ম্যাচের পর কান্না চাপতে পারলেন না ফেডেরার, নাদাল। ছবি টুইটার
লন্ডনে তখন মধ্যরাত পেরিয়েছে। সবে শেষ হয়েছে লেভার কাপের প্রথম দিনের ডাবলস ম্যাচ। ‘ও২ অ্যারিনা’-র গ্যালারি ভর্তি সমর্থক যা দেখতে চেয়েছিলেন, তা হয়নি। জীবনের শেষ ম্যাচে জিতে মাঠ ছাড়তে পারেননি রজার ফেডেরার। তবে অদ্ভুত এক দৃশ্য দেখা গেল। ম্যাচ শেষের পরেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন রজার ফেডেরার। চোখের জল সামলাতে পারলেন না রাফায়েল নাদালও। টেনিসের দুই কিংবদন্তি অঝোরে কাঁদলেন।
ম্যাচ শেষে দুই তারকাই একে অপরকে নিয়ে অনেক কথা বললেন। ফেডেরার এবং নাদাল বার বার কথা বলতে গিয়ে ভাষা হারালেন। তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
রজার ফেডেরার: কী করে আমরা একে অপরের এত কাছাকাছি চলে এলাম জানি না। গত ১০ বছরে আমাদের যোগাযোগ অনেকটাই বেড়েছে। হয়তো সন্তান হওয়ার পরে আমি আরও বদলে গিয়েছি বা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে এখন রাফার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক, তা নিয়ে খুব খুশি। যখন খুশি রাফাকে ফোন করে যে কোনও বিষয়ে কথা বলতে পারি। আশা করি ও-ও এ ভাবেই ভাবে। হয়তো নিয়মিত কথা হয় না। কিন্তু হয়।
রাফার পরিবার আমার খেলা দেখতে এসেছে, এটা ভাবতেই পারছি না। রাফা এখানে খেলতে এসেছে, অথচ সব নজর আমার দিকে। ব্যক্তি হিসাবে আমার প্রতি ওদের এই ভালবাসা বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমার মনের মধ্যে এটা বিশেষ স্থান পেয়ে গিয়েছে। আশা করি আমার বাবা-মা, সন্তান, স্ত্রী-কে দেখলেও ওর একই অনুভূতি হয়। খুব ভাল লাগে এ সব দেখে।
(হাসতে হাসতে) আশা করি ভবিষ্যতে ওরও অনেক সন্তান হবে। আমি কিন্তু ওকে এ ব্যাপারে উপদেশ দিতে পারি। কারণ ব্যাপারটা সহজ নয়। তবে অভিভাবক হিসেবে আমরা সব সময় নিজেদের সেরাটা দিতে চাই।
একে অপরের সঙ্গে থাকলে আমরা সময়টা খুব উপভোগ করি। পিছন ফিরে তাকালে অনেক কিছু মনে পড়ে। তবে একসঙ্গে সময় কাটানোর থেকে বড় আর কিছুই নেই। দু’জনে লক্ষ লক্ষ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। ওর সঙ্গে কোনও বিকেলে যখন আড্ডা মারি, তখন মনে হয় সময়টা খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল।
রাফায়েল নাদাল: ওকে নিয়ে আমার যাবতীয় ভাবনার কথা আগেই বলে দিয়েছি। একটা অসাধারণ যাত্রা ছিল। প্রায় কাছাকাছি সময়েই আমরা খেলতে শুরু করি। আমি একটু ভাল খেলার পর রজার সব সময় আমার সামনে এসে দাঁড়াত। আমি সব সময় ওকে হারাতে চাইতাম। হয়তো একটা সময় আমরাই একে অপরের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিলাম। তবে বরাবরই সম্পর্ক ভাল ছিল। আমরা একে অপরকে, পরিবারকে এবং দলকে সমীহ করি। কখনও আমাদের মধ্যে কোনও সমস্যা হয়নি।
তবে ব্যক্তিগত সম্পর্কই সবার আগে। যত আমাদের বয়স হবে, তত এই সম্পর্ক আরও ভাল হবে। দিনের শেষে এটা বুঝতে পেরেছি যে, আমাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। জীবনের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও একই রকম। কোর্টে আমাদের স্টাইল সম্পূর্ণ বিপরীত। হয়তো তাই জন্যেই আমাদের শত্রুতা এত বড় এবং এত উত্তেজক হয়েছে।
পারিবারিক জীবন বা ব্যক্তিগত জীবনে আমাদের খুব একটা অমিল নেই, তাই না? তাই জন্যেই আমরা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পারি, একে অপরের সঙ্গে প্রায়ই কথা বলতে পারি এবং খোলা মনে আড্ডা দিতে পারি। রজারের মতো কোনও মানুষ সামনে থাকলে যে কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারি। যে মুহূর্তগুলো একে অপরের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি এবং যে লক্ষ্যের দিকে একই সঙ্গে দু’জনে এগিয়ে গিয়েছি, তা কখনও ভোলা যাবে না।
ওর জীবন, ওর কেরিয়ারের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত। কোর্টে আমাদের মধ্যে শত্রুতা থাকা সত্ত্বেও ওর জীবনের শেষ পর্বে বন্ধুর মতো থাকতে পেরে খুব খুশি।