ছবি: রয়টার্স
গার্ড মুলারের এক মরসুমে ৪০টি গোলের নজির তিনি স্পর্শ করেছেন। রবার্ট লেয়নডস্কি কি পারবেন জার্মান কিংবদন্তির রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়তে? বিশ্বের কয়েকটি নির্বাচিত সংবাদ মাধ্যমের সামনে খোলামেলা মেজাজে পাওয়া গেল বিশ্বকাপজয়ী জার্মান ত্রয়ী— লোথার ম্যাথাউজ়, য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান ও ফিলিপ লাম-কে। বাংলা থেকে ছিল একমাত্র আনন্দবাজার।
প্রশ্ন: লেয়নডস্কি পারবেন লক্ষ্যে পৌঁছতে?
ম্যাথাউজ়: কেন পারবে না? আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী লেয়নডস্কিকে নিয়ে। বিশ্বাস করি, গার্ড মুলারের রেকর্ড ভাঙার ক্ষমতা একমাত্র ওরই রয়েছে।
য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান: অভিনন্দন রবার্ট লেয়নডস্কি। আরও এক বার ও নিজেকে প্রমাণ করল। গত মরসুমে ৩৪টি গোল করেছিল লেয়নডস্কি। এই মরসুমে ইতিমধ্যেই ৪০ গোল করে ছুঁয়ে ফেলেছে কিংবদন্তি গার্ড মুলারের নজিরকে। আমি মনে করি, জার্মান কিংবদন্তির আদর্শ উত্তরসূরি লেয়নডস্কিই। নতুন কীর্তি গড়ার জন্য আর একটি গোল দরকার। ও যে রকম ছন্দে রয়েছে, মনে হয় না কেউ আটকাতে পারবে। গার্ড মুলারের মতো কিংবদন্তির নজির ভাঙার চেয়ে সেরা পুরস্কার এক জন স্ট্রাইকারের কাছে আর কী হতে পারে? ১৯৭২ সালে এক মরসুমে ৪০টি গোল করে গার্ড মুলার যখন নজির গড়েছিলেন, আমার বয়স তখন ছিল মাত্র সাত বছর। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালেও গোল করেছিলেন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার। এখনও মনে আছে, জার্মানির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর শুনে আমরা রাস্তায় নেমে ফুটবল খেলতে শুরু করেছিলাম। গোল করার পরে নিজেকে গার্ড মুলার ভাবছিলাম। পরবর্তীকালে জার্মান কিংবদন্তির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। বায়ার্ন মিউনিখে কোচিং করানোর সময় ওঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। অসাধারণ মানুষ। ঈর্ষনীয় ব্যক্তিত্ব। গার্ড মুলার বিশ্বের সব স্ট্রাইকারদের কাছেই আদর্শ। আমি তো মনে করি, এখন লেয়নডস্কিও নিজেকে সেই উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
ফিলিপ লাম: বায়ার্ন মিউনিখে আমার সতীর্থ ছিল লেয়নডস্কি। তাই একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি। শনিবার ফ্রেইবার্গের বিরুদ্ধে ম্যাচটা একটু উৎকণ্ঠা নিয়েই দেখতে বসেছিলাম। মনেপ্রাণে চাইছিলাম, এই ম্যাচেই যেন দুটি গোল করে কিংবদন্তি গার্ড মুলারকে টপকে যায় লেয়নডস্কি। দ্বিতীয়ত, যেন কার্ড না দেখে। গার্ড মুলারকে টপকে যেতে না পারলেও নজির স্পর্শ করেছে। আরও আনন্দ হচ্ছে কার্ড না দেখায়। আমি নিশ্চিত, আউগসবার্গের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচেই লেয়নডস্কি লক্ষ্য পূরণে সফল হবে।
প্র: লেয়নডস্কির সাফল্যের রহস্য কী?
