নিন্দুক: জোকারের নয়া সার্ভিস অপছন্দ প্যাট্রিক ম্যাকেনরোর।
বলটা শূন্যে ছুড়ে দিয়ে কনুইটা পিছনে টেনে আনলেন। তার পর ডান হাতটা উপরে তুলে সার্ভ করলেন। আর তখনই বোঝা গেল পরিবর্তনটা। কনুইটা আর আগের মতো অত পিছনে টেনে আনছেন না। ‘আর্ম মুভমেন্ট’-এর গতিও কমে গিয়েছে অনেকটা। চট করে দেখলে মনে হবে, স্লো মোশনে সার্ভ করছেন।
এই হল নতুন নোভাক জকোভিচ। চোট থেকে ফিরে এসে প্রত্যাবর্তনের রাস্তায় যিনি হাতিয়ার করছেন এই নতুন সার্ভিসকে। লক্ষ্য একটাই, চোট পাওয়া কনুইয়ের উপর যাতে বাড়তি কোনও চাপ না পড়ে। সদ্য সমাপ্ত কুইয়ং ক্লাসিক প্রদর্শনী টুর্নামেন্টে প্রথম এই সার্ভিস ব্যবহার করতে দেখা যায় জকোভিচকে। টেনিস সার্কিটে যিনি পরিচিত ‘জোকার’ নামে।
কিন্তু জোকারের এই সার্ভিস তাঁর প্রত্যাবর্তনের রাস্তায় কতটা সাহায্য করতে পারবে ৩০ বছর বয়সি প্রাক্তন এক নম্বরকে? নতুন এই সার্ভিস দেখার পরে সবাই কিন্তু আশাবাদী হতে পারছেন না। এঁদের মধ্যে এক জন প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন সেমিফাইনালিস্ট ও ইএসপিএন টেনিস বিশ্লেষক প্যাট্রিক ম্যাকেনরো। জন ম্যাকেনরোর ছোট ভাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোবাইলে কথা বলার সময় প্রশ্ন তুলে দিলেন জকোভিচের নতুন এই সার্ভিস নিয়ে।
জকোভিচের নতুন যে সার্ভিস নিয়ে বিতর্ক টেনিসবিশ্বে
কোনও রকম রাখঢাক না করে জুনিয়র ম্যাকেনরো বলছেন, ‘‘জকোভিচের এই সার্ভিসটা আমি দেখেছি। কনুইকে সামলাতেই এই নতুন সার্ভিসটা করছে জকোভিচ। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়।’’ কী সমস্যা, সেটাও ব্যাখ্যা করলেন প্যাট্রিক। ‘‘গ্র্যান্ড স্ল্যামটা কোনও নতুন স্ট্রোক পরীক্ষা করার জায়গা নয়। জকোভিচের উচিত ছিল, কয়েকটা টুর্নামেন্টে নতুন স্ট্রোক নিয়ে পরীক্ষা চালানো। তার পর গ্র্যান্ড স্ল্যামের মতো টুর্নামেন্টে নামা। দেখতে হবে, এই সার্ভিসটা নিয়ে কত দূর এগোতে পারে জকোভিচ।’’ কুইয়ং ক্লাসিকে জকোভিচ এই সার্ভিসের সাহায্যে বিশ্বের পাঁচ নম্বর ডমিনিক থিয়েমকে হারালেও সেটা ছিল নিছকই একটা প্রদর্শনী টুর্নামেন্ট। যার বিশেষ নম্বর নেই ম্যাকেনরোর কাছে।
প্যাট্রিক মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এর আগেও নিজের সার্ভ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন জকোভিচ। ‘‘অতীতে বেশ কয়েক বার এ ভাবে সার্ভিসে বদল এনেছিল জকোভিচ। আমার মনে আছে, এক বার র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বর থাকার সময় ওর সার্ভিস নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তখন কিছু রদ বদল আনে সার্ভিসে। সেখান থেকে এক নম্বরও হয়েছিল। এ বার দেখা যাক কী হয়,’’ বলছেন প্যাট্রিক।
তাঁর কাছে এ বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফেভারিট কে? কোনও রকম দ্বিধা না করে প্যাট্রিক এক জনেরই নাম নিচ্ছেন। তিনি রজার ফেডেরার। কেন ফেডেরারকে এগিয়ে রাখছেন? প্যাট্রিক তুলে আনছেন চলতি বছরের হপম্যান কাপের কথা। ‘‘হপম্যান কাপে ফেডেরারের খেলার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল, দারুণ ক্ষুধার্ত। বয়স যেন আরও কমে গিয়েছে। আলেক্সান্ডার জেরেভের বিরুদ্ধে ম্যাচে জেতার জন্য ও এতটাই মরিয়া ছিল যে, প্রথম গেমটা মাত্র ৫৮ সেকেন্ডে শেষ করে দেয়!’’ বলার সময় নিজেই যেন মোহিত হয়ে পড়েন প্যাট্রিক।
অতীতে: আগে এমনই সার্ভিস করতেন জকোভিচ। —ফাইল চিত্র।
ফেডেরারের এই স্বপ্নের প্রত্যাবর্তনের পিছনে তাঁর ট্রেনিং সূচিকে সবার আগে রাখছেন প্যাট্রিক। বলছেন, ‘‘ফেডেরার কিন্তু এই একটা ব্যাপার নিয়ে বিশেষ কথা বলতে চায় না। কিন্তু ওর এ ভাবে ফিরে আসার পিছনে ট্রেনিং একটা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। ঠিক যে ভাবে ওর শরীর নিতে পারে, সে ভাবেই ট্রেনিং সূচি হয়েছে।’’
ফেডেরারের হাতে আরও একটা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন না দেখলে যে তিনি ভীষণই অবাক হবেন, তা পরিষ্কার জন ম্যাকেনরোর ভাইয়ের কথায়। ‘‘আর কে আছে, বলতে পারেন? নাদাল চোট সারিয়ে ফিরে আসছে। লন্ডনে এটিপি ওয়ার্ল্ড ট্যুর ফাইনালসে ওকে খুব একটা সাবলীল দেখায়নি। জকোভিচকে নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। একই কথা আমি বলব, স্ট্যান ওয়ারিঙ্কা সম্পর্কেও। তা হলে আর কে বাকি থাকে বলুন?’’
তবে প্যাট্রিক স্বীকার করে নিচ্ছেন, একটা সময় তিনিও ভাবতে পারেননি ফেডেরার আবার এই জায়গায় ফিরে আসবেন। ‘‘চোট-আঘাতের সমস্যায় পড়লেও ফেডেরার পুরো ব্যাপারটা খুব ঠান্ডা মাথায় নিয়েছিল। আসলে ফেডেরার হল ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা।’’
এর পাশাপাশি প্যাট্রিক এক মার্কিন তরুণের কথা বলছেন, যিনি মেলবোর্নে অঘটন ঘটাতে পারেন। তিনি জ্যাক সক।
তবে টেনিস বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্যাট্রিকের নজর থাকবে বিশেষ একটা ব্যাপারের ওপরেই— জকোভিচের নতুন সার্ভ।