সিন্ধুস্বপ্ন: বহরমপুরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
এক সময়ের গমগমে সিনেমা হলটা এখন পরিত্যক্ত বাড়ি। আর সেই হলকেই সাফ-সুতরো করে ব্যাডমিন্টন খেলার কোট বানিয়ে ফেলেছে সীমান্তের সাগরপাড়ার এক দল যুবক। সীমান্তের আরও এক গঞ্জ, জলঙ্গিতে ডোবার জল ছেঁকে সেখানেই চলে ব্যাডমিন্টন খেলা।
সাগরপাড়ার দেবাশিস সরকার বলছেন, ‘‘এত বড় এলাকায় একটা ইনডোর স্টেডিয়াম নেই! ফলে বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত সিনেমা হলেই আলো জ্বালিয়ে বছরভর খেলি আমরা।’’ থেমে নেই জলঙ্গির এফইউসি ক্লাবও। ক্লাবের পাশেই একটা ডোবাকে প্রতি বছর শীতের আগেই পরিষ্কার করে ফেলে ক্লাবের ছেলেরা। তার পরে সেখানেই জমিয়ে চলে ব্যাডমিন্টন। ডোমকলের পুরপ্রধান তৃণমূলের জাফিকুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আমরা সবে দায়িত্ব নিয়েছি পুরসভার। খেলার মাঠ নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই নানা পরিকল্পনা শুরু করেছি। ইনডোর স্টেডিয়ামের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রয়েছে।’’
ছবিটা প্রায় একই রকম জিয়াগঞ্জেও। সেখানেও ব্যাডমিন্টনের অনুশীলন চলে। মাঝে মধ্যে জেলাস্তর ও রাজ্যস্তরেও খেলে পদকও নিয়ে আসে ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ব্যাডমিন্টনের অনুশীলনের জন্য নেই ভাল ব্যবস্থা। তবে খেলাটা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য এগিয়ে এসেছে জিয়াগঞ্জ আড়ৎদার সমিতি। পাটের গুদামের একটি হল ঘর খেলার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন আড়ৎদার সমিতি কর্তৃপক্ষ। সেখানেই চলে স্বপ্ন ছোঁয়ার অনুশীলন।
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য বছর দশেক আগে জিয়াগঞ্জে তৈরি হয় ‘ইউনাইটেড ব্রাদার্স’ ক্লাব। জনা পনেরো স্কুল ও কলেজে পড়ুয়া ওই ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত অনুশীলন চলে ওই গুদামের হলঘরেই। ক্লাবের সম্পাদক প্রবীর দত্ত বলেন, ‘‘আমাদের এখান থেকে অনেকেই জেলা এবং রাজ্যস্তরে খেলেছে। আড়ৎদারেরা তাঁদের হলঘরটা দিয়েছেন বলেই খেলা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।’’
জিয়াগঞ্জ মহাজন আড়ৎদার সমিতির কর্তা সুরেশচন্দ্র পাল বলেন, ‘‘খেলা যাতে বন্ধ না হয় সেই জন্যই আমাদের হলঘরটা দিয়েছি। যখন ছেলেরা খেলে পদক আনে তখন আমাদের যে কী আনন্দ হয়! কে জানে, হয়তো এই বিন্দু বিন্দু চেষ্টা থেকেই কেউ কেউ হয়ে উঠবে পি ভি সিন্ধু।’’
সেই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যেই দিনরাত ঘাম ঝরিয়ে চলেছেন ওঁরা।