এইচ এস প্রণয় স্ট্রেট গেমে উড়িয়ে দিলেন টমি সুগিয়ার্তোকে।
চার বছর আগে কমনওয়েলথ গেমসের ব্যাডমিন্টনে পুরুষদের সিঙ্গলসে সোনা জিতেছিলেন যিনি, সেই পারুপল্লি কাশ্যপ খারাপ র্যাঙ্কিংয়ের জন্য এ বার দলেই নেই। র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থেকে কাশ্যপ-কে টপকে যিনি ভারতীয় দলে ঢুকে গিয়েছেন, সেই এইচ এস প্রণয় (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ১২) জানেন, তাঁর ওপর প্রত্যাশার চাপটা এ বার একটু বেশিই থাকবে। সেই চাপ এবং ক্রমাগত চোট-আঘাতের সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য অন্য এক ক্রীড়াবিদকে সামনে রেখে এগোচ্ছেন প্রণয়। তিনি— বিরাট কোহালি।
অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেওয়ার আগে আনন্দবাজার-কে ফোনে প্রণয় বলছিলেন, ‘‘ফিটনেস এখন যে কোনও খেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক জন খেলোয়াড়ের জীবন বদলে দিতে পারে সঠিক ফিটনেস রুটিন। নিজের ক্ষেত্রে সেটা ভাল মতো বুঝতে পেরেছি।’’ তাঁর প্রতিভা নিয়ে কোনও রকম সংশয় কেউ কোনও দিন প্রকাশ করেননি। ফিটনেস মাঝে মাঝেই ভুগিয়েছে প্রণয়-কে। কিন্তু গত ৭-৮ মাস ধরে নিজের খেলাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তিনি। হারিয়েছেন তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর, মালয়েশিয়ার লি চং-কে। যিনি কমনওয়েলথেও আছেন। সদ্য সমাপ্ত অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়নশিপে উঠেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালেও। যা এ বারের টুর্নামেন্টে ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্স। প্রণয় স্বীকার করে নিচ্ছেন, ফিটনেসের ওপর জোর দেওয়ার ফলটা এখন তাঁর খেলায় ধরা পড়ছে।
আর ফিটনেসের ওপর এই বাড়তি জোর দেওয়ার প্রেরণাটা তিনি পেয়েছেন বিরাট কোহালি-কে দেখেই। ‘‘বিরাট বুঝিয়ে দিয়েছে আধুনিক খেলাধুলায় ফিটনেস কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ফিটনেস খেলোয়াড় জীবনের আয়ু অনেক বাড়িয়ে দেবে। ওকে দেখে আমি সেটাই বুঝেছি। বিরাটের ফিটনেস মন্ত্র আমাদের সবার কাছেই বড় প্রেরণা। শুধু খেলোয়াড়দের জন্যই নয়, বিরাট নতুন প্রজন্মকে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে ফিটনেস কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’’
একে পেশাদার সার্কিটের ঠাসা সূচি, তার পরে কয়েক মাসের ব্যবধানে কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস। কী ভাবে সামলাবেন এই চাপ? প্রণয় বলছেন, ‘‘এখন আমাদের প্রচণ্ড ঠাসা সূচির মধ্যে খেলতে হয়। তাই তো ফিটনেসের ওপর এত জোর দিচ্ছি। কোর্টের বাইরের ফিটনেস যাতে কোর্টে প্রভাব ফেলে, তার ওপর জোর দিচ্ছি। যাতে ভবিষ্যতে কোনও দিন আক্ষেপ করতে না হয় যে, ফিট ছিলাম না বলে একটা পর্যায়ের পরে আর পারিনি। আশা করব, আমার শরীর কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসের ধকল নিতে পারবে।’’
কমনওয়েলথে চিন, জাপানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা না থাকায় ভারতের বেশ কিছু পদক জয়ের ভাল সম্ভাবনা রয়েছে। কাদের আপনার মুখ্য প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন? প্রণয়ের বক্তব্য, ‘‘আমি মনে করি কমনওয়েলথের মতো প্রতিযোগিতা অনামী প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হয়। ওরা যে কোনও সময় অঘটন ঘটাতে পারে। তা ছাড়া লি চং আছে, রাজীব ইউসেফ (ইংল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়) আছে, শ্রীকান্তও আছে।’’
শেষ যে নামটা বললেন, তাঁর সঙ্গে কিন্তু কমনওয়েলথ গেমসে পদকের লড়াইয়ে মুখোমুখি পড়ে যেতে পারেন প্রণয়। ভারতীয় দর্শকদের কাছে যে ম্যাচ আলাদা মেজাজ নিয়ে আসবে। এইচ এস প্রণয় বনাম কিদম্বি শ্রীকান্ত (বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২)। সে রকম হলে কী হবে? প্রণয় বলছেন, ‘‘আমরা পরস্পরের মুখোমুখি পড়ে যেতেই পারি। শ্রীকান্ত খুবই ভাল খেলোয়াড়। আমরা এক সঙ্গে অনুশীলন করি। আমাদের মধ্যে গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটা উপভোগ্য ম্যাচ হয়েছে। আমি খুব খারাপও খেলিনি! আমরা এ বারেও মুখোমুখি হলে ভারতীয় দর্শকেরা সত্যিই মজা পাবেন।’’
গত চার মাসে প্রিমিয়ার ব্যাডমিন্টন লিগ এবং তার আগে জাতীয় ব্যাডমিন্টনে দু’বার মুখোমুখি হয়েছেন দুই তারকা। দু’বারই কিন্তু বিশ্বের দুই নম্বর খেলোয়াড়কে হারিয়েছিলেন প্রণয়। তিনি কোনও স্বপ্ন দেখেন না, বলছিলেন প্রণয়। কিন্তু তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেতেই পারেন ভারতীয় সমর্থকেরা।
কমনওয়েলথ গেমস: শুরু ৪ এপ্রিল থেকে। দেখা যাবে সোনি সিক্স, সোনি টেন ২, সোনি টেন ৩ চ্যানেলে।