ঐতিহাসিক: লর্ডস ব্যালকনিতে সেই ‘দাদাগিরি’ এখনও চর্চায়। টুইটার
জন্মদিনেও চলে এল সেই বিখ্যাত হয়ে থাকা দুই ঘটনা। ইডেন টেস্টে টসের জন্য স্টিভ ওয়কে দাঁড় করিয়ে রাখা এবং ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পরে লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা খুলে ওড়ানো। ভারতীয় ওপেনার মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে বিসিসিআই টিভি-র লাইভ চ্যাটে সৌরভ জানিয়ে দিলেন, তিনি ব্লেজ়ার খুঁজে পাচ্ছিলেন না বলেই অপেক্ষা করতে হয় স্টিভ ওয়কে।
যদিও সৌরভ এই তথ্য আগেও কয়েক বার দিয়েছেন এবং কেউ মানতে চায়নি। মায়াঙ্কের প্রশ্ন, ‘‘দাদা আমরা শুনেছি টস করতে গিয়ে স্টিভ ওয় তোমার জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছিল। কেন দেরি হয়েছিল সে দিন?’’ সৌরভের উত্তর, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে একেবারেই স্টিভকে অপেক্ষা করাতে চাইনি। মুম্বইয়ে প্রথম টেস্টে টসের আগে আমি ব্লেজ়ার খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খুব স্নায়ুর চাপে ভুগছিলাম।’’ যোগ করছেন, ‘‘সেই সময়ের অস্ট্রেলিয়ার মতো দুর্ধর্ষ দল আমি দেখিনি। গত ২৫-৩০ বছরে এর চেয়ে ভাল অস্ট্রেলিয়া দল দেখিনি। আর অধিনায়ক হিসেবে সেটাই আমার প্রথম বড় সিরিজ ছিল। এতটাই স্নায়ুর চাপে ভুগছিলাম যে, ব্লেজ়ার খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’’ তবে সৌরভ বলতে ছাড়েননি যে, এর পরেই স্টিভ ওয়কে অপেক্ষা করিয়ে রাখাটা রণনীতির অঙ্গ হয়ে গিয়েছিল। তাঁর মন্তব্য, ‘‘লক্ষ্য করি, আমার এই আচরণে স্টিভ বেশ চটে গিয়েছিল। শুধু স্টিভ নয়, এর প্রভাব পড়েছিল বিপক্ষ শিবিরে। ওদের খেলার ধরনেও প্রভাব পড়ছিল। সিরিজ জুড়ে আমাদের উপর রেগে ছিল অস্ট্রেলিয়া। যেটা আমাদের পক্ষে যায়। ২-১ সিরিজ জিতি আমরা।’’
খেলা চলাকালীন সৌরভ ও স্টিভ যুযুধান দুই অধিনায়ক থাকলেও এখন খুবই ভাল সম্পর্ক দু’জনের। বরাবরই অধিনায়ক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে স্টিভকে সম্মান করেন সৌরভ। মায়াঙ্ককে সাক্ষাৎকারেও বলেছেন, ‘‘স্টিভ কিন্তু বরাবরই আমার খুব ভাল বন্ধু। মাঠের মধ্যে জেতার জন্য অনেকেই অনেক কিছু করে থাকে। মাঠের বাইরে সম্পর্কটা অন্য রকম হয়। স্টিভকে খুবই সম্মান করি।’’
আরও পড়ুন: রাজনীতি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি সৌরভ, তবে গেলে টপেই থাকবে, বললেন ডোনা
ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জেতার পরে লর্ডসে জার্সি উড়িয়ে উৎসব করেছিলেন সৌরভ। মায়াঙ্ক প্রশ্ন করেন, ‘‘বর্তমান ভারতীয় দলে কে তোমার মতো উৎসব করতে পারে?’’ সৌরভের জবাব, ‘‘এই টিমে প্রত্যেকে পারে।’’ যোগ করেন, ‘‘বর্তমান প্রজন্ম একেবারেই আলাদা। নিজেদের ট্রেনিংয়ের ভিডিয়ো এখন প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছে। কে বেঞ্চ-প্রেস দিচ্ছে, কে পুশ-আপ করছে সব কিছুই দেখতে পান সমর্থকেরা। আমাদের সময় আমি আর হরভজন ছাড়া জামা খুলে উড়িয়ে এ রকম উৎসব কেউ হয়তো করত না। এখন তোমাদের মধ্যে এ ধরনের উৎসব কেউ না করলেই বরং অবাক হব।’’
বুধবার ৪৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছায় ভেসে যান ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল অধিনায়ক। কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর থেকে বিরাট কোহালি, যুবরাজ সিংহ থেকে রোহিত শর্মা। তাঁর এক সময়ের ওপেনিং সঙ্গীর জন্মদিনে সচিনের টুইট, ‘‘শুভ জন্মদিন দাদা। মাঠের মধ্যে যে রকম অটুট জুটি ছিল আমাদের। মাঠের বাইরেও যেন একই রকম থাকে।’’ কোহালি সৌরভের সঙ্গে কেক কাটার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘শুভ জন্মদিন দাদা, খুব ভাল থেকো।’’ তাঁর প্রথম অধিনায়কের জন্য একটি ভিডিয়ো তৈরি করে পোস্ট করেছেন যুবরাজ সিংহ। বলেছেন, ‘‘তোমার জন্মদিনের আগে আমার আর ভাজ্জির রসিকতার গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। আমাদের উপর রেগে গিয়ে কী ভাবে তুমি নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলে। তার পর বুঝতে পারলে আমরা মজা করছি।’’ যোগ করেন, ‘‘কিন্তু দাদা, তুমিই আমার জীবনের একমাত্র অধিনায়ক। তোমার থেকে অনেক কিছু শিখেছি। এখনও শিখব।’’ ২০০১ সালে কলকাতায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের নায়ক ভিভিএস লক্ষ্মণ লিখেছেন, ‘‘শুভ জন্মদিন দাদা। ভারতীয় ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নিয়ে চলো।’’
ভারতীয় ক্রিকেটের বর্তমান প্রজন্মও সৌরভকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেনি। রোহিত শর্মা থেকে কে এল রাহুল প্রত্যেকেই শুভেচ্ছা জানান। পৃথ্বী শয়ের টুইট, ‘‘সব সময়েই আমাকে সাহায্য করেছ। আমার ভুল শুধরে দিয়েছ। শুভ জন্মদিন। এ ভাবেই পাশে থেকো।’’