নায়ক: জয়পুরে ডাবল সেঞ্চুরি এল ঋত্বিকের ব্যাটে। ফাইল চিত্র
ক্লাব ক্রিকেটে ঝুরি ঝুরি রান করেও বাংলার রঞ্জি দলে ডাক পাননি। কিন্তু কখনও নিজমুখে সেই অভিযোগ বা অভিমানের কথা বলতে শোনা যায়নি লাজুক ছেলেটিকে। চুপচাপ ক্রিকেটটা মন দিয়ে খেলেছেন। ময়দানে অনেকে প্রশ্ন করতেন, ডাকাবুকো নয়, চুপচাপ, এমন একটা ছেলে কি উন্নতি করতে পারবে ক্রিকেটে?
রবিবার রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে বারাসাতের ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বুঝিয়ে দিলেন, ডাবল সেঞ্চুরি করার জন্য শুধু ডাকাবুকো হওয়া নয়, ধৈর্য ও বুদ্ধিরও প্রয়োজন।
জীবনের ছ’নম্বর প্রথম শ্রেণির ম্যাচেই ডাবল সেঞ্চুরি। রবিবার দিনের শেষে ২১৩ রানে অপরাজিত তিনি। ৩৫৫ বলের ইনিংসে ২৩টা চার ও একটা ছয় হাঁকান ২৫ বছরের ঋত্বিক। সারা দিন ধরে খেলার পরে জয়পুর থেকে বলেন, ‘‘চতুর্থ দিনের উইকেটে ব্যাট করাটা সোজা ছিল না। বেশ কয়েকটা ফাটল ধরেছে ক্রিজে। যেগুলোতে বল পড়লে সমস্যা হচ্ছিল।’’
আরও পড়ুন: দ্বিশতকে শেষ চারের দরজা খুলল বাংলা
আগের ম্যাচেও ইডেনে গোয়ার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে ১০২ রান করে নট আউট ছিলেন। জয়পুরে প্রথম ইনিংসে সেই ছন্দ ধরে রাখতে না পারলেও দ্বিতীয় ইনিংসে সমস্ত অভাব মিটিয়ে দেন। অভিমন্যু ঈশ্বরন ও মনোজ তিওয়ারির সঙ্গে তাঁর পার্টনারশিপই বাংলাকে ক্রমশ রঞ্জি সেমিফাইনালের দোরগোড়ায় নিয়ে চলে আসে। বলেন, ‘‘ডাবল সেঞ্চুরি করাটা বড় ব্যাপার বটেই। তবে এই রকম একটা ম্যাচে এমন ইনিংস খেলা আরও বড় ব্যাপার। সেই জন্যই এই ইনিংসটা স্মরণীয়।’’
আসলে সুদীপ চট্টোপাধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাংলার ব্যাটিং লাইন আপে তিন নম্বর জায়গাটা ফাঁকা হয়ে যায়। আর ঋত্বিকের প্রিয় জায়গা ওই তিন নম্বরই। ওখানে ঋত্বিককেই নামানোর পরামর্শ টিম ম্যানেজমেন্টকে দেন স্বয়ং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রিয় জায়গায় ব্যাট করতে নেমে বুঝিয়ে দিলেন কতটা নির্ভরযোগ্য তিনি। তবে ব্যাট করার সময় কখনও ডাবল সেঞ্চুরির কথা ভাবেননি বলে জানালেন ঋত্বিক। বলেন, ‘‘একটা জলের বিরতি থেকে আর একটা জলের বিরতি ধরে ধরে খেলে গিয়েছি আমি। নিজের রানের কথা একবারও মনে হয়নি।’’
দশ বছরে ময়দানে দুটো ক্লাবে খেলেছেন ঋত্বিক। কুমারটুলি ও ভবানীপুর। ২০১৫-১৬ মরসুমে ভবানীপুরকে লিগও এনে দেন তিনি। সে বার ১৮০০-র ওপর রান ও ৮৪ উইকেট পান। সেই পাঁচ বছর তাঁকে ক্রমশ উন্নতি করতে দেখা কোচ আবদুল মুনায়েম এ দিন বলেন, ‘‘ওর জেদটা সাঙ্ঘাতিক। সুযোগ পেলে যে ও নিজেকে প্রমাণ করবেই, তা জানতাম। অনেক আগেই ওকে রঞ্জি দলে ডাকা উচিত ছিল।’’ দাদা ঋতম চট্টোপাধ্যায়ও ক্লাব ক্রিকেটে পরিচিত মুখ। বলেন, ‘‘ওর সাড়ে চার বছর বয়স থেকে আমরা একই সঙ্গে খেলছি। আগে আমি ছিলাম ওর গাইড। এখন ও আমার গাইড। খুব বুদ্ধিমান ক্রিকেটার।’’ আট-ন’বছর বয়স পর্যন্ত আলেখিন চেস ক্লাবে নিয়মিত দাবা খেলতেন। দাবার বোর্ডের সেই বুদ্ধিই বোধহয় এখন ক্রিকেট মাঠে কাজে লাগাচ্ছেন এই স্পিনার-অলরাউন্ডার।