সার্ভ অ্যান্ড ভলি

এখনও বলব, ফেডেরার উইম্বলডন জিততে পারেন

তাদের সম্মান দেখিয়েই বলছি, বিশ্বের সর্বকালের সেরা টেনিস কিংবদন্তিকে নিয়ে তিন বছর আগেও একই কথা উঠেছিল। তার পরেও ফেডেরার সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন। ৩৭-এর ফেডেরার আবার সেটা করার ক্ষমতা রাখেন। ২০১৬-এ অস্ত্রোপচারের পরে ফেডেরার কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবেন কি না, প্রবল সংশয় ছিল ভক্তদের।

Advertisement

জয়দীপ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২০
Share:

—ছবি রয়টার্স।

অস্ট্রেলীয় ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে রজার ফেডেরারের হাঁটুর বয়সি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হারের পরে দেখছি অনেকেই বলছেন, আর কত! কুড়িটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম হয়ে গিয়েছে, টেনিস বিশ্বে এমন কোনও ট্রফি নেই যা ফেডেরার জেতেননি, এ বার ওঁর অবসর নিয়ে নেওয়া উচিত।

Advertisement

তাদের সম্মান দেখিয়েই বলছি, বিশ্বের সর্বকালের সেরা টেনিস কিংবদন্তিকে নিয়ে তিন বছর আগেও একই কথা উঠেছিল। তার পরেও ফেডেরার সবাইকে ভুল প্রমাণ করেছিলেন। ৩৭-এর ফেডেরার আবার সেটা করার ক্ষমতা রাখেন। ২০১৬-এ অস্ত্রোপচারের পরে ফেডেরার কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবেন কি না, প্রবল সংশয় ছিল ভক্তদের। চোটের জন্য বহু প্রতিযোগিতায় নামেননি। র‌্যাঙ্কিংয়ে নেমে গিয়েছিলেন ১৬ নম্বরে। অনেকে বলেই দিয়েছিলেন ফেডেরার শেষ। তার পরেও নিজের ট্রফি ক্যাবিনেটে আরও তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম যোগ করেছেন তিনি। ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন আমাকেও। সেটা যে আবার হবে না, কে বলতে পারে!

ভুললে চলবে না, ফেডেরার অস্ট্রেলীয় ওপেনে গত দু’বার টানা ট্রফি জিতেছেন। ২০১৬-র সেমিফাইনালের পরে এই প্রথম কোনও ম্যাচ হারলেন মেলবোর্ন পার্কে। তা ছাড়া গ্রিসের যে তরুণ ফেডেরারকে হারালেন, সেই স্তেফানোস চিচিপাসকে কিন্তু গত মাসেই হপম্যান কাপে ফেডেরার হারিয়ে দিয়েছিলেন। চিচিপাসের বয়স মোটে ২০ বছর হলেও, যথেষ্ট কঠিন প্রতিপক্ষ। দুরন্ত ছন্দে আছেন। দু’বছর আগেও র‌্যাঙ্কিং ছিল ২১০। এখন বিশ্বের ১৫ নম্বর। মেলবোর্নে খেলছেন ১৪ নম্বর বাছাই হিসেবে। ছ’ফুট চার ইঞ্চি লম্বা। প্রচণ্ড আগ্রাসী টেনিস খেলতে পারেন। ইন্টারনেটে দেখলাম, অনেকে তো এখনই বলতে শুরু করেছে এই ছেলেটা এক নম্বরে উঠে আসার যোগ্য। ভবিষ্যতই বলবে কখনও এক নম্বরে উঠে আসতে বা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবেন কি না। তবে ফেডেরার যে এই মরসুমে আরও একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেন, সেটা কিন্তু আমি এখনই বলে দিতে পারি। এবং সেটা হয়তো উইম্বলডনেই।

Advertisement

এ বার একটু রবিবারের ম্যাচটার প্রসঙ্গে আসি। চার সেটের লড়াইয়ে ফেডেরার ৭-৬ (১৩-১১), ৬-৭ (৩-৭), ৫-৭, ৬-৭(৫-৭)-এ হারলেও ম্যাচটা কিন্ত যথেষ্ট হাড্ডাহাড্ডি হয়েছে। আমার মতে, ফেডেরারের দ্বিতীয় সেটে চারটে সেট পয়েন্ট পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ফেডেরারকে হারাতে চিচিপাসের স্ট্র্যাটেজি ছিল ভীষণ আগ্রাসী খেলতে হবে, গতি বাড়াতে হবে। তাই প্রথম থেকেই ফেডেরারকে গতির চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি। যার সামনে ১২টা ব্রেক পয়েন্ট পেয়েও কাজে লাগাতে না পারাটাই কাল হল ফেডেরারের। এখন কিন্তু নামী খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফিটনেসের দিক থেকে এগিয়ে থাকা তরুণ প্রজন্মের ব্যবধান দ্রুত কমে আসছে। তাই চোট-আঘাত সামলে শুধু দক্ষতা দিয়ে টানা দু’সপ্তাহ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মতো কঠিন প্রতিযোগিতায় টিকে থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়া সোজা নয়।

অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, তা হলে কেন বলছি ফেডেরার এই বয়সেও উইম্বলডন জিততে পারেন? তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই গ্রহে ফেডেরারের চেয়ে বেশি বার আর কারও হাতে উইম্বলডনের পুরুষদের সিঙ্গলসে সোনালি ট্রফিটা দেখা যায়নি। আট বারের চ্যাম্পিয়নের কাছে উইম্বলডন ঘর-বাড়ির মতো চেনা। স্ট্রবেরি, ক্রিম, সবুজ ঘাস, সাদা টেনিস পোশাকের মতো গত দু’দশকে ফেডেরারও উইম্বলডনের অঙ্গ হয়ে উঠেছেন। গত বছর ফেডেরারও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন এখানে অবসর নিতে পারাটা ওর অন্যতম ইচ্ছে। এ বার ট্রফিটা জিতে ঘোষণাটা করার চেয়ে ভাল মুহূর্ত আর কী হতে পারে!

চ্যাম্পিয়নদের সবচেয়ে বড় গুণ হল, বড় মঞ্চে জ্বলে ওঠা। তাই টেনিস দুনিয়ার সমস্ত ট্রফি জিতে নিলেও ফেডেরারের মতো কিংবদন্তিদের জয়ের খিদে কখনও মেটে না। একটা হারের পরেই আর একটা সাফল্যের জেদ প্রবল হয়ে ওঠে। ফেডেরারকে দেখেও বোঝা যাচ্ছে তিনি মরিয়া। না হলে রবিবার হেরেই তিন বছর পরে ফরাসি ওপেনে প্রত্যাবর্তনের কথা ঘোষণা করতেন না হয়তো। কুড়িটা গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে যে রোলঁ গারোসে ওঁর ট্রফির সংখ্যা মাত্র একটি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement