তারকাখচিত উপদেষ্টা কমিটিতে তিনি থাকতে রাজি না হলেও ভারতের যুব দলের কোচের দায়িত্ব নিতে রাজি হয়েছেন রাহুল দ্রাবিড়।
এর পরে টিম ডিরেক্টর হিসেবে রবি শাস্ত্রীর ভবিষ্যৎ কী? তার কোনও ইঙ্গিত নেই বোর্ড সচিবের মুখে।
ক্রিকেট মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, শাস্ত্রীর উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি হওয়ার জন্যই কি রাহুল দ্রাবিড়কে যুব দলের দায়িত্ব নিতে রাজি করানো হল?
আগামী বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। এই বছর ভারত ‘এ’ দলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সফরও রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। শনিবার সচিন, সৌরভ, লক্ষ্মণদের নিয়ে গড়া উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ভারত ‘এ’ দলের উপর নাকি আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিন কিংবদন্তিই।
তাই পাঁচশোরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা রাহুল দ্রাবিড়কে অনূর্ধ্ব-১৯ ও ভারত ‘এ’ দলের দায়িত্ব নিতে রাজি করানোর খবর দিয়ে বেশ তৃপ্তির হাসি দেখা গেল বোর্ড সচিব অনুরাগ ঠাকুরের মুখে। যখন বললেন, ‘‘একটা ভাল খবর দিই। রাহুল দ্রাবিড় ভবিষ্যতে ভারত ‘এ’ ও অনূর্ধ্ব ১৯-এর কোচ হতে রাজি হয়েছে।’’
যদিও ঠিক কবে থেকে তিনি এই দায়িত্বে, তা জানাতে পারলেন না সচিব। শুধু বললেন, ‘‘সামনে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘এ’ দলের সিরিজ আছে। তার আগেই দায়িত্ব নেবে।’’
রবি শাস্ত্রীর ভবিষ্যৎ ও ভারতীয় দলের সম্ভাব্য কোচের প্রসঙ্গ তুলতে বোর্ড সচিব বলে দিলেন, ‘‘উপদেষ্টা কমিটির উপর ওটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওরাই কয়েকটা নাম দেবে। তার পর ঠিক হবে নতুন কোচ।’’ বৈঠকের পর সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘কোচ তো বোর্ড ঠিক করবে। আমরা কোনও নাম দিইনি। কয়েকটা নাম বাছাই করার পর হয়তো আমরা আবার বসব। কয়েকজনকে ইন্টারভিউ করেই হয়তো চূড়ান্ত কোচ বাছা হবে। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা (সচিন, সৌরভ, লক্ষ্মণ) হয়তো থাকব। অগস্ট (ভারতের শ্রীলঙ্কা সফর) পর্যন্ত সময় আছে। তার আগেই ঠিক হয়ে যাবে বোধহয়।’’
তারকাসমৃদ্ধ এই কমিটির ভূমিকা ঠিক কী, তাও অবশ্য এ দিন স্পষ্ট হল না। সৌরভ বললেন, ‘‘আমরাও জানি না আমাদের ঠিক কী করতে হবে। আজ শুধু যে যার প্রস্তাব দিয়েছে। সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে মাত্র।’’ প্রয়োজনে তাঁরা ক্রিকেটারদের সাহায্য করতে পারেন, বোর্ডের এই তত্ত্ব নিয়েও খুলে বলতে চাইলেন না তিনি। শুধু বললেন, ‘‘এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা হয়নি। পরের বৈঠকে হয়তো এটা নিয়ে আলোচনা হবে।’’
জগমোহন ডালমিয়া এবং অনুরাগ ঠাকুর। যে জুটির উদ্যোগে জাতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোতে প্রত্যাবর্তন দ্রাবিড়ের। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
কিন্তু তা কবে হবে, তার ঠিক নেই। সচিন তেন্ডুলকর রবিবার প্রায় দেড় মাসের জন্য বিদেশে চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন সৌরভকে। শনিবার বৈঠকে নাকি তিনি বলে দিয়ে গিয়েছেন, নিয়মিত তিনি বৈঠকে আসতে পারবেন কি না, কথা দিতে পারছেন না। এমনিতেই কোনও সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে না কমিটি সদস্যদের। তার উপর কাজের বহরও কম নয়। তিন মহাতারকা একসঙ্গে কতটা সময় দিতে পারবেন বৈঠকের জন্য এবং বিরাট কোহলি বা দলের অন্য কোনও ব্যাটসম্যানের ব্যাড প্যাচ দেখা দিলে সচিন তাঁর জন্য দৌড়ে আসবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এখন থেকেই।
জানা গেল, এ দিনের বৈঠকে সচিন, লক্ষ্মণ দু’জনই টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। ভবিষ্যতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্নও উড়িয়ে দেননি বোর্ড সচিব। বলেন, ‘‘এখনও কোনও নাম বাছাই হয়নি। হলেই জানতে পারবেন।’’
এ দিন দুপুরে সৌরভের গাড়িতেই তাঁর সঙ্গে সচিন ও লক্ষ্মণ সিএবি-তে এসে পৌঁছন। কথা ছিল এই বৈঠকে কমিটি সদস্যরা, বোর্ড প্রেসিডেন্ট, সচিব, ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফ ছাড়া কেউ থাকবেন না। তবে বৈঠকে বোর্ড প্রেসিডেন্টের পুত্র, সিএবি কর্তা, রত্নাকর শেঠি, এম শ্রীধররাও ছিলেন।
শাস্ত্রীর ক্লাস শুরু। ইডেনে হরভজনের সঙ্গে। ছবি: উৎপল সরকার
সিনিয়র দলের স্পিনারদের জন্য একজন কোচ নিয়োগের প্রস্তাব উঠে এসেছে শনিবারের এই বৈঠকে। নরেন্দ্র হিরওয়ানির নামও নাকি ভাবা হয়েছে। ভারত ‘এ’ দলের উপর বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া ছাড়াও সিনিয়র দলের আরও বেশি বিদেশ সফরের প্রস্তাব দেওয়া হয়। জাতীয় ‘এ’ দল এবং অনুর্ধ্ব-১৯ ও ২৩ দলকে যাতে প্রয়োজনে সিনিয়র দলের যথাযোগ্য সাপ্লাই লাইন হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সে জন্য সব দলেই প্রায় একই রকম অনুশীলন প্রক্রিয়া বজায় রেখে একটা পিরামিড সিস্টেম তৈরি করার প্রস্তাবও নাকি দিয়েছেন সচিনরা।
এমন ঘটনাবহুল দিনের শেষে যখন বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার ঘরে দেখা করতে আসেন বিরাট কোহলিদের টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী, তখন নাকি ডালমিয়া তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘‘হোয়্যার দেয়ার ইজ রবি শাস্ত্রী, দেয়ার ইজ নো প্রবলেম।’’
ইডেনের ক্লাব হাউজে ঠিক উল্টো দিকের ঘরেই তখন বসে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও কত বদলে যায়!