ওভারপ্রতি দশ রানেরও বেশি তাড়া করার চ্যালেঞ্জ ছিল অকল্যান্ডে। বিরাট কোহালির দল এক ওভার বাকি থাকতে ছয় উইকেটে পৌঁছে গিয়েছে লক্ষ্যে। জেটল্যাগের ক্লান্তি ছাপিয়ে সিরিজে ১-০ এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে ছিল পেশাদারিত্বেরই ছোঁয়া। তবু এই জয়ের সুবাসের মধ্যেও রয়েছে বেশ কিছু উদ্বেগ। যা চিন্তায় রাখছে ভারতীয় শিবিরকে।
যেমন জশপ্রীত বুমরার চোট। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ডেলিভারির পর ফলো থ্রু-তে বাঁ পা মচকে গিয়েছিল তাঁর। রিপ্লেতে দেখা যায় যে বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল তাঁর পা। যন্ত্রণায় পিচের একপাশে বসে পড়েন তিনি।
সেই সময় ভারতীয় ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষাই বলে দিচ্ছিল যে, দলের কাছে বুমরার গুরুত্ব কতটা। প্রত্যেকে উদ্বিগ্ন ভাবে চলে আসেন তাঁর কাছে। ড্রেসিংরুম থেকে আসেন ফিজিয়ো। শুরু হয় পরিচর্যা। খানিক ক্ষণ পরই অবশ্য উঠে দাঁড়ান তিনি। ওভারের বাকি চার বল করেও দেন। তবে তা সাময়িক স্বস্তি দিলেও চিন্তা কমছে না।
পরে স্ক্যান হয় বুমরার। ভারতীয় দল আশঙ্কায় রয়েছে তাঁর কোনও ‘হেয়ারলাইন ফ্র্যাকচার’ হবে না তো! সদ্য চোট সারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। ডেথ বোলিংয়ে তাঁকেই এখন বিশ্বের সেরা বলে চিহ্নিত করছে ক্রিকেটবিশ্ব।
শুক্রবারও তো চার ওভারে মাত্র ৩১ রান দিয়েছেন বুমরা। ইকনমি রেট মাত্র ৭.৭৫! শেষ তিন ওভারে নিউজিল্যান্ড তুলেছিল মাত্র ২৫ রান। তার মধ্যে ১৮তম ও ২০তম ওভারে বুমরা দেন যথাক্রমে চার ও ১২ রান। রস টেলর পরে স্বীকারও করে নেন যে বুমরাকে খেলা মোটেই সহজ ছিল না।
প্রশ্ন হচ্ছে, শুক্রবারের পর রবিবারেও কি বুমরাকে খেলানো উচিত। নাকি, ভবিষ্যতের কথা ভেবে ঝুঁকি নয়, সতর্কই থাকা উচিত নেতা কোহালির? পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ রয়েছে। রয়েছে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও। তাই বিশ্রাম দেওয়াই হয়ত উচিত হবে। কিন্তু তা হলে ভারতের বোলিংকে সাদামাটা দেখাবে যে!
বুমরার গুরুত্ব আরও বাড়ছে কারণ, ইডেন পার্কে শুক্রবার শার্দুল ঠাকুর ও মহম্মদ শামিকে বেধড়ক পিটিয়েছেন কিউয়িরা। এর মধ্যে শার্দুল নতুন বলে শুরু করেছিলেন। এবং প্রথম স্পেলে দুই ওভারে তিনি দেন ৩০ রান। বাধ্য হয়ে তাঁকে সরিয়ে নেন অধিনায়ক বিরাট কোহালি।
পরে আবার এক ওভারের জন্য আসেন শার্দুল। তাতে এক উইকেট নিলেও দেন ১৪ রান! শেষ পর্যন্ত তিন ওভারে দেন ৪৪ রান। নেন এক উইকেট। তাঁর ইকনমি রেট ১৪.৬৬। যা অবশ্যই উদ্বেগের। এর আগে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দুই টি-টোয়েন্টিতে তিনি কিন্তু নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। রান খরচও করেননি তেমন।
শামির দশাও শুক্রবার শার্দুলের মতোই ছিল। প্রথম স্পেলে দুই ওভারে শামি দিয়েছিলেন ২২ রান। পরের দুই ওভারে দেন আরও ৩১ রান। শামির চার ওভারে ওঠে ৫৩ রান। ইকনমি রেট ১৩.২৫। এবং তিনি কোনও উইকেটও নেননি। বুমরা যদি খেলতে না পারেন রবিবার, তবে শামিকেই কিন্তু বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।
টি-টোয়েন্টিতে হালফিল তেমন ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছেন না রোহিত শর্মা। এই ফরম্যাটে শুক্রবারের ধরে তাঁর শেষ চার ইনিংসের রান এমন—৭, ৭১, ১৫, ৮। ফেলে আসা বছর দারুণ কেটেছিল হিটম্যানের। নতুন বছরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বেঙ্গালুরুতে একদিনের ক্রিকেটে সেঞ্চুরিও করেছেন। কিন্তু কুড়ি ওভারের ক্রিকেটেও তাঁকে মেজাজে চাইছে দল।
শিবম দুবে শুক্রবার নায়ক হয়ে ওঠার সেরা সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তা কাজে লাগাতে পারেননি। পাঁচ নম্বরে নেমে নয় বলে ১৩ রান করে ফেরেন। একটা ছয় ও একটা চার মারলেও লম্বা ইনিংস খেলার মঞ্চ হেলায় নষ্ট করেছেন তিনি। এমন সুযোগ কিন্তু রোজ পাবেন না। শিবম অবশ্য বল হাতে তিন ওভারে ২৪ রানে নেন এক উইকেট।
শুক্রবার বিরাট কোহালি ও লোকেশ রাহুলের মধ্যে রান নেওয়ার সময় বোঝাপড়ার অভাব স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। নিউজিল্যান্ড ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় যদিও একই ডেলিভারিতে পর পর দু’বার রান আউটের সুযোগ নষ্ট হয়। এ দিকে সজাগ থাকতে হবে ভারতীয়দের। কোহালির ক্যাচও কিন্তু পড়েছে। যা ধরলে ম্যাচের চেহারা পাল্টে যেতেও পারত।
হাতে আসা ক্যাচ হয়ত পড়েনি, তবু ভারতীয় ফিল্ডিংও যে নিখুঁত হয়েছে, এমন কিন্তু নয়। বল গলেছে, ওভারথ্রো হয়েছে। একবার তো বাউন্ডারি লাইন থেকে এগিয়ে আসার জন্য যুজবেন্দ্র চহালের মাথার উপর দিয়ে চলেও গিয়েছে ক্যাচ। নিউজিল্যান্ডের মাঠের কোণগুলোর সঙ্গে দ্রুত পরিচিত হওয়াও জরুরি ভারতীয় ফিল্ডারদের।