উল্লাস: রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরির পরে উচ্ছ্বাস রবীন্দ্র জাডেজার। পিটিআই
দিনের শেষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ক্রিজে অপরাজিত থাকলেও বিতর্কটা তাড়া করে বেড়াচ্ছে রবীন্দ্র জাডেজাকে। রান আউট বিতর্ক। যেখানে সহজ রান আউট কঠিন করে নিয়ে একটুর জন্য সুযোগ নষ্ট করছিলেন জাডেজা।
ঘটনাটা ঘটে শুক্রবার চলতি টেস্টের দ্বিতীয় দিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে ১২ নম্বর ওভারে। আর অশ্বিনের বল মিড অনের দিকে ঠেলেই সঙ্গী সুনীল অ্যামব্রিসকে রান নিতে ডাকেন শিমরন হেটমায়ার। কিন্তু নিজে দৌড়ননি। অ্যামব্রিস অবশ্য উল্টো দিকে চলে যান। দুই ব্যাটসম্যান যখন এক প্রান্তে, তখন অশ্বিনের দিকে না ছুড়ে বলটা নিয়ে নিজেই সে দিকে হেঁটে যান জাডেজা।
জাডেজা হাঁটছেন দেখে হঠাৎ হেটমায়ার দৌড়তে শুরু করেন। যখন তিনি স্টাম্প থেকে প্রায় তিন-চার মিটার দূরে, তখন জাডেজা কিছুটা দূর থেকে বল ছুড়ে স্টাম্পে লাগান। অধিনায়ক বিরাট কোহালি ও অশ্বিন খেপে যান জাডেজার এই কাণ্ডে। বলটা স্টাম্পে না লাগাতে পারলে এ দিন ঘরের মাঠে জীবনের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির গর্ব ধুলোয় মিশে যেত।
খেলার পরে সাংবাদিকরা সেই প্রসঙ্গ তুলতে জাডেজা নিজেই হেসে ফেলেন। বলেন, ‘‘দুই ব্যাটসম্যানই এক দিকে ছিল বলে আমি বেশি তাড়াহুড়ো করিনি। ভাবিনি যে, এত গরমে এ ভাবে ও দৌড়ে ক্রিজে পৌঁছনোর চেষ্টা করবে। তাই কাছে গিয়ে স্টাম্পে বল ছুড়ে রান আউট করি। ও দারুণ চেষ্টা করেছে।’’
সেই বিতর্ক ভুলে অবশ্য নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি বেশি উপভোগ করতে চান ভারতীয় অলরাউন্ডার। যা তিনি তাঁর ৩৮তম টেস্টে পেলেন। বলেন, ‘‘প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি বলেই এটা বিশেষ ইনিংস। এর আগে ৮০, ৯০-র ঘরে ঢুকেও আউট হয়েছি। সে জন্যই এই ইনিংসটা মনে থাকবে।’’ গত মাসেই ওভালে ৮৬ রান করে অপরাজিত ছিলেন তিনি। দু’বছর আগে মোহালিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৯০ রান করেন। তাই এ বার ঘরের মাঠে সেঞ্চুরির সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি বলে জানান জাডেজা। বলেন, ‘‘ব্যাটিংয়ের সময় নিজেকে বারবার বলছিলাম, খারাপ শট নিতে গিয়ে আউট হওয়া চলবে না। শান্ত থাকব ভেবেই মাঠে নেমেছিলাম। একদম তাড়াহুড়ো করিনি। শেষ বল পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা ছিল।’’
সেঞ্চুরিটা উৎসর্গ করলেন তাঁর প্রয়াত মাকে। যাঁকে তিনি ১৭ বছর বয়সে হারান। জাডেজা এ দিন বলেন, ‘‘এই সেঞ্চুরি আমি মাকে উৎসর্গ করছি। উনি চাইতেন আমি দেশের হয়ে খেলি। উনি এখন নেই। এর চেয়ে বেশি আর তাঁকে আমি এখন আর কীই বা দিতে পারি?’’
ন’বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরে প্রথম সেঞ্চুরি। এই প্রসঙ্গে জাডেজা বলেন, ‘‘এত দিন ধরে খেলছি যখন, নিশ্চয়ই ভালই খেলেছি। গত বছর ঘরের মাঠে ১৩টা টেস্টে আমার পারফরম্যান্স দেখুন। আসলে দলের ভারসাম্যটাই আসল কথা। বিপক্ষে বেশি বাঁহাতি থাকলে আমাকে দরকার হয় না। আর ডানহাতি বেশি থাকলে আমার ডাক পড়ে। এটা দলের সিদ্ধান্ত। তবে সুযোগ পেলে আমি তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করি। যেমন করেছি ইংল্যান্ডে ও এশিয়া কাপে।’’
ঘরের ছেলের এই সাফল্য দেখতে অবশ্য রাজকোটের গ্যালারিতে তেমন লোকই ছিল না। যা দেখে কিছুটা হলেও হতাশ হয়েছেন জাডেজা। বলেন, ‘‘রাজকোটে এখন ক্রিকেট যথেষ্ট জনপ্রিয়। এখানেও ক্রিকেটের জন্য প্রচুর পাগল মানুষ আছেন। তাঁরা আইপিএলে, ওয়ান ডে ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি করে দেন। কারণটা ঠিক জানি না। তবে বোধহয় প্রচন্ড গরমের জন্য লোকে টেস্ট দেখতে আসছে না।’’