মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং এনএফএল-এর কমিশনার রজার গুডওয়েল। দু’ জন এখন ভিন্ন মেরুতে।—ফাইল চিত্র।
আমেরিকার সুবিখ্যাত ফুটবল লিগ (এনএফএল) কি এ বার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষানলে পড়তে চলেছে? চার বছর আগের এক ঘটনাকে খুঁচিয়ে তুলে ট্রাম্পের টুইট এবং তার উত্তরে লিগ কমিশনারের ভিডিয়ো বার্তায় সেই আশঙ্কাই দেখছে সে দেশের ক্রীড়া ও রাজনৈতিক মহল।
পুলিশি অত্যাচারে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে ফুটছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সামাজিক সাম্যের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এই আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাশনাল ফুটবল লিগ বা এনএফএল-এর চার বছর আগের এক বিতর্ককে নতুন করে সামনে আনলেন একটি টুইট করে।
কী সেই বিতর্ক? কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০১৬ সালে এনএফএল-এর একটি ম্যাচের আগে জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন হাঁটু মুড়ে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সান ফ্রান্সিসকো ফোরটিনাইনার্সের খেলোয়াড় কলিন কাপেরনিক।
আরও পড়ুন: করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হলেন তৌফিক উমর
আরও পড়ুন: আক্রমের বাছাই সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকায় পাঁচ নম্বরে সচিন! তুঙ্গে বিতর্ক
তার পর থেকে এনএফএল-এর কোনও ক্লাব তিনি আর পাননি। জাতীয় সঙ্গীতের সময়ে হাঁটু মুড়ে প্রতিবাদ জানানো ভাল ভাবে নেয়নি ট্রাম্প সরকার। এনএফএল-এর ক্লাবগুলোর মালিকদের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাফ বার্তা ছিল, যাঁরা এমন ধরনের আচরণ করবেন, তাঁদের ছাঁটাই করতে হবে। সেই কারণেই কাপেরনিক ছিটকে যান।
জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পরে সেই পুরনো ঘটনা আবার নতুন করে যেন জেগে উঠল। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এনএফএল-এ জাতীয় সঙ্গীত চলাকালীন অনেক খেলোয়াড়ই আবার কাপেরনিকের মতো করেই প্রতিবাদ জানাবেন।
সেই প্রসঙ্গে নিউ অরলিয়েন্স সেইন্টসের খেলোয়াড় ড্রু ব্রিস গত সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে জানান, খেলার আগে হাঁটু মুড়ে বসে প্রতিবাদ জানানো অসম্মানজনক। কেউ এমন কাজ করলে আমি তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করি না।
তাঁর এ হেন সাক্ষাৎকারের পরেই সতীর্থরা ব্রিসকে ভর্ৎসনা করেন। বৃহস্পতিবার নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন ব্রিস। এ রকম পরিস্থিতিতে আচমকাই ব্রিসের পাশে এসে দাঁড়ান স্বয়ং ট্রাম্প। তাঁর প্রশংসা করার পাশাপাশি শুক্রবার টুইট করে ট্রাম্প লিখেছেন, “জাতীয় সঙ্গীত চলার সময়ে স্যালুট অথবা বুকের কাছে হাত নিয়ে আমাদের সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। গ্রেট আমেরিকান ফ্ল্যাগের সামনে নতজানু হয়ে বসে প্রতিবাদ দেখানো একেবারেই চলবে না।”
বিতর্ক বাড়ে এর পরই। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু এবং ট্রাম্পের এই টুইটের পরে এনএফএল-এর কমিশনার রজার গুডওয়েল ৮১ সেকেন্ডের এক ভিডিয়ো বার্তা দেন। সেই ভিডিয়ো বার্তায় তাঁদের আগের ভুল স্বীকার করে জানানো হয়, চার বছর আগে কাপেরনিকের প্রতিবাদের সময় এনএফএল তাঁর পাশে না দাঁড়িয়ে ভুল করেছিল। সেই ভিডিয়ো বার্তায় এনএফএল কমিশনার বলেছেন, “আমরা (এনএফএল) বর্ণবৈষম্য এবং কৃষ্ণাঙ্গদের উপরে যে অত্যাচার চলছে তার নিন্দা করছি। এনএফএল স্বীকার করে নিচ্ছে যে, অতীতে খেলোয়াড়দের কথা না শুনে এবং তাঁদের পাশে না দাঁড়িয়ে আমরা ভুল করেছি। খেলোয়াড়দের শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ জানানোকে আমরা উৎসাহ জোগাচ্ছি।” কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড় ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এনএফএল হওয়া যে সম্ভবই নয়, সেই কথাও ভিডিয়োয় জানিয়েছেন গুডওয়েল।
এই ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে গুডওয়েল সরাসরি প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করলেন বলে মনে করছেন ক্রীড়া ও রাজনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। তাঁদের আশঙ্কা, এর ফলে এনএফএল হয়ত প্রেসিডেন্টের রোষানলে পড়তে পারে।