ইউজেনসন লিংডো।
মিজোরামের ছেলে ইউজেনসন লিংডোর খেলা দেখে মুগ্ধ রবি কিন।
এই মূহূর্তে জাতীয় দলের তথা দেশের সেরা মিডিও সম্পর্কে আয়ারল্যান্ডের ফুটবল কিংবদন্তি রবির মন্তব্য, ‘‘গত তিন সপ্তাহ এটিকে-র প্র্যাক্টিসে যে ভারতীয় ফুটবলারদের দেখেছি, তাদের মধ্যে ইউজেনকে সবচেয়ে ভাল লেগেছে। ইউরোপে খেলার যোগ্য। ওর খেলাটা অনেকটা ইউরোপিয়ান স্টাইলের। আর একজনকে এর সঙ্গে রাখব, জুনিয়র ফুটবলার হিতেশ শর্মা। ওর খেলাটাও বেশ ভাল লেগেছে।’’
সোমবার দুপুরে এ বারের ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এটিকে-র নতুন জার্সি উদ্বোধন করতে এসেছিলেন বিশ্বকাপার রবি। সেখানে যখন সাংবাদিকদের সামনে লিংডো ও হিতেশের প্রশংসা করছেন তিনি, তখন ওঁরা দু’জনেই মুম্বইয়ে জাতীয় শিবিরে। মায়ানমারের বিরুদ্ধে এএফসি কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচে জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন দু’জনেই। দুবাইয়ে এটিকে-র সাড়ে তিন সপ্তাহের অনুশীলন সেরে দু’জনেই চলে গিয়েছেন শিবিরে।
আরও পড়ুন: রিয়ালের জয়, তবু অস্বস্তি রোনাল্ডোর
টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা হিতেশ এখনও পরিচিত মুখ নন ভারতীয় ফুটবলে। চণ্ডীগড়ের হিতেশ টেডি শেরিংহ্যামের টিমে মূলত ঢুকেছেন প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার হিসাবে। কিন্তু ইউজেন এই মুহূর্তে দেশের সফল ফুটবলার। স্টিভনের ভারতীয় দলেও অপরিহার্য। তাঁকে নিয়ে রবি কিন উচ্ছ্বসিত হয়েছেন শুনে ফোনে কিছু বলতে চাইলেন না ইউজেন। কারণ কথা বলার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ঘনিষ্ঠ মহলে ইউজেনের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ভাল লাগছে শুনে। এটা আমার কাছে বড় পুরস্কার। দুবাইতে এটিকে শিবিরে থাকার সময় রবি কিনের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’’
টেডি শেরিংহ্যামের টিমের প্রধান মুখ এ বারের আয়ারল্যান্ডের রবি কিন-ই। তাঁকেই এ দিন টিমের ১০ নম্বর জার্সি তুলে দেওয়া হল। পাশাপাশি, এ বারের অধিনায়ক হিসেবে প্রত্যাশা মতোই তাঁর নাম ঘোষণা করেন এটিকে প্রধান সঞ্জীব গোয়েন্কা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের টটেনহ্যাম, লিভারপুলের হয়ে প্রচুর গোল করে আসা রবির কাছে জানতে চাওয়া হয়, ঝলমলে মার্কিন মুলুক ছেড়ে কেন এটিকে-তে যোগ দিলেন? রবি বলে দেন, ‘‘মূলত বন্ধু ও কোচ টেডি শেরিংহ্যামের একটা ফোন কল পেয়েই এই চ্যালেঞ্জটা নিয়ে ফেলি। আইএসএলে খেলে যাওয়া দেল পিয়েরোর কাছ থেকেও শুনেছি এই লিগের কথা। তবে আইএসএলের কোনও ম্যাচ আমি দেখিনি।’’ কিন্তু রবিকে তো ফুটবল বিশ্ব চেনে গোল-স্কোরার হিসাবে। তাঁর সেই বিখ্যাত ‘সমারসল্ট’ বা দু’হাত দুলিয়ে উৎসবের পরিচিত ভঙ্গি কি এ বার দেখা যাবে এটিকে-র জার্সিতে? সাঁইত্রিশ বছরের স্ট্রাইকারের জবাব, ‘‘আমি ফুটবলার জীবনে প্রচুর গোল করেছি। সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে ভারতে আসিনি। এসেছি টিমকে সাহায্য করতে, চ্যাম্পিয়ন করতে। তবে গোল তো করতেই চাই। আর গোল করলে তবেই তো সেলিব্রেশন। মরসুমের শেষে দেখা যাবে ক’টা গোল করলাম।’’ বলেই হেসে ফেলেন গত পাঁচ বছর লা গ্যালাক্সির জার্সিতে ১২৫ ম্যাচে ৮৩ গোল করা মেজর লিগ সকারের অন্যতম সেরা ফুটবলার।
