কোচ আগাসির সামনে জকোভিচের প্রস্তুতি। ছবি: গেটি ইমেজেস
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধন। উইম্বলডন মানে টেনিস দুনিয়ার কাছে এক ঝলকে এই ছবিটাই ফুটে ওঠে।
স্ট্রবেরি, ক্রিম, খেলোয়াড়দের সাদা পোশাক, বিখ্যাত ঘাসের কোর্টগুলোর গ্যালারিতে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়— বিশ্বের সেরা টেনিস টুর্নামেন্টের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তবে ঐতিহ্যের পাশাপাশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকেও উইম্বলডন দূরে ঠেলে দেয়নি। তা সে প্রযুক্তি-নির্ভর নতুন রিভিউ পদ্ধতি হোক বা দর্শকদের জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধে।
আরও পড়ুন: জকোভিচ কত দূর যায়, দেখার অপেক্ষায় আছি
যেমন ‘আস্ক ফ্রেড’ (কিংবদন্তি ফ্রেড পেরির নামে) নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু হচ্ছে এ বার। সেটি ডাউনলোড করে নিন। তা হলে অ্যাপ থেকেই জেনে নেওয়া যাবে কী খাবেন, কোথায় যাবেন, কী দেখবেন, কোথায় উইম্বলডনের সাদা তোয়ালে পাবেন, কোথায় টি-শার্ট পাবেন।
আমাদের ছোটবেলায় টিভি ছিল না। রেডিওয় শুনতাম উইম্বলডনের কথা আর স্বপ্ন দেখতাম এক দিন আমিও ওখানে খেলব। খেলোয়াড় হিসেবে আমি চার বার নেমেছি উইম্বলডনে। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উঠেছি। উইম্বলডনে ভরা গ্যালারির সামনে পারফর্ম করার অভিজ্ঞতাটা সারা জীবনের সেরা স্মৃতিতে থেকে যাবে। আসলে উইম্বলডন হল টেনিসের মক্কা। বেসরকারি ভাবে এ জন্যই প্রায় ১৪০ বছরের পুরনো এই টুর্নামেন্টকে বলা হয়, টেনিসের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ।
ঐতিহ্য থাকলেও উইম্বলডন কিন্তু পরিবর্তন থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকেনি। তবে যতটুকু প্রয়োজন হয়েছে, ঠিক ততটাই বদল এনেছে। এ বারের উইম্বলডনেও যেমন কিছু পরিবর্তন হয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে, জুনের শেষ সপ্তাহের বদলে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে টুর্নামেন্ট শুরু করা। তাতে অবশ্য এক দিক থেকে ভালই হয়েছে। প্রস্তুতি নেওয়ার আরও সময় পেল খেলোয়াড়রা। আগে ফরাসি ওপেনের দু’সপ্তাহ পরেই উইম্বলডন শুরু হয়ে যেত বলে অনেকেই ক্লান্ত থাকত। রাফায়েল নাদালের মতো তারকা তো ফরাসি ওপেনে খেলার পরে ক্লান্তির জন্য অনেক সময় উইম্বলডনের প্রস্তুতি টুর্নামেন্টে নামতই না। টুর্নামেন্ট প্রায় এক সপ্তাহ পরে শুরু করায় সেই সমস্যাটা কমবে বলেই আমার ধারণা।
উইম্বলডনে এ বার আমার বাজিও কিন্তু রাফায়েল নাদাল। বহু দিন পরে নাদালকে আবার সেই বিধ্বংসী ফর্মে দেখছি। অনেক আগ্রাসী খেলছে। অনেক বেশি নেটের সামনে আসছে। ফরাসি ওপেনে নাদালকে যে রকম ফর্মে দেখেছি, সেটা ঘাসের কোর্টে ধরে রাখতে পারলে ও-ই কিন্তু দৌড়ে এগিয়ে থাকবে। উইম্বলডনে নাদাল দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। আরও একটা তথ্যও কিন্তু নাদালের পক্ষে যাচ্ছে। উইম্বলডনে নাদাল যে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, (২০০৮ এবং ২০১০) সেই দু’বারই ফরাসি ওপেনে এ বারের মতো বিধ্বংসী ফর্মে ছিল।
ভারতীয় সমর্থকরাও কিন্তু উইম্বলডনের দিকে নতুন আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। লিয়েন্ডার, বোপান্না, সানিয়ার পাশাপাশি এ বার জীবন নেদুচেজিয়ানও প্রথম বার খেলবে উইম্বলডনের ডাবলসে। ক’দিন আগেই জীবন ফরাসি ওপেন চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে ডাবলসে। ছেলেটাকে অনেক দিন ধরেই দেখছি। গত নভেম্বরেও কলকাতায় প্রেমজিৎ লাল স্মৃতি টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছিল। দারুণ উন্নতি করেছে। খুব পরিশ্রমী। আশা করছি ওরা দু’তিনটে রাউন্ড অন্তত জিতবেই।
একই কথা বলব আর এক ভারতীয় জুটি পূরব রাজা এবং দ্বিবীজ শরনকে নিয়েও। এ ছাড়া ডাবলসে রোহন বোপান্নার পাশাপাশি লিয়েন্ডারের ওপরও নজর থাকবে। লিয়েন্ডার ঘাসের কোর্টে ভাল খেলে। তবে সেমিফাইনাল, ফাইনালে যেতে পারবে কি না সেটাই দেখার। আমার মনে হয় এ বার আমাদের ট্রফি জেতার সেরা সুযোগ মিক্সড ডাবলসে। ফরাসি ওপেনের মিক্সড ডাবলস চ্যাম্পিয়ন বোপান্নারা তো আছেই, তা ছাড়া লিয়েন্ডার-মার্টিনা হিঙ্গিস জুটিও চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি।
খারাপ লাগছে সানিয়ার জন্য। ওর নিয়মিত সঙ্গী শ্বেদোভা অস্ত্রোপচারের জন্য নেই। নতুন পার্টনার কার্স্টেন ফ্লিপকেন্সও চোট পেল। সানিয়ার বাবার সঙ্গে ক’দিন আগেই কথা হচ্ছিল। দুর্ভাগ্য মেয়েটার। তবে কার্স্টেন এখনও নাম তোলেনি। আশা করি ও ফিট হয়ে উঠবে।
উইম্বলডনে জনতার ডার্লিং কে নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। প্রিয় কোর্টে রেকর্ড অষ্টম খেতাব জয়ের লক্ষ্যে নামবে ফেডেরার। এবং, আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, সর্বস্ব দিয়ে ও ঝাঁপাবে ফের উইম্বলডন জেতার জন্য। বয়স যতই ৩৫ হোক, অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতে নতুন ভাবে ফিরে আসা এই ফেডেরার অনেক দূর যেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা ফেডেরার ক্লে কোর্ট মরসুমে না নামার জন্য আরও তরতাজা থাকবে। তার ওপর প্রস্তুতি টুর্নামেন্টেও ভালো ফর্ম দেখিয়েছে। দু’টো টুর্নামেন্টে নেমে একটায় জিতেছে। তাই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মতো ফের রজারের হাতে ঐতিহ্যবাহী গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি দেখলে অবাক হব না। আর রজারের খেতাব জেতা তো এখন যেন উইম্বলডনেরও একটা বড় ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।