ফাইল চিত্র।
ভারত বনাম ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্ট নিয়ে এখন একটা তর্কই চলছে। খেলাটা তিন দিনে শেষ হবে, না চার দিনে গড়াবে!
প্রথম দিনেই পিচ খারাপ ছিল। দ্বিতীয় দিনে চিদম্বরম স্টেডিয়ামের বাইশ গজের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এই রকম পিচে টিকে থাকার মতো টেকনিক ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র জো রুট ছাড়া আর কারও নেই। ভারতের প্রথম ইনিংসের ৩২৯ রানের জবাবে ইংল্যান্ড শেষ ১৩৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৫৪-১। অর্থাৎ এগিয়ে ২৪৯ রানে। প্রথম ইনিংসেই ওরা আর অশ্বিনকে সামলাতে পারল না। দ্বিতীয় ইনিংসে কী হবে!
আমার কাছে অশ্বিনই এখন বিশ্বের সেরা স্পিনার। অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নেথান লায়নকে ও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্য পেয়েছে। স্টিভ স্মিথের মতো ব্যাটসম্যানকে বার বার আউট করেছে। আর ভারতের মাটিতে ওকে খেলা তো প্রায় অসম্ভব। রবিবার ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে পাঁচ উইকেট তুলে নিল ভারতীয় অফস্পিনার। ৭৬ টেস্টে উইকেট সংখ্যা ৩৯১। ভারতের মাটিতে সব চেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট নেওয়ার তালিকায় হরভজন সিংহকে টপকে উঠে এল দু’নম্বরে।
আমি নিজে একটু-আধটু স্পিনটা খেলতে পারতাম বলে বুঝতে পারি, অশ্বিন কেন এত ভয়ঙ্কর। ওর তিনটে গুণের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। এক, বৈচিত্র। অফস্পিনের পাশাপাশি হাতে ফ্লোটার আছে, লেগ কাটার আছে, ক্যারম বল আছে। ব্যাটসম্যানরা ওর বল বুঝতে সমস্যায় পড়ে। দুই, নিখুঁত লাইন-লেংথে বল ফেলার দক্ষতা। তিন, কম্পিউটার মগজ। কোন ব্যাটসম্যানের কী দুর্বলতা তা বোধ হয় ওর মস্তিষ্কের কোষে নথিবদ্ধ আছে।
অশ্বিন সেই বিরল প্রজাতির অফস্পিনার, যে হাফ হাতা শার্ট পরে বল করে। অফস্পিনারদের বিরুদ্ধে কনুই ভাঙার অভিযোগ তো কম ওঠে না। কিন্তু নিজের অ্যাকশনের উপরে অশ্বিনের এতটাই আস্থা যে, বল করার সময় কনুই দেখাতে ভয় পায় না। আমার কাছে অশ্বিন হল বোলারদের রাহুল দ্রাবিড়। যে একটু আড়ালে থেকে নিজের কাজটা করে যায়।
অনেকে হয়তো এরাপল্লি প্রসন্নদের সঙ্গে অশ্বিনের তুলনা টানতে চাইবেন। ভুললে চলবে না, বিষাণ বেদী-প্রসন্নরাও কিন্তু ঘূর্ণি পিচেই বেশি উইকেট নিয়েছে। তখন তো প্রথম দিনে পিচ ঝাড় দেওয়ার সময় ধুলোয় ঢেকে যেত মাঠকর্মীরা! আর ক্ল্যাসিকাল অফস্পিনারদের সঙ্গে অশ্বিনের তুলনা করে লাভ নেই। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অশ্বিন নিজের বোলিংয়ে পরিবর্তন এনেছে। এখন শুধু ফ্লাইটে ভরসা করা যায় না। বৈচিত্র লাগবেই লাগবে।
প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। রুট রান না পেলে কিন্তু ভারতীয় পিচে ওদের পক্ষে ভাল কিছু করা কঠিন। স্পিনারদের বিরুদ্ধে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলছে। ক্রিজ থেকে স্টেপ আউট করার চেষ্টা নেই। সুইপ ছাড়া আর কোনও রাস্তা নিচ্ছে না স্পিন সামলানোর। রান তোলার ইতিবাচক মনোভাব নেই। রোহিত-রাহানেদের মধ্যে যেটা ছিল। বলের উপরে গিয়ে সুইপ শট মেরেছে ওরা। রুট এত ভাল সুইপ মারে, কিন্তু বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষর পটেলের বাউন্সটা সামলাতে পারল না। অক্ষর লম্বা বলে বাউন্স ভাল পায়। ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ উঠে গেল। প্রথম টেস্ট উইকেটটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে অক্ষরের।