বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরার পরে সিন্ধু-বরণ। পিটিআই
বাসেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরা পি ভি সিন্ধুকে স্বাগত জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী কিরেণ রিজিজুও আলাদা করে বরণ করলেন। মোদী বলেন, সিন্ধু ‘দেশের গর্ব’। দিল্লিতে সাংবাদিকদের সামনে এসে সিন্ধুও বলে যান, ‘‘আমি খুবই খুশি। দেশের জন্য আমি গর্বিত। এই জয়টার জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয়েছে।’’
সিন্ধু অবশ্য বিজয়োৎসব কিছু করতেই উঠতে পারেননি। বললেন, ‘‘আমরা বিজয়োৎসব করার সময়ই পাইনি এখনও। বাসেলে জেতার পরে ফ্লাইট ধরার তাড়া ছিল। গত কাল রাতেই আমি দিল্লিতে এসেছি।’ উপচে পড়া সাংবাদিকের ভিড় তখন তাঁর সামনে। একের পর এক প্রশ্ন ধেয়ে আসছে। ভবিষ্যতের লক্ষ্য কী? জানতে চাইলেন এক জন। সিন্ধুর জবাব, ‘‘আমি আরও বেশি পরিশ্রম করব। আরও অনেক পদক জিতব।’’ টোকিয়ো অলিম্পিক্সের আর এক বছরও বাকি নেই। হায়দরাবাদে ফিরে ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক বৈঠকে সিন্ধু বলেন, ‘‘নিজের খেলায় আরও বৈচিত্র আনতে চাই। নতুন কিছু শটও শিখে রাখতে চাই।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী রণকৌশল এবং খেলার ধরনে পরিবর্তন আনতে হয়। সেটার উপরেই বিশেষ জোর দিচ্ছি।’’
বিশ্ব ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জাপানের নজ়োমি ওকুহারাকে ২১-৭, ২১-৭ ফলে উড়িয়ে দেন সিন্ধু। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে তাঁকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তে দেখা যায়। পুরস্কার বিতরণীর পরে জাতীয় সঙ্গীত যখন বাজছে, কেঁদে ফেলেন সিন্ধু। তা নিয়ে জিজ্ঞেস করায় এ দিন বলেন, ‘‘আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল কারণ খুব আবেগপূর্ণ একটা মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল সেই সময়। আমার কাছে চিরস্মরণীয় একটা মুহূর্ত হিসেবেই সেটা থেকে যাবে। আমার সব ভক্তের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁদের ভালবাসা এবং আশীর্বাদই আমাকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।’’ এর আগের দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে রুপো জিতে ফিরেছেন তিনি। তার আগে আরও দু’বার ব্রোঞ্জ জিতেছেন। অলিম্পিক্সে ফাইনালে গিয়ে সোনা জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ক্যারোলিনা মারিনের কাছে। তাই সব দিক দিয়েই প্রথম বার জীবনে সোনার স্বাদ পেলেন তিনি। আর প্রথম সোনার স্বাদ যে তাঁর সংকল্প বাড়িয়ে দিয়েছে, বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে গেলেন তিনি। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে চোখে জল এসে যাওয়া নিয়ে বললেন, ‘‘আমি বলে বোঝাতে পারব না, পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে কী রকম অনভূতি হচ্ছিল। শুধু এটুকু বলতে পারি, ওই মুহূর্তটা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়ে গেল। জেদ তৈরি করে দিয়ে গেল আমার মধ্যে, আরও পরিশ্রম করতে হবে। অনেক টুর্নামেন্ট জিততে হবে।’’
গোপী স্যরের কাছে কৃতজ্ঞ থাকার পাশাপাশি নতুন কোচ কিম জি হুনের কথাও বললেন সিন্ধু। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্তন খেলোয়াড় কিম এ বছরই কোচিং দলে যোগ দিয়েছেন গোপীর সুপারিশেই। ‘‘স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই), ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (বাই), ক্রীড়ামন্ত্রক এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই। ওঁরা প্রত্যেকে খুব সাহায্য করেছেন,’’ বললেন সিন্ধু। আর পাশে দাঁড়ানো গোপী স্যরের মন্তব্য, ‘‘সোনার পদকটার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু যে ক’টা পদক সিন্ধু জিতেছে, তার প্রত্যেকটিই বিশেষ কৃতিত্বের।’’ যোগ করলেন, ‘‘সিন্ধু এর আগে ব্রোঞ্জ, রুপো জিতেছে। প্রশ্নটা ছিল, সোনা জেতা নিয়ে। অলিম্পিক্সের আগে এই সোনা জয় দারুণ এক প্রাপ্তি।’’
প্রাক্তন অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন ‘স্যর’। এ বার ছাত্রীও ফিরলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে। পুল্লেলা গোপীচন্দের ব্যাডমিন্টন আশ্রমেও যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল!