সংগ্রামে সঙ্গী বাবাকেই সেঞ্চুরি উৎসর্গ

জীবনযুদ্ধের দিনগুলো পেরিয়ে এসে এই চরম সাফল্যের দিনে বাবার কথা ছাড়া আর কার কথাই বা বলবেন পৃথ্বী? মা তো তাঁর চার বছর বয়সেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে তাঁর বাবাই সব কিছু।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৪
Share:

সেঞ্চুরির পর। ছবি পিটিআই

মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সফর করে বাবার সঙ্গে বান্দ্রায় অনুশীলনে যাওয়া ও ফেরা। ছেলের সঙ্গে থেকে যাতে তাকে সারা দিন ক্রিকেটের মধ্যে রাখতে পারেন, সে জন্য নিজের চলতি ব্যবসাটাও বন্ধ করে দেন পৃথ্বীর বাবা পঙ্কজ শ। সারা জীবনের সঞ্চয় দিয়ে কোনও রকমে দিন কাটাতে হবে জেনেও। এই কঠিন জীবন-সংগ্রাম পেরিয়ে টেস্ট ক্রিকেটার হয়ে ওঠা। আর অভিষেকেই অসাধারণ সেঞ্চুরি।

Advertisement

সেই জীবনযুদ্ধেরই ফসল এই সেঞ্চুরি, যা বৃহস্পতিবার রাজকোটে পৃথ্বী শ-র ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৯৯ বলে। টেস্ট অভিষেকে এমন সেঞ্চুরি তো অনেকেই করেছেন। কিন্তু এমন সংগ্রাম পেরিয়ে এসেছেন ক’জন? বৃহস্পতিবার সেঞ্চুরির পরে যখন ১৮ বছরের পৃথ্বীকে জিজ্ঞেস করা হয়, একশোয় পৌঁছনোর মুহূর্তে কার মুখ ভেসে উঠেছিল তাঁর মনে, তখন এক সেকেন্ডও না ভেবে তিনি বলে দেন, ‘‘বাবার কথাই মনে হচ্ছিল। উনি আমার জন্য সারা জীবনে প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাকে এই জায়গায় উঠে আসতে অনেক সাহায্য করেছেন। তাই এই সেঞ্চুরিটা বাবার জন্যই। আমার প্রতিটি রান অবশ্য তার জন্য। আর দেশের জন্যও।’’

জীবনযুদ্ধের দিনগুলো পেরিয়ে এসে এই চরম সাফল্যের দিনে বাবার কথা ছাড়া আর কার কথাই বা বলবেন পৃথ্বী? মা তো তাঁর চার বছর বয়সেই দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তার পর থেকে তাঁর বাবাই সব কিছু। পৃথ্বী এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘বাবা যে দারুণ ক্রিকেট বোঝে, তা নয়। তবে প্রচুর ক্রিকেট দেখেন। বরাবরই আমাকে বলেন, যেখানেই খেলবি ক্রিকেটটা উপভোগ করবি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে হোক বা অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতের হয়ে, যেখানেই প্রথম খেলতে নেমেছি, এই কথা বলেছেন তিনি। সব সময়ই উৎসাহ দিয়েছেন আমাকে।’’ বাবার জোগানো এই উৎসাহ নিয়েই রঞ্জি ট্রফি ও দলীপ ট্রফি অভিষেকেও সেঞ্চুরি করেন পৃথ্বী। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন টেস্ট অভিষেকেও।

Advertisement

আরও পড়ুন: হঠাৎই খবর পেয়েছিলাম, ৭০ কিমি দূরে একটা ছেলে দারুণ খেলছে

ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে ডাক পেলেও সেখানে খেলা হয়নি তাঁর। সুযোগ পেলেন দেশের মাঠেই। প্রথম টেস্টে নামার আগে যে কিছুটা মানসিক চাপে ছিলেন, তা স্বীকার করে নিয়ে পৃথ্বী বলেন, ‘‘চাপে তো ছিলামই। কিন্তু ৫-১০ ওভার ব্যাট করার পরে চাপটা কেটে যায়। আত্মবিশ্বাস ফিরে পাই। বল ব্যাটে আসছিল। বাউন্ডারি পাচ্ছিলাম। পরের দিকে আর চাপ অনুভব করছিলাম না। বোলারদের দমিয়ে রাখতে আমি বরাবরই ভালবাসি। বাজে বলে মারব, ভাল বল সমীহ করে খেলব, বরাবরই এই নিয়মগুলো মেনে চলি। আজও তা-ই করেছি। আর পাঁচটা ম্যাচে যে ভাবে ব্যাট করি, আজও সে ভাবেই করেছি। বিশেষ বা নতুন কিছু করার চেষ্টা করিনি।’’

বিশেষজ্ঞরা অনেকে পৃথ্বীকে ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজে খেলানোরই পরামর্শ দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ না পাওয়ায় অবশ্য আফসোস নেই ১৮ বছর বয়সি নতুন তারকার। বলেন, ‘‘কবে খেলার সুযোগ পাব, তা তো কোচ আর বিরাটভাই ঠিক করবেন। তবে আমি ওখানে তৈরিই ছিলাম। ইংল্যান্ডে খেললেও এই নিয়মগুলো মেনেই খেলতাম। নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করতাম।’’

রাজকোটে টেস্ট অভিষেকের সুযোগ পেয়ে খুশি পৃথ্বী বলেন, ‘‘ভালই হল, এখানে সুযোগ পেলাম। স্কোরবোর্ড চালু রাখতে হবে, এটা মাথায় ছিল। অনুর্ধ্ব ১৯ ও ঘরোয়া ক্রিকেটের চেয়ে টেস্ট ক্রিকেট একদম অন্য রকম। অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ এখানে। এখানে অনেক বেশি গতির বোলিং সামলাতে হয়। বোলিং বৈচিত্রও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনেক বেশি। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলই তো আজ প্রায় ১৫০-এর গতিতে বল করছিল।’’

ভারতীয় ড্রেসিংরুমে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর দারুণ বলে জানালেন মুম্বইয়ের প্রতিভাবান ওপেনার। বলেন, ‘‘আমাদের ড্রেসিংরুমে সিনিয়র-জুনিয়র বলে কিছু নেই। সেটা কেউ ভাবতেও দেয়নি আমাকে। রবি স্যর ও বিরাটভাই ও সব ভাবতে বারণই করে দিয়েছেন। দলের সবাই অভিজ্ঞ। কিন্তু আমাকে কেউই তা বুঝতে দিচ্ছে না। সবাই এখানে বন্ধুর মতো মিশছে। আমার কোনও অসুবিধাই হচ্ছে না। এটা সত্যই খুব ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement