অনিল কুম্বলে-বিরাট কোহালি হনিমুন বেশি দিন টিকল না দেখে আমি একেবারেই অবাক হইনি। এর আগেও এমন ঘটেছে। কপিল দেব-সচিন তেন্ডুলকর বা গ্রেগ চ্যাপেল-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কোচ আর অধিনায়ক দু’জনেই যদি হেভিওয়েট হয়, সঙ্ঘাত অনিবার্য। তবে কুম্বলেকে বেছেছিল যে কমিটি তাতে সচিন, সৌরভ দু’জনেই ছিল। নিজেদের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগিয়ে আরও সতর্ক হতে পারত ওরা।
যাই হোক, প্রথম বারের ভুল সৌরভ-সচিন-লক্ষ্মণরা এ বার আর না করলেই ভাল হয়। আমার মতে, কোহালিদের কোচ হওয়ার জন্য অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে রবি শাস্ত্রী। ওর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বীরেন্দ্র সহবাগ কোচ হিসেবে খুব দারুণ কোনও প্রার্থীই নয়। আমার কথা হচ্ছে, রাহুল দ্রাবিড় যদি জুনিয়র ক্রিকেটের দায়িত্ব পালন করে ধাপে ধাপে আসার ধৈর্য দেখাতে পারে, তা হলে সহবাগ কী ভাবে সরাসরি সিনিয়র টিমের দায়িত্ব পাওয়ার আশা করতে পারে? ওকেও বলা হোক যে, ভারতের কোচ হতে চাইলে রাহুলের মতো ধাপে ধাপে এসো। টম মুডির অভিজ্ঞতা আছে কিন্তু শ্রীলঙ্কার হয়ে ভাল পারফরম্যান্স নেই।
সে দিক দিয়ে শাস্ত্রী অনেক নিরাপদ প্রার্থী। গোটা দলের সঙ্গে ও দারুণ সম্পর্ক রেখে কাজ করেছে। রবির সঙ্গে আমি প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। ওর ক্রিকেট যাত্রাটাই ছিল সীমাবদ্ধতাকে উপড়ে ফেলে উৎকর্ষের দিকে নিজেকে নিয়ে যাওয়ার কাহিনি। এই কারণেই ও দারুণ ‘মোটিভেটর’। অসম সাহসী, আগ্রাসী এবং দুর্দান্ত মগজ। বহুবার ও ম্যাচ নিয়ে গিয়েছে আগ্রাসন আর মগজাস্ত্রে। ওর মতো ইতিবাচক চরিত্র খুব কম দেখেছি। এ ব্যাপারে ওর সঙ্গে দারুণ মিল রয়েছে কোহালিরও।
আরও পড়ুন: একটাও ‘নো বল’ করেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে! কারা জানেন?
ধোনি, কোহালিদের টিম ডিরেক্টর হিসেবে যখন ও দায়িত্ব নিয়েছিল, তখন দলটা পর-পর হোয়াইটওয়াশ হচ্ছিল টেস্টে। রবি এসেই দলটার চেহারা পাল্টে দিল। তখন কোচ ছিল ডানকান ফ্লেচার। দলটাকে কোনও দিশাই দেখাতে পারছিল না। টেস্ট সিরিজে বিধ্বস্ত হল ভারত। তার পরেই রবি দায়িত্ব নিল এবং সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ জিতল ধোনিরা। আঠেরো মাস ডিরেক্টর থাকার সময় কোহালিদের এই দলটার মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করেছিল রবিই।
তিন প্রতিদ্বন্দ্বী, লেখকের নম্বর
শাস্ত্রী: অশোকের ফেভারিট
ব্যাখ্যা: ডিরেক্টর হিসেবে আগে দারুণ সাফল্য। মোটিভেটর। ম্যান ম্যানেজমেন্ট ভাল। স্কোর: ৮.৫/১০
সহবাগ: ‘এ’ টিম ঘুরে আসুক।
ব্যাখ্যা: ধোনি, যুবিদের সঙ্গে খেলায় সম্মান নিয়ে প্রশ্ন। কোচিং মেনে খেলেননি। স্কোর: ৫/১০
মুডি: বিদেশি দরকার নেই।
ব্যাখ্যা: শ্রীলঙ্কার কোচ হিসেবে দারুণ সাফল্য নেই। দেশের লোক ছেড়ে বিদেশ কেন? স্কোর: ৫/১০
এখন দেখেশুনে মনে হচ্ছে, অধিনায়ক কোহালি ওকে ফেরত চাইছে। তা হলে আবার কীসের তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে? টিমের প্রয়োজন মেনে ওকেই কোচ করা উচিত। বরাবর ভারতীয় ক্রিকেটে তো অধিনায়ক যা চেয়েছে, তা-ই হয়েছে। ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক সৌরভ ক্রিকেট অ্যাডভাইসরি কমিটিতে রয়েছে। যে কমিটির হাতে কোচ বাছার দায়িত্ব রয়েছে। তা সৌরভ যখন অধিনায়ক ছিল, জগমোহন ডালমিয়া ছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। জগুদার সম্পূর্ণ সমর্থন সব ব্যাপারে পেত ও। তখন আমি জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। অধিনায়কের ইচ্ছা মেনেই টিম করা হতো। গ্রেগ চ্যাপেলকে কোচ করে আনার সময়েও অনেকে রাজি ছিল না। সৌরভই চেয়েছিল গ্রেগকে কোচ করতে। সেই সময়েও এখনকার মতো তিন সদস্যের কমিটি ছিল। যাদের ওপর কোচ বাছাইয়ের দায়িত্ব ছেড়েছিল বোর্ড। শেষ পর্যন্ত কিন্তু গ্রেগকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল অধিনায়ক সৌরভ অস্ট্রেলীয়কে চাইছিল বলে। ইট্স আ ক্যাপ্টেন্স গেম। সৌরভের সময় ছিল, এখনও তা-ই থাকবে।
এমনিতে তিন সদস্যের এই অ্যাডভাইসরি কমিটি নিয়ে আমার একটু আপত্তি আছে। কমিটিতে রাখা হয়েছে সচিন, সৌরভ, লক্ষ্মণকে। তিন মহাতারকাকে রাখা হয়েছে, সে তারা কোচ নির্বাচন নিয়ে কিছু বুঝুক বা না বুঝুক, সেটা ঠিকই আছে। কিন্তু একই প্রজন্মের তিন ক্রিকেটার কেন কমিটিতে? গাওস্কর, কপিল, মোহিন্দর বা তারও আগের বিষাণ সিংহ বেদির মতো কেউ নেই কেন?
ধোনির ক্যাপ্টেন্সিতে সহবাগ খেলেছে। এখন ও আবার ধোনির কোচ হবে কী করে? সহবাগকে তো ধোনি, যুবরাজরা ডাকবে ‘বীরু’ বলে। সেটাও বেশ অস্বস্তিকর। কপিলের মতো সহবাগও সহজাত প্রতিভা। কোচ হলে বন্ধু কপিলের মতোই ভরাডুবি হবে!