বিমর্ষ: এ বারের মতো শেষ হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্র ওপেন অভিযান। শেষ আটে হারের পরে হতাশ ফেডেরার।
শেষ বার রজার ফেডেরার যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জেতেন ২০০৮ সালে। এক দশক ধরে তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন অবসরের আগে অন্তত আর একবার ফ্লাশিং মেডোজে ট্রফি ধরতে। কিন্তু ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের এ বারের চেষ্টাও মুখ থুবড়ে পড়ল কোয়ার্টার ফাইনালে। আশ্চর্যের ব্যাপার, ঘাতকের নাম ২৮ বছরের বুলগেরিয়ান গ্রিগর দিমিত্রভ। টেনিসবিশ্ব যাঁকে ডাকেন ‘বেবি ফেডেরার’ বলে। এ’বছরের এটিপি র্যাঙ্কিংয়ে যিনি এই মুহূর্তে রয়েছেন ৭৮ নম্বরে। এ হেন প্রতিপক্ষের কাছেই বুধবার ফেডেরার হার মানলেন ৬-৪, ৪-৬, ৬-৩, ৪-৬, ২-৬ সেটে।
এই ম্যাচে স্ববিরোধী অনেক কিছুই করতে দেখা গেল সুইস মহাতারকাকে। চতুর্থ সেটের পরে তিনি একবার মেডিক্যাল টাইমআউট নিলেন। তার চেয়েও বড় কথা, ৬১টি ভুল শট মারলেন, তার ৩৩টি ফোরহ্যান্ড শট! বুধবারের ম্যাচের আগে শেষ সাত বারই ফেডেরারের কাছে পরাজিত দিমিত্রভ অঘটন ঘটানোর সৌজন্যে শুক্রবার আলেকজান্ডার মেদভেদেভের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে খেলবেন। ১৯৯১ সালে বিশ্বের ১৭৪ নম্বর খেলোয়াড় জিমি কোনর্স নিউ ইয়র্কে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিলেন। তার পরে এই প্রথম এত বেশি র্যাঙ্কিংয়ের কেউ শেষ আটে লড়লেন। দিমিত্রভ তো সেমিফাইনালেও উঠে গেলেন। ২০০৮-এ বিশ্বের ৯৪ নম্বর খেলোয়াড় রাইনার শুটলার উইম্বলডন সেমিফাইনালে খেলেছিলেন। তার মানে, সেই নজিরের খুব কাছাকাছিই থাকছেন দিমিত্রভ।
ফ্লাশিং মেডোজ থেকে এ বারের মতো বিদায় নিয়ে ফেডেরার ঘুরিয়ে যা বললেন, তাতে পরিষ্কার ৩৮ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কের গরমে পাঁচ সেট খেলার ধকল নিতে পারেনি তাঁর শরীর। রজারের হতাশ প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রথম থেকেই মনে হয়েছিল আমি শেষ পর্যন্ত জিততে পারব। নিজের সেরাটাও দিয়েছি। তবে আমার শরীরের জন্য সব কিছু ঠিকঠাক ছিল না।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘আসলে দিনটা আমার নয়, ছিল গ্রিগরের। ও পেরেছে আমাকে ছিটকে দিতে। আর আমি আমার যেটুকু ক্ষমতা, তা নিয়ে লড়াই করেছি।’’
কিন্তু ঠিক কোন জায়গাটায় ধাক্কা খেলেন ফেডেরার? কিংবদন্তি টেনিস তারকা নিজেই তার উত্তর খুঁজেছেন। বলেছেন, ‘‘ম্যাচে বেশ কয়েক জায়গায় আমিই এগিয়েছিলাম। কিন্তু চতুর্থ সেটে শুরুটা মোটেও ভাল শুরু করতে পারিনি। একই কথা বলতে হয় পঞ্চম সেট প্রসঙ্গেও। আসলে এগিয়ে থেকেও ম্যাচ বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ, সুযোগ নষ্ট করা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। তার উপরে এই ম্যাচটার আগে দু’দিন বিশ্রাম পেয়েছিলাম। সেটা কাজে লাগাতে পারলাম না ভেবে খারাপ লাগছে। কিন্তু হারটা মেনে নিতেই হবে। এটাও খেলার অঙ্গ।’’
উইম্বলডন ফাইনালে পারলেন না, এখানেও ব্যর্থ। জীবনে আর কখনও কি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবেন? এ হেন প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হন ফেডেরার। বলেন, ‘‘এই প্রশ্নের কী উত্তর দিই বলুন তো। আমার হাতে তো ‘ক্রিস্টাল বল’ নেই যে, ভবিষ্যতে কী হবে বলে দেব। কবে, কখন কী হবে কেউ বলতে পারে না। তবে আশা করতে তো অসুবিধে নেই। আমার আত্মবিশ্বাস বলছে, অবশ্যই আবার পারব। আমার তো নিজের মধ্যে এখনও ইতিবাচক চিন্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে অসুবিধে হয় না। আজ পারিনি ঠিক আছে। কিন্তু নিশ্চয়ই ফিরে আসব। আবার ট্রফিও জিততে পারি।’’
ফেডেরারকে হারাতে পেরে কেমন লাগছে জানতে চাওয়া হলে দিমিত্রভ বলেছেন, ‘‘বিরাট কিছু আনন্দ পেয়েছি এমন নয়। ভাল লাগছে। এইটুকুই।’’ বুলগেরিয়ান তারকার ম্যাচের বিশ্লেষণ, ‘‘সারাক্ষণ নিজেকে একটা কথা বলেছি। ম্যাচ থেকে মনটা যেন সরে না যায়। আসলে আজ দারুণ ফিটও ছিলাম। মনে হয়েছিল, পাঁচ সেট পর্যন্ত লড়ে যেতে পারব। আর রজারের বিরুদ্ধে এমন কয়েকটা শট মেরেছি যা মারা সত্যিই কঠিন।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘একটা সময় ও (ফেডেরার) খেলাটা মন্থর করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। যে পরিস্থিতি আমাকে মাথা ঠান্ডা রেখে সামলাতে হয়েছে। এটাও ঘটনা যে, পাঁচ সেটের লড়াইয়ে যে কোনও কিছু হতে পারে। আজ যেমন আমি জিতলাম।’’