সাংবাদিকদের সামনে রজার ফেডেরার।—ছবি রয়টার্স।
রবিবারের হারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না রজার ফেডেরার। তাঁর হাতের মুঠোয় দু-দুটো চ্যাম্পিয়নশিপ পয়েন্ট ছিল বলেই নয় বা জোকোভিচের (২০৪) চেয়ে বেশি পয়েন্ট জিতেছেন তিনি (২১৮) বলেও নয়। তাঁর প্রিয় উইম্বলডনে হারতে হল বা খেলোয়াড় জীবনে প্রথম বার টানা রাফায়েল নাদাল এবং জোকোভিচকে হারানোর সুযোগ ছিল, সে জন্যও নয়। মানতে পারছেন না, এ রকম সুযোগ বার বার আসবে না বলে। বিশেষ করে এমন একটা বয়সে। পরের মাসেই তো ফেডেরারের ৩৮তম জন্মদিন।
পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন লড়াইয়ের পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে ফেডেরার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হাসি-মস্করায় হারের হতাশা ঢাকার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাঁর মলিন হাসি বলে দিচ্ছিল অনেক কিছুই। ‘‘জানি না এর চেয়ে স্ট্রেট সেটে হারলে কিছুটা ভাল লাগত কি না,’’ বলেই হেসে ফেলেন ফেডেরার। একটু থেমে বলে ওঠেন, ‘‘আসলে এক দিক থেকে এগুলোর কোনও মানে নেই। হয়তো আরও বেশি হতাশা, দুঃখ বা রাগ হতে পারে। আমার শুধু মনে হচ্ছে এমন একটা সুযোগ হাতছাড়া করে ফেললাম, বিশ্বাসই করতে পারছি না ব্যাপারটা।’’ তাঁকে যখন বলা হল, জোকোভিচের চেয়ে মোট পয়েন্ট তিনি বেশি জিতেছেন ফেডেরারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তাতে কিছু যায় আসে না। আমি জানি কী রকম খেলেছি, জয়ের কতটা কাছাকাছি ছিলাম।’’
তিনি বিশ্বের অগুনতি মানুষের প্রেরণা, কিন্তু তিনি নিজে প্রেরণা পান কোথা থেকে? ফেডেরার বলেন, ‘‘আমি বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রেরণা পাওয়ার চেষ্টা করি। সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার রেকর্ড করেছি বলে আরও এগিয়ে থাকতে চাই এমন নয়। যদি আর কেউ রেকর্ডটা ভাঙে দারুণ ব্যাপার হবে তার জন্য। সব কিছু তো আর আগলে রাখা যায় না।’’ সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘‘আমি কিন্তু এ জন্য টেনিস খেলোয়াড় হইনি। চেষ্টা করেছিলাম উইম্বলডন জেতার। এখানে আরও ভাল রেকর্ড করার। সেন্টার কোর্টে এ রকম অসাধারণ দর্শকদের সামনে নোভাক বা অন্য কারও বিরুদ্ধে খেলার। এটাই আমার প্রেরণা।’’
খুব একটা উচ্ছ্বাসে মাততে দেখা যায়নি রবিবারের বিজয়ী জোকোভিচকেও। যিনি সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার দৌড়ে রাফায়েল নাদাল (১৮) এবং ফেডেরারের (২০) সঙ্গে দূরত্বটা আরও কমিয়ে ফেললেন ১৬ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে। সঙ্গে আরও এক বার তাঁর উইম্বলডন জেতার উৎসব অর্থাৎ সেন্টার কোর্টের ঘাস খেতেও দেখা গেল। যে সাফল্যের জন্য তাঁকে শুধু ফেডেরারের মতো প্রতিপক্ষকেই নয়, সঙ্গে সেন্টার কোর্টে বিপক্ষের জন্য তুমুল জনসমর্থনও সামলাতে হয়েছে। যা নিয়ে সার্বিয়ান তারকা বলেন, ‘‘দর্শকদের উপেক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম। যেটা সোজা নয়। যখন সেন্টার কোর্টে দর্শকরা রজার, রজার বলে চিৎকার করছিল, আমি নোভাক, নোভাক শুনছিলাম। রজার আর নোভাক শুনতে প্রায় একই রকম।’’ সঙ্গে আরও যোগ করেন, ‘‘বোকা বোকা মনে হতে পারে ব্যাপারটা। কিন্তু নিজেকে তখন এ ভাবেই উৎসাহ দিচ্ছিলাম।’’
উইম্বলডনের আর এক চ্যাম্পিয়ন অর্থাৎ মেয়েদের সিঙ্গলসে সেরা সিমোনা হালেপ আবার পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছেন। সোমবারই চার নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। আগামী কয়েক মাসে এক নম্বরেও উঠে আসতে পারাটা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। কিন্তু হালেপ বলছেন, ‘‘আমার লক্ষ্য অলিম্পিক্সে পদক জয়। দেশের হয়ে খেলতে সব সময়ই ভালবাসি। টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে তা হলে সব স্বপ্ন পূরণ হবে।’’