ম্যাথাউজ়: গার্ড মুলারের পরে এত ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার আমি দেখিনি। প্রতি মরসুমে গড়ে ২০-৩০টি গোল করা সোজা ব্যাপার নয় । গার্ড মুলারের মতো লেয়নডস্কিও সেই কাজটা নিখুঁত ভাবে করে যাচ্ছে। তবে ওর এই সাফল্যের নেপথ্যে বায়ার্ন মিউনিখ ম্যানেজার হ্যান্সি ফ্লিকেরও অবদান কম নয় বলে আমি মনে করি। কারণ, গত ১৮ মাসে ওর আক্রণাত্মক রণনীতি লেয়নডস্কির কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে।
ক্লিন্সম্যান: লেয়নডস্কির খিদে মারাত্মক। সব চেয়ে ইতিবাচক দিক হল, ও কখনওই একটা গোল করে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়ে না। সব সময়ই পরের গোলটা করার জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপায়। এই মানসিকতাই লেয়নডস্কিকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে গিয়েছে।
ফিলিপ লাম: গোল করার জন্য সব সময় ছটফট করে লেয়নডস্কি। অসম্ভব লড়াকু। কখনও হতাশ হয়ে পড়তে দেখিনি ওকে।
প্র: বায়ার্ন স্ট্রাইকারের বিশেষত্ব কী?
ম্যাথাউজ়: সম্পূর্ণ ফুটবলার বলতে যা বোঝায়, লেয়নডস্কি তাই। ও শুধু বিপক্ষের গোলের সামনেই ভয়ঙ্কর নয়, খেলাও তৈরি করতে দক্ষ। শারীরিক ভাবে দারুণ শক্তিশালী। দুর্দান্ত গতি। লেয়নডস্কির সব চেয়ে বড় গুণ, খেলার মধ্যে ভুল প্রায় করেই না। অসম্ভব নিখুঁত ফুটবল খেলতে পারে। এই কারণেই ফিফা ওকে বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত করেছে। পোলান্ডের হয়ে আসন্ন ইউরো কাপেও যদি লেয়নডস্কি এই ছন্দ বজায় রাখে, আমি নিশ্চিত টানা দ্বিতীয় বার ওর ফিফার বর্ষসেরা হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। এই বয়সেও লেয়নডস্কির উপরে ক্লাব ও জাতীয় দল পুরোপুরি নির্ভর করছে। এক জন ফুটবলারের কাছে এর চেয়ে সেরা প্রাপ্তি আর কিছু হতে পারে না। ওর মধ্যে উন্নতি করার অসম্ভব তাগিদ রয়েছে। তাই শুধু গোলের সংখ্যা দিয়ে লেয়নডস্কিকে বিচার করলে চলবে না। সামগ্রিক ভাবে দেখতে হবে। ও সকলের কাছে উদাহরণ। সামনে থেকে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। লেয়নডস্কিকে যত দেখি, তত মুগ্ধ হয়ে যাই। বায়ার্নকে ধন্যবাদ দিতে চাই, ওকে ধরে রাখতে
পারার জন্য।
ক্লিন্সম্যান: এক জন ভাল যোদ্ধার অস্ত্রাগারে সব পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য অস্ত্র থাকে। লেয়নডস্কিরও তা রয়েছে। গোল করার জন্য যা যা প্রয়োজন, সব ও করতে পারে। দু’পায়েই গোল করার ক্ষমতা রয়েছে। দুর্দান্ত হেড করতে পারে। ফ্রি-কিক, পেনাল্টিও অসাধারণ মারে। লেয়নডস্কি শুধু গোলই করে না, নেমে এসে রক্ষণকেও সাহায্য করে। দলের প্রয়োজনে যে কোনও জায়গায় দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। সম্পূর্ণ ফুটবলার। তবে গার্ড মুলারের সঙ্গে লেয়নডস্কির তুলনা করাটা ঠিক নয় বলেই আমি মনে করি। দু’জনের খেলার ধরন আলাদা। বিপক্ষের বক্সে গার্ড মুলার ছিলেন ভয়ঙ্কর। বল কোথায় এসে পড়বে, তা বোঝার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল ওঁর। গার্ড মুলারের কিছুটা ছায়া দেখা যায় থোমাস মুলারের খেলায়। আমি মনে করি, লেয়নডস্কি অনেক বেশি আক্রমণাত্মক। অনায়াসে বিপক্ষের ফুটবলারদের কাটাতে পারে। একটা জায়গায় দু’জনের দারুণ মিল। গার্ড মুলারের মতো লেয়নডস্কির গোল করার আশ্চর্য ক্ষমতা।
ফিলিপ লাম: বরুসিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বায়ার্নে যোগ দেওয়ার পরেই জীবন বদলে যায় লেয়নডস্কির। এতটাই নিখুঁত খেলে যে, বিশ্লেষণ করতে বসলে কোনও ভুল খুঁজে বার করা যায় না। নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। ও আমার কাছে শুধু এক জন দুর্ধর্ষ স্ট্রাইকার নয়, শিল্পীও।