ্ছে। অন্য খেলার ভারতীয়রা তাঁর আশপাশে ঘুরছেন সেলফি তুলতে।
দেশে লিয়েন্ডারকে অলিম্পিক্সের দল নির্বাচনের আগে যত বিতর্কই তৈরি হোক, রিওতে এসে কিন্তু সানিয়া-বোপান্না সেই প্রসঙ্গে নীরব। সানিয়ার ডাবলস উদ্বোধনের পরের দিনই। বোপান্নার সঙ্গে জুটিতে ডাবলস খেলবেন ১০ অগস্ট। যে ইভেন্টে পদক আশা করছেন অনেকে। গ্র্যান্ড স্ল্যাম-সহ পেশাদার সার্কিটে দুই ভারতীয় টেনিস তারকার আলাদা-আলাদা বিদেশি পার্টনার নিয়ে সাম্প্রতিক চমৎকার পারফরম্যান্সের কারণে। সানিয়া অবশ্য টিমের সবার লড়াইয়ের কথা বলছেন এখানে সাংবাদিকদের। তাঁর মতো ঠোঁটকাটা, স্পষ্টবাদীর থেকে যা অপ্রত্যাশিত!
সাইনা-সানিয়া। ২০১৬ অলিম্পিক্স উদ্বোধনের আগের দিন দুই হায়দরাবাদি কন্যা যেন দুই বিপরীত মেরুতে!