PV Sindhu

সিন্ধুদিদির মন্ত্রই আমার মন্ত্র, হার মানব না, বললেন বাংলার ঋতুপর্ণা

আগামী মাসের ২ তারিখই ঋতুপর্ণা উড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেন। সেখানে ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত চলবে ইউক্রেন ওপেন। ইউক্রেনে খেলেই ঋতুপর্ণা উড়ে যাবেন বেলজিয়ামে।

Advertisement

কৃশানু মজুমদার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৯ ১৭:০৫
Share:

সিন্ধুই প্রেরণা ঋতুপর্ণার।

কোর্টের ভিতরে ছোটবেলা থেকেই আগ্রাসী তাঁর সিন্ধুদিদি। কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি নন। হেরে গেলেও দমে যান না। সেই জন্যই সিন্ধুদিদির দুরন্ত জয় দেখে এতটুকুও অবাক নন বাংলার ঋতুপর্ণা দাস।

Advertisement

বুধবার পুল্লেলা গোপীচন্দের ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি থেকে আনন্দবাজারকে বছর বাইশের ঋতুপর্ণা বললেন, ‘‘সিন্ধুদিদি তো এ রকমই! কাউকে ছাড়ে না। হার মানতে চায় না। ছোটবেলা থেকেই তো ওকে দেখছি। তখনও আগ্রাসী ছিল। বড় হওয়ার পরে আরও আগ্রাসী হয়েছে।’’ এই আগ্রাসনের বীজ-ই যে শিষ্যদের মধ্যে বুনে দিয়েছেন গোপীচন্দ। প্র্যাকটিসের সময়ে ‘শিষ্য’দের উদ্দেশে গুরুমন্ত্র, ‘‘বিপক্ষকে দাঁড়াতে দেবে না। আগ্রাসী ব্যাডমিন্টন খেলতে হবে। হারার আগে হারবে না।’’ এ ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের তৈরি করেন গোপীচন্দ। গুরুর কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন সিন্ধু-খতুপর্ণারা। ধেয়ে আসা সমালোচনার ঝড়ও তাঁদের ঘায়েল করতে পারে না।

আগের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ-গুলিতে ব্যর্থ হওয়ার পরে সিন্ধুর সমালোচনায় মেতে উঠেছিলেন সমালোচকরা। জবাব দেননি তিনি। উল্টে চোয়াল শক্ত করে অনুশীলন করে গিয়েছেন। বাসেলে তাঁর হাতের র‌্যাকেট জবাব দিয়েছে সব সমালোচনার। সিন্ধুর লড়াই খুব কাছ থেকে দেখা ঋতুপর্ণা বলছেন, ‘‘আগের বারগুলোয় সোনা জেতার খুব কাছে এসেও সোনা জিততে পারেনি সিন্ধুদিদি। ওর যেন জেদ চেপে গিয়েছিল। আরও কঠিন অনুশীলন করত। বুঝতে পেরেছিলাম এ বার কিছু একটা করবে। ফাইনালে এক্সট্রা অর্ডিনারি খেলেছে। দাঁড়াতেই দেয়নি ওকুহারাকে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এ ভাবেই ওয়ার্কআউট করেন সিন্ধু! ভিডিয়ো দেখলে চমকে যাবেন

