রামপুরহাট আদালত চত্বরে আনারুল। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় দলে সুযোগ পেল জেলার আদিবাসী তরুণী। জুলাইয়ে শেষ ভাগে স্পেশাল অলিম্পিক্স ইউনিফায়েড ফুটবলের আসর বসছে আমেরিকার মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে। ভারতের মহিলা ফুটবল দল ওই প্রতিযোগিতায় যোগ নেবে। সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে যাচ্ছেন সিউড়ি ১ ব্লকের কাঁটাবুনি গ্রামের আদিবাসী তরুণী পাপিয়া মুর্মু।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি স্পেশ্যাল অলিম্পিক্স ভারতের পক্ষ থেকে বীরভূমের জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে সেই কথা জানানোর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে পাপিয়ার পাসপোর্ট তৈরি রাখতে বলা হয়েছে। এই খবরে খুশি প্রশাসন। জেলা শিক্ষা আধিকারিক সুজিতকুমার রায় ও সমগ্র শিক্ষা মিশনের কোঅর্ডিনেটর শুকদেব চক্রবর্তীরা বলছেন, ‘‘জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে পাপিয়ার সুযোগ পাওয়া জেলার জন্য গর্বের। ওকে দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হবে।’’
জেলা সমগ্র শিক্ষা মিশন সূত্রে খবর, চূড়ান্ত খবর সবে এল। তবে পাপিয়া যে জাতীয় দলে খেলতে পারে সেটা বোঝা গিয়েছিল মাস দেড়েকে আগেই। যখন জাতীয় দলের ট্রায়ালে ক্যাম্পের ডাক আসে। জানা গিয়েছে, মার্চের প্রথমেই গুজরাতের গান্ধীনগরের পাঁচ দিনের ট্রায়াল ক্যাম্পে ডাক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনা ২০ তরুণী ডাক পেয়েছিলেন। রাজ্যের তিন জনের মধ্যে সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী পাপিয়াও ছিলেন। ওঁদের সঙ্গী ছিলেন অলিম্পিক্স ভারতের রাজ্য স্তরের কোচ ললিতা নাগ। জাতীয় দলে সুযোগের বিষয়ে আশাবদী ছিলেন ললিতাদেবী। সেটাই হল। তার পরেও গুজরাতে আরও পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়েছিলেন পাপিয়া।
শিক্ষার অধিকার আইন বলছে, আলাদা স্কুলে নয়, স্বাভাবিক পড়ুয়াদের সঙ্গে একত্রে পড়াশোনা করবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী পড়ুয়ারাও। প্রয়োজনে উপযুক্ত প্রশিক্ষণে শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পিছিয়ে থাকা পড়ুয়াকে স্বাভাবিক পড়ুয়াদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া হবে। এই ভাবনা থেকে ইউনিফায়েড স্পোর্টসের ভাবনা। ২০১৩ সাল থেকে এই ভাবনার উপরে দাঁড়িয়ে স্পেশাল অলিম্পিকে নানা প্রতিযোগিতা হচ্ছে।
বৌদ্ধিক বিকাশে পিছিয়ে থাকলেও ফুটবল দক্ষতায় যে কাউকে টেক্কা দিতে পারেন সিউড়ির অষ্টাদশী তরুণী। সেটাই জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার মূলে। জানা গিয়েছে, নগরী স্কুলে পড়াশোনা করার সময় পঞ্চম শ্রেণি থেকেই ফুটবল খেলা পাপিয়ার। প্রশিক্ষক ছিলেন অজয়পুর স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক মৃণাল মাল। সেই ছাত্রীর জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় আপ্লুত মৃণালবাবু।
বুধবার সকালে দেখা গেল, নগরী স্কুলের পাশের মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত পাপিয়া। তার ফাঁকে বললেন, ‘‘দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়া অনেক বড় ব্যাপার। সাধ্য মতো চেষ্টা করব।’’ মেয়ের এই সুযোগ পাওয়ায় খুশি পাপিয়ার বাবা শিবলাল মা, বালিকা মুর্মুরাও। ওঁরা বলছেন, ‘‘মেয়ের জন্য গর্বিত। আরও এগিয়ে যাক।’’