বয়স হলেও দুবাইতে চার ম্যাচে চার গোল করে এসেছেন গত তিন সপ্তাহে। রবির পায়ের টাচ বা গোল দেখে মুগ্ধ সতীর্থরা। চিফ কোচ ও বন্ধু টেডি শেরিংহ্যামের চেয়েও তাঁকে ফিট লাগছিল এ দিন। ভারতের আবহাওয়া কি তাঁকে সমস্যায় ফেলবে? পেশাদার রবির মন্তব্য, ‘‘নিউ ইয়র্ক বা নদার্ন আয়ারল্যান্ডে গরমে খেলে এসেছি। ঠান্ডাতেও। কোনও সমস্যা হবে না।’’
ইপিএলে তাঁর এক সময়ের দল টটেনহ্যাম হটস্পার তিন নম্বরে থাকলেও খেতাব জেতার আশা কম বলেই মনে হচ্ছে রবি কিনের। কোচ টেডির সঙ্গে যে দলে খেলেছেন তাদের ভবিষ্যৎ কী? রবির জবাব, ‘‘ম্যাঞ্চেস্টার সিটিই এ বার ই পি এল চ্যাম্পিয়ন হবে মনে হচ্ছে। তবে টটেনহ্যাম যদি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে এখান থেকে, আমার খুব ভাল লাগবে। টটেনহ্যাম ভাল খেলছে, ওদেরও একটা ট্রফি দরকার।’’
এটিকে নিয়ে আশায় শেরিংহ্যাম: তিন বছর ধরে স্প্যানিশ ফুটবলের ছায়ায় বেড়ে ওঠা এটিকে-তে এ বার দেখা যাবে ইংল্যান্ড ফুটবলের আবহাওয়া। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন চিফ কোচ টেডি শেরিংহ্যাম।
ইংল্যান্ডের হয়ে জোড়া বিশ্বকাপে খেলা টেডি সোমবার বলে দিলেন, ‘‘এত দিন এটিকে-তে স্প্যানিশ ফুটবলার বেশি ছিল। সেখানে ওই দেশের ফুটবলের প্রভাব থাকবেই। এ বার টিমে ব্রিটিশ ফুটবলার বেশি। খেলার উপর তো সেই প্রভাব পড়বেই।’’ গত তিন বছরের মধ্যে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এটিকে। এটা কি তার উপর চাপ? ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১৪৭টি গোলের সঙ্গে আরও অনেক রেকর্ড করা টেডির জবাব, ‘‘পেশাদারদের সব সময়ই চাপ নিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু সেটা জীবন মরণ চাপ নয়। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চাপ তো আছেই। আমরা ধাপে ধাপে এগোব।’’
আইএসএল এবং আই লিগ পাশাপাশি চলবে। তাতে এটিকের জন-সমর্থনে কোনও ভাটা পড়বে বলে মনে করেন না টিমের প্রধান মালিক। মাঠে লোক আনতে অবশ্য একশো টাকার দশ হাজার টিকিট ছাড়া হচ্ছে। নতুন এটিকে-কে এ দিন পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘আমার টিম কলকাতা’ নামে।
শেরিংহ্যামও ক্লাবের নামের বদলের মতোই এ দিন বলে দিলেন, ‘‘একেবারে নতুন টিম। নতুন ভাবে শুরু করছে সবাই। সবাই তাই করছে। দু’তিনটি ম্যাচ না গেলে বলা যাবে না কার শক্তি কতটা।’’ আইএসএলের অন্যতম হাইপ্রোফাইল কোচ অবশ্য বললেন, ‘‘উদ্বোধন হঠাৎ কলকাতা থেকে কোচিতে সরে যাওয়ায় টিমের পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে।’’ পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইংল্যান্ডের যে দলটা অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ জিতেছে, তাদের খেলা আমাকে মুগ্ধ করেছে।’’