আরও পড়ুন: অলিম্পিক্সে নতুন অস্ত্র নিয়ে নামবেন সিন্ধু

জনশ্রুতি বলে, গোপীচন্দ অ্যাকাডেমিতে পুরুষদের সঙ্গে প্র্যাকটিস করেন সিন্ধু। মাঝে মাঝে গোপীও নেমে পড়েন ছাত্রীর বিরুদ্ধে। গুরু-শিষ্যা কোর্টে স্ম্যাশের ঝড় তোলেন। রবিবার বাসেলে জাপানি তারকা ওকুহারার কাছে সিন্ধুর স্ম্যাশের জবাবই ছিল না। দিদির খেলার ধরন বিশ্লেষণ করে ঋতুপর্ণা বলছেন, ‘‘ওর স্ম্যাশ ফেরানো খুব কঠিন। ও দীর্ঘ ক্ষণ স্ম্যাশ প্র্যাকটিস করে। তবে সিন্ধুর আগ্রাসন আমাকে খুব টানে। আমি অবশ্য ওর মতো আগ্রাসী নই।’’ কোর্টে একে অন্যের বিরুদ্ধে মুখোমুখিও হয়েছেন। সেই লড়াই প্রসঙ্গে বাংলার মেয়েটি বলছেন, ‘‘২০১৫ সালে সিন্ধুর বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। আমি হেরে গিয়েছিলাম ম্যাচটা।’’ তার পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে। দু’ জনের খেলাই আগের থেকে অনেক বদলে গিয়েছে। সিন্ধুকে মডেল করে এগিয়ে চলেছেন ঋতুপর্ণা।

একই ফ্রেমে ঋতুপর্ণা ও সিন্ধু।

সিন্ধুর দুরন্ত সাফল্য খিদে বাড়িয়ে দিয়েছে হলদিয়ার মেয়েটির। তিনি বলছেন, ‘‘সিন্ধুর দুরন্ত জয় আমাদেরও অনুপ্রাণিত করে। ভাল খেলার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়।’’ আগামী মাসের ২ তারিখই ঋতুপর্ণা উড়ে যাচ্ছেন ইউক্রেন। সেখানে ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত চলবে ইউক্রেন ওপেন। ইউক্রেনে খেলেই ঋতুপর্ণা উড়ে যাবেন বেলজিয়ামে (বেলজিয়াম ওপেন ১১-১৪)। কেমন হয়েছে প্রস্তুতি? ২০১৬ সালের সিনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন বলছেন, ‘‘সকালে তিন ঘণ্টা অন কোর্ট প্র্যাকটিস করছি। ওয়েট ট্রেনিং করছি। সন্ধেতে আবার ট্রেনিং। ড্রপ শটটা বেশি করে অনুশীলন করছি।’’ নিজের প্রস্তুতি নিয়ে একটানা কথাগুলো বলছিলেন ঋতুপর্ণা।

গুরু গোপীচন্দের সঙ্গে ঋতুপর্ণা।

বিশ্বখেতাব জেতার পরে দারুণ ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে দিন যাচ্ছে সিন্ধুর। দেশে ফিরে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেন রিজিজুর সঙ্গে দেখা করেছেন। পরে হায়দরাবাদে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। ঋতুপর্ণার সঙ্গে সে ভাবে কথাবার্তা হয়নি সিন্ধুদিদির। মিতভাষী ব্যাডমিন্টন তারকা বলছিলেন, ‘‘খুব ব্যস্ত সিন্ধু। কাল বিকেলে দেখা হল খুব অল্প সময়ের জন্য। কংগ্র্যাটস জানালাম। বেশি কথা আর হয়নি। পরে কথা হবে।’’ সিন্ধুর ব্যস্ততা কমলে ঋতুপর্ণা আবার হয়ে পড়বেন ব্যস্ত। ইউক্রেনে উড়ে যাওয়ার আগে ভিসা পাওয়া নিয়ে সামান্য জটিলতা তৈরি হয়েছে। ঋতুপর্ণার মা অনন্যা দাস বলছিলেন, ‘‘আসলে ভিসা পাওয়া নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। তাই ও একটু চিন্তিত।’’ কথা বলার সময়ে অবশ্য চিন্তার লেশমাত্র ছিল না ঋতুপর্ণার গলায়।

চিন্তা শব্দটার অস্তিত্বই যেন নেই গোপীর ছাত্রছাত্রীদের মনে। তাই অতীতে সোনা হারানোর পরে গোটা বিশ্ব সিন্ধুর সমালোচনায় মুখর হলেও ভেঙে পড়েননি হায়দরাবাদি তারকা। অন্তরালে থেকে নিজেকে তৈরি করছিলেন বড় মঞ্চের জন্য। অবশেষে বাসেল-এই হল সিন্ধু-প্লাবন।

এ বার সেই সিন্ধু-স্রোতে ভেসেই ইউক্রেন যাচ্ছেন ঋতুপর্ণা! চোখে জয়ের স্বপ্ন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement