সংশয়: হ্যারি না রজার, ফাইনালে দুই তারকা উঠলে কার দিকে চোখ থাকবে ক্রীড়াপ্রেমীদের? ছবি: রয়টার্স
রজার ফেডেরার বনাম রাফায়েল নাদাল। টেনিস বিশ্বের এক বনাম দুই। উইম্বলডনের ফাইনালে মুখোমুখি দুই মহাতারকা। কে না চায় এমন মহাকাব্যিক ফাইনালের সাক্ষী থাকতে!
কিন্তু সত্যিই যদি এ বারের উইম্বলডনের ফাইনালে ফেডেরার-নাদাল দ্বৈরথ হয়, তা হলে ক্রীড়াপ্রেমীরা সেই লড়াই পুরোটা উপভোগ করার সুযোগ পাবেন তো? সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। কারণ বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং উইম্বলডন ফাইনাল যে একই দিনে। ১৫ জুলাই। তাই দাবি উঠেছিল, এ বছর অন্তত ঐতিহ্য রক্ষার কঠোর জায়গা থেকে সরে আসুক অল ইংল্যান্ড ক্লাব। এগিয়ে বা পিছিয়ে আনা হোক উইম্বলডন ফাইনালের সময়। যাতে ক্রীড়াপ্রেমীরা দুটো ফাইনালই উপভোগ করার সুযোগ পান।
কিন্তু এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে অল ইংল্যান্ড ক্লাব। বিশ্বকাপের ফাইনালের জন্য উইম্বলডনের পুরুষদের ফাইনালের সময় পিছোচ্ছে না। জানিয়ে দিয়েছে তারা।
রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই এই আশঙ্কা ছিল। তখন মনে করা হয়েছিল শেষ পর্যন্ত হয়তো সিদ্ধান্ত ফের ভেবে দেখবেন উইম্বলডন কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে ইংল্যান্ড যত এগোতে থাকে বিশ্বকাপে তত পুরুষদের ফাইনালের সময় পিছোনোর চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু ঐতিহ্য রক্ষায় অনড় অল ইংল্যান্ড ক্লাব। তাই স্থানীয় সময় দুপুর দুটোতেই (ভারতীয় সময় সন্ধে ৬.৩০) ফাইনাল হচ্ছে জানিয়ে দিয়েছে তারা। যার ঠিক দু’ঘণ্টা পরেই বিশ্বকাপের ফাইনাল। অর্থাৎ দু’ঘণ্টার মধ্যে যদি ফাইনাল শেষ না হয়, তা হলে গোটা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকে তো বটেই খোদ ইংল্যান্ডেই হয়তো অনেক দর্শক উইম্বলডন থেকে সরে এসে ফুটবল বিশ্বকাপে ডুবে যাবেন।
যদি না দু’ঘণ্টার মধ্যে ফাইনাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু গত ২০ বছরে পুরুষদের ফাইনাল দু’ঘণ্টার মধ্যে শেষ হওয়ার নজির বিরল। যা দেখা গিয়েছে মাত্র দু’বার।
শুধু গোটা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীরাই নয়, ইংল্যান্ড যদি ক্রোয়েশিয়াকে বুধবার সেমিফাইনালে হারায় তা হলে ১৯৬৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে প্রথম বার বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠবেন হ্যারি কেনরা। যে দিকে চোখ এখন গোটা ইংল্যান্ডেরও।
কিন্তু অল ইংল্যান্ড ক্লাবের চিফ এক্সিকিউটিভ রিচার্ড লুইস দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের চাপেও পিছু হটছেন না। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘দুপুর দুটোতেই ফাইনাল শুরু করার সিদ্ধান্তটা একান্ত ভাবে আমাদের। শুধু এ বারই নয়। পরের বছরও একই সময় ফাইনাল শুরু হবে।’’ তিনি আরও জানিয়ে দিয়েছেন, বুধবারের সেমিফাইনাল বা রবিবারের ফাইনাল উইম্বলডনের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। যে জায়ান্ট স্ক্রিন রয়েছে ১ নম্বর কোর্টের এক পাশে।
গত শনিবার ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনালে সুইডেনকে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠে। যা নিয়ে লুইস বলেন, ‘‘শনিবার উইম্বলডনের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় দিন ছিল। দারুণ কয়েকটা টেনিস ম্যাচ তো হয়েছেই। পাশাপাশি ঐতিহাসিক ফুটবল ম্যাচও চলছিল। এখনকার উন্নত প্রযুক্তিকে ধন্যবাদ দিতে হবে। উইম্বলডনে দর্শকরা মোবাইলে ফুটবল ম্যাচ নিয়ে খোঁজখবর রাখছিল। আশপাশের দর্শকদের বিরক্ত না করেই।’’ তার দাবি দুটো ম্যাচ এক সঙ্গে চললেও কোনও সমস্যা হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘‘কখন ইংল্যান্ড গোল করছে সবাই খবর পেয়ে যাচ্ছিল। আমরা টেনিস উপভোগ করার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়েছে এমন কোনও অভিযোগ পাইনি। আমি নিশ্চিত বুধবারও তেমনই হবে এবং আশা করি রবিবারেও তাই। উইম্বলডনের বিরুদ্ধে গত কয়েক দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে এত দিন পরে গ্যারেথ সউথগেটের কোচিংয়ে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার পথে থাকলেও অল ইংল্যান্ড ক্লাবের সমর্থন মিলছে না। যার উত্তরে লুইস বলেছেন, ‘‘সাধারণ মানুষের জন্য আমাদের বেশ শক্তিশালী পাবলিক ওয়াই-ফাই সিস্টেম রয়েছে। শনিবার যা দারুণ ভাবে কাজ করেছে। এতেই বোঝা যায় আমরা বিশ্বকাপকে সমর্থন করছি। আমরা টেনিস টুর্নামেন্ট সংগঠক হলেও মাথায় রেখেছি পাশাপাশি আরও একটা বিশেষ টুর্নামেন্টও চলছে।’’
বরাবর উইম্বলডন শুরু হত জুনের শেষের দিকে। ক্লে-কোর্ট মরসুম শেষ হওয়ার দু’সপ্তাহ পরে। কিন্তু চার বছর আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঘাসের কোর্টের মরসুমের সময় আরও বাড়ানো হবে। যাতে ক্লে-কোর্ট মরসুম শেষ হওয়ার পরে আরও সময় পান টেনিস খেলোয়াড়রা উইম্বলডনের প্রস্তুতির জন্য। তাই পিছিয়ে যায় উইম্বলডন শুরু হওয়ার সময়। এ বছর যেমন উইম্বলডন শুরু হয়েছে ২ জুলাই।
তাই ১৫ জুলাই এখন ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকটা শ্যাম রাখি না কূল রাখির মতোই!