সচিনের ফোনে তরতাজা হিমার চোখ টোকিয়োয়

যাঁকে নিয়ে খুশির আবহ ভারতীয় ক্রীড়াজগতে, সেই হিমা দাস আবার আনন্দে ভাসছেন সচিন তেন্ডুলকরের ফোন পেয়ে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৪:১১
Share:

অপ্রতিরোধ্য: শেষ ইভেন্টে সোনা জয়ের পরে পোডিয়ামে হিমা। টুইটার

গত ১৯ দিনে ইউরোপের পাঁচটি অ্যাথলেটিক্স মিটে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই সোনা! ভারতের সোনার মেয়ে সেই হিমা দাসের এই কৃতিত্বে মুগ্ধ গোটা ভারত। যা দেখে আপ্লুত স্বয়ং সচিন তেন্ডুলকরও।

Advertisement

আর যাঁকে নিয়ে খুশির আবহ ভারতীয় ক্রীড়াজগতে, সেই হিমা দাস আবার আনন্দে ভাসছেন সচিন তেন্ডুলকরের ফোন পেয়ে। রবিবার বিকেলে সচিনই অভিনন্দন জানাতে চেক প্রজাতন্ত্রে ফোন করেছিলেন হিমাকে। দু’জনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথাও হয়। যে ফোন পেয়ে উচ্ছ্বসিত হিমার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আজ বিকেলে স্বপ্ন সত্যি হল। ফোন করে অভিনন্দন জানালেন ক্রিকেটের ঈশ্বর ও আমার আদর্শ সচিন তেন্ডুলকর স্যর। আপনাকে ধন্যবাদ প্রেরণামূলক কথার জন্য। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের জন্য প্রচেষ্টায় কোনও খামতি রাখব না।’’

সচিনের সঙ্গে হিমার পরিচয় গত বছর। মুম্বইয়ে নিজের বাড়িতে হিমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার। সেখানেই হিমাকে নিজের শেষ টেস্টের জার্সি সই করে হিমাকে উপহার দিয়েছিলেন সচিন। এ দিন হিমার সঙ্গে কথা বলেই সচিন টুইট করেন, ‘‘তোমার সঙ্গে কথা বলে দারুণ লাগল হিমা। আশা করি, শীঘ্রই দেখা হবে।’’ যা জানার পরে হিমাও পাল্টা টুইট করেন, ‘‘নিশ্চয়ই স্যর। ভারতে ফিরলে আপনার কাছে গিয়ে আশীর্বাদ নিয়ে আসব।’’

Advertisement

ভারতীয় দলে সচিনের সতীর্থ গৌতম গম্ভীরও হিমার পাঁচ সোনা জয়ে বিষ্মিত। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের সোনার মেয়েকে তো কেউ থামাতেই পারছে না। এই মুহূর্তে যখন অসমে অন্ধকার পরিস্থিতি, তখন সেখানকার মানুষের কাছে হিমা বিদ্যুৎ চমকের মতোই ঝলসাচ্ছে।’’

রবিবার বিকেলে টেলিফোনে আনন্দবাজারের প্রতিনিধির কাছ থেকে যা শুনে হিমার মা জোনালি দাসও প্রথমে অবাক। তার পরে বলেন, ‘‘সচিন-গম্ভীরদের মতো বিখ্যাত কোনও খেলোয়াড় আমার মেয়ের প্রশংসা করেছেন, তা শুনতে ভালই লাগে। আনন্দ হচ্ছে, গত ১৯ দিনে পাঁচ সোনা জয়েও। কিন্তু আমি গর্বিত মেয়ে অসমের এই দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয়। নিজের যেটুকু সামর্থ্য, তা দিয়েই বন্যার্তদের সাহায্য করায়। জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকেই শুনলাম, হিমার এই পদক্ষেপের পরেই নাকি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে অনুদান আসার সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। মা হিসেবে এটাই আমাকে বেশি গর্বিত করছে।’’

হিমার মা এর পরেই বলতে শুরু করেন অসমের ভয়াবহ বন্যা নিয়ে। বলেন, ‘‘আমাদের গ্রাম কান্ধুলিমারি থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ কিছুটা দূরে। তাই আমাদের গ্রাম সে ভাবে ভেসে যায়নি। কিন্তু পাশের গ্রামগুলো বন্যা আক্রান্ত। সেখানে অনেক আত্মীয় রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি জলের তলায়। এই বিপদের দিনে হিমার উদ্যোগ দেখে মনে হচ্ছে ও প্রকৃত মানুষ হয়েছে।’’

অসমের সেই সোনার অ্যাথলিট হিমা দাসের এই ম্যাজিক পারফরম্যান্সের পরেও অবাক নন তাঁর ছোটবেলার কোচ নিপন দাসও। বলছেন, ‘‘আরও ভাল করতে হবে। হিমাকে সেটাই বলেছি। আর সেটা করার ক্ষমতাও রাখে ও।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘রবিবারেও কথা হল। এই প্রতিযোগিতাগুলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে যোগ্যতা অর্জনের জন্য। জুলাইয়ের শেষ দিকে আরও একটা প্রতিযোগিতা রয়েছে। আশা করছি, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের যোগ্যতা পাবে ও।’’ সঙ্গে বলছেন, ‘‘ওকে মনে করিয়ে দিয়েছি, চোটের কারণে এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দৌড়তে না পারায় গেল গেল রব উঠে গিয়েছিল। পাখির চোখ কিন্তু টোকিয়ো অলিম্পিক্স। সেখানে ব্যর্থ হলে কেউ কিন্তু এই পর পর সোনা জয়ের কথা মাথায় রাখবে না। তাই আত্মতুষ্টিতে ভাসতে নিষেধ করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement