রজার বেরিয়ে গেলেন। থাকলেন সেই জকোভিচ। মেলবোর্ন, বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি।
এখন ছেলেদের টেনিসে জকোভিচ আর মেয়েদের সার্কিটে সেরিনার এমনই একচ্ছত্র দাপট যে, একটার ফাইনালের দু’দিন আগে আর অন্যটার বিপক্ষের সেমিফাইনাল বাকি থাকতেও বলে দেওয়া যায়, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ওরাই চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। ৩৪ বছর বয়সেও সেরিনা কিনা গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালে সেট জিতছে লাভ-এ! আর জকোভিচ বিশ্বের সর্বকালের সেরা প্লেয়ারকে দেড় দশকের অনবদ্য কেরিয়ারের নিকৃষ্টতম প্রথম সেট হারের তেতো বড়ি গিলতে বাধ্য করাচ্ছে!
তা সত্ত্বেও বলব, এর পরেও ফেডেরারের অবসর নেওয়া উচিত নয়। কেন নেবে? এ দিন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন সেমিফাইনালে জকোভিচের কাছে ১-৬, ২-৬, ৬-৩, ৩-৬ হেরেছে বলে? কিন্তু ফেডেরার গ্র্যান্ড স্ল্যামে হারলে তো এখনও একমাত্র জকোভিচের কাছেই হারছে! সেটাও উইম্বলডন, ইউএসওপেন ফাইনাল, অথবা অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে সেমিফাইনালের আগে নয়। টেনিসে এখন বছরভর বিশ্ব জুড়ে বিশাল বিশাল প্রাইজমানি। সেখানে যে লোকটা এখনও নিয়মিত গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল-সেমিফাইনাল খেলছে, এটিপি ট্যুরে ফাইনালে উঠছে (কয়েক সপ্তাহ আগেই ব্রিসবেন ওপেনে), সে কোন দুঃখে খেলা ছাড়বে?
“আপনারা ভাবছেন আমি বুড়ো হয়ে গিয়েছি? আমি কিন্তু এখনও চার-পাঁচ ঘণ্টা দৌড়তে পারি।
আমার কিন্তু জকোভিচকে হারানোর ক্ষমতা আছে।” —রজার ফেডেরার
ফেডেরারের সবচেয়ে যেটা আমার ভাল লাগে— চৌত্রিশে পৌঁছে, টেনিসের প্রায় সব রেকর্ড গড়েও এখনও টপ লেভেলে খেলে চলার অদম্য ইচ্ছে। অফুরন্ত খিদে। চার বাচ্চার বাবা। ঘোরতর সংসারী বলেও তো শুনিটুনি ওর সম্পর্কে সানিয়া-মহেশদের কাছে। তবু এখনও কী আশ্চর্য প্যাশন টেনিসে! ফিটনেসটাও এখনও বিশ্বমানের। জকোভিচের মতো টেনিস-মেশিন আর পাওয়ারের সামনেই যা এ দিন প্রথম দু’টো সেটে ফেডেরারকে অসহায় দেখিয়েছে!
কিন্তু সেটা তো নেটের উল্টো দিকে জকোভিচ থাকায়। সত্যিই, শেষ আট-নয় মাস কী অবিশ্বাস্য টেনিসটাই না খেলছে জকোভিচ! এককথায় নিখুঁত। তবু দেখুন, গ্র্যান্ড স্ল্যাম, মাস্টার্স, ট্যুর ফাইনালস— শেষ সাতটা সত্যিকারের বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালেই ওর প্রতিপক্ষ কিন্তু সেই একজনই। ফেডেরার। যদিও সেই হেড-টু-হেডে জকোভিচ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এগিয়ে ৬-১-এ। জকোভিচের কতটা একচ্ছত্র দাপট এখন বিশ্ব টেনিসে এতেই বোঝা যায়।
ঠিক তেমনই মেয়েদের টেনিসে সেরিনা-সাম্রাজ্য। এ দিন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন সেমিফাইনালে ওর যে প্রতিপক্ষ ছিল সেই রাডওয়ানস্কা শেষ এক ডজন ম্যাচ হারেনি। ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালস চ্যাম্পিয়ন। সেখানে চোটে গত বছরের শেষ চার মাস কোর্টের বাইরে কাটিয়ে নতুন মরসুমে একেবারে সরাসরি গ্র্যান্ড স্ল্যামে নেমেছে সেরিনা। তা সত্ত্বেও এ দিনের রেজাল্ট? সেরিনার দিকে ৬-০, ৬-৪।
তফাতের মধ্যে কেবল— নাদাল না থাকলে যেমন ফেডেরারের আরও গোটা তিনেক ফরাসি ওপেন খেতাব জুড়ে সতেরোর জায়গায় ২০-২১টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে যেত এত দিনে, সেরিনার বেলায় সেটুকু পাঁচিলও নেই। স্টেফি, নাভ্রাতিলোভা, এভার্ট বা তারও আগে মার্গারেট কোর্ট, বিলি জিন কিংয়ের আমলে মেয়েদের সার্কিটে যে রাইভালরি ছিল, সেরিনার সময় সে রকম কিছু কোথায়? শারাপোভাকে সেরিনার মহাপ্রতিদ্বন্দ্বী ভাবা হয়। সে-ও গত বারো বছর সেরিনাকে একটা ম্যাচেও হারাতে পারেনি! আমার মতে আজারেঙ্কার বিগ সার্ভ আর পাওয়ারফুল গ্রাউন্ড স্ট্রোক সেরিনার সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ হতে পারত। কিন্তু দীর্ঘদেহী আজারেঙ্কার সবচেয়ে বড় রোগ— ধারাবাহিকতার অভাব। আজ দুর্দান্ত তো পরের দিনই একেবারে সাদামাটা।
তাতে অবশ্য সেরিনার থেকে একবিন্দুও কৃতিত্ব কেড়ে নেওয়া যাবে না। বিশেষ করে গ্র্যান্ড স্ল্যামে ওর অনবদ্য ধারাবাহিকতার কথা মাথায় রাখলে তো আরওই! সেই ১৯৯৯-এ আঠারো বছর বয়স থেকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতা শুরু করে আজ চৌত্রিশেও জিতে চলেছে। শনিবার ফাইনালে নিজেকে নিজে না হারালে সেরিনা টেনিসের ওপেন যুগে স্টেফি গ্রাফের সবচেয়ে বেশি ২২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ড ছোঁবেই।
আর যদি না জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে ওঠা আ্যাঞ্জেলিক কের্বারের উপর স্বয়ং স্টেফি ভর করে সে দিনের ম্যাচে! একে কের্বার-ও জার্মান মেয়ে। তার উপর আবার ওর আইডল স্টেফি গ্রাফ-ই!