স্মৃতিচারণ: বিশ্বকাপ জয়ের পরে সচিনের সঙ্গে ট্রফি হাতে ভক্ত সুধীর। ফাইল চিত্র
ফোনের কলার টিউনে সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে জীবনের শেষ টেস্ট খেলার পরে সচিন তেন্ডুলকরের ‘ফেয়ারওয়েল স্পিচ’ শুনতে পাবেন তাঁকে ফোন করলেই। মাঠে গিয়ে সচিনের ম্যাচ দেখার সুযোগ আর হয় না। কিন্তু ভারতীয় দলের ম্যাচে গ্যালারিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতেন তিনি। তেরঙ্গায় রাঙানো থাকত তাঁর শরীর। বুকে লেখা ‘তেন্ডুলকর’।
সেই সুধীর গৌতম এখন অসহায়। ক্রিকেট সমর্থক হিসেবে পরিচয় পাওয়া সুধীর আপাতত কোনও স্টেডিয়ামে বসে ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবেন না। শেষ চার মাস বিহারের দামোদরপুরের বাড়িতেই রয়েছেন। তাঁর কোনও আয় নেই। সংসারে সাহায্যও করতে পারেন না। দেশ, বিদেশে ম্যাচ দেখে বেরানোর সৌজন্যে কিছু স্পনসর পেতেন। টিকিট ও ভিসার ব্যবস্থা করে দিতেন সচিন নিজেই। যেই শহরে যেতেন, সেখানে কোনও বন্ধুর সঙ্গে থাকতেন। সমর্থকেরাই খুশি হয়ে তাঁকে আর্থিক সাহায্য করত।
করোনা সঙ্কটে সে সব বন্ধ। তাই অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজতে শুরু করেছেন সুধীর। দামোদরপুরেই ড্রাইভিং ক্লাস করছেন। ট্রেনিং শেষ হলে দিল্লিতে গিয়ে ট্যাক্সি চালাবেন। সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করে ভারতের অস্ট্রেলিয়া সফরে খচর করবেন। আনন্দবাজারকে ফোনে সুধীর বলেন, ‘‘আমার কোনও আয় নেই। সংসারে সাহায্য করতে পারি না। লকডাউনে পারিবারিক ব্যবসার অবস্থাও খুব খারাপ। কোনও উপায় নেই, এ বার আয়ের কোনও রাস্তা দেখতেই হবে।’’ কী করবেন? ‘‘কোনও পার্ট-টাইম চাকরি পেলে করতাম। এখন তারও কোনও উপায় নেই। ড্রাইভিং শিখছি। ট্রেনিং শেষ হলে দিল্লিতে ট্যাক্সি অথবা অ্যাপ ক্যাব চালাব। তিন মাস চালালেই অস্ট্রেলিয়ায় হাতখরচের টাকা উঠে আসবে। এমনিতে আমার ভিসা, আসা-যাওয়ার টিকিট সব সচিন স্যরই করে দেন। যে শহরে যাই, বন্ধুদের কাছেই থাকি,’’ বলছিলেন সুধীর।
করোনা পরবর্তী ক্রিকেটে তো মাঠে বসে ম্যাচ দেখার অনুমতি নেই। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন? সুধীরের কথায়, ‘‘ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, দ্রুত এই যুদ্ধ থেকে আমরা যেন জিতে ফিরতে পারি। মাঠে বসে ম্যাচ দেখার মতো সুখ আর কোথাও আছে বলে আমার ধারণা নেই।’’
সচিন অবসর নেওয়ার পর থেকে আইপিএল সে ভাবে দেখেন না। সেমিফাইনাল অথবা ফাইনালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স উঠলে তবেই মাঠে যান। এ বারের আইপিএল দুবাইয়ে হলে তাঁর যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভক্ত মোহালির রাম বাবুর মূল আকর্ষণ যে আইপিএল। বিশ্বকাপের পরে একমাত্র আইপিএলেই প্রত্যাবর্তনের সুযোগ ধোনির। সেই মুহূর্তের সাক্ষী হতে চান তিনি। কিন্তু মরুশহরে আইপিএল হলেও সমর্থকরা হয়তো মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন না। তাই বেশ সঙ্কটে রাম বাবু। বলছিলেন, ‘‘মাহিভাইয়ের ব্যাটিং দেখেছি সেই ম্যাঞ্চেস্টারে। নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে। সমর্থকদের উন্মাদনায় মন ভরে গিয়েছিল আমার। এখন একই মাঠে ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ চলছে। কোনও সমর্থক নেই। নিষ্প্রাণ ক্রিকেট। এই পরিস্থিতি কখনওই আশা করিনি।’’
রাম বাবুরও কোনও আয় নেই। ধোনি-ভক্ত হিসেবে বিখ্যাত হওয়ার পর থেকে স্পনসরের টাকায় সংসার চলত তাঁর। যেখানেই ম্যাচ হয়, তাঁকে স্পনসর করা হয় সমর্থন করতে যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে যা অর্থ বাঁচত, তা দিয়েই সংসার চালাতেন। এই লকডাউন সেই আয়ের রাস্তা কেড়ে নিয়েছে। তিনি বিবাহিত। দুই সন্তানও আছে। কী ভাবে নিজের সংসার চালাবেন জানেন না। রাম বাবুর কথায়, ‘‘আমার সঙ্কটের কথা মাহিভাইকে এখনও জানাইনি। জন্মদিনে একটি ভিডিয়ো করে পাঠিয়েছি। তা দেখে ধন্যবাদও জানিয়েছে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আমি খুবই ভেঙে পড়েছি। চেষ্টা করছি কোনও একটা আয়ের রাস্তা বার করার। মাঠে সমর্থকদের প্রবেশ করতে না দিলে আমাদের কোনও অস্তিত্বই নেই।’’
বিরাট কোহালির ভক্ত পিন্টু বেহরা ও ইউসুফও একই রকম সঙ্কটে। পিন্টুর কথায়, ‘‘যতই কাজের চাপ থাকুক, বিরাট স্যরকে দেখলে আলাদা শক্তি পাই। সব রকম প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে চলার রসদ পাই বিরাট স্যরের ব্যাটিং দেখে। কবে মাঠে বসে সেই কভার ড্রাইভ দেখতে পাব। ঈশ্বরই জানেন।’’