ইডেনের সেই মহাক্ষণ। জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি শঙ্কর নাগ দাস
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে তখন সিএবি-র তিনতলার ডাইনিং রুমের একাংশ ঘিরে ফেলে অভিনন্দন জানাচ্ছে। এই রকম একটা প্রাক ম্যাচ অনুষ্ঠান উপহার দেওয়ার জন্য। আর সৌরভ ঘাড় নাড়ছেন বারবার, ‘‘মিস্টার বচ্চন একজনই। স্পেশ্যাল মানুষ। ওঁর কাছে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ থাকল না।’’
মাত্র দশ দিনে যে ভাবে এমন ময়দানবীয় কাণ্ড সৌরভ নামিয়েছেন তাতে অনেকেই ইডেনে বলাবলি করছিলেন ডালমিয়ার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। কিন্তু সৌরভ আপাতত মজে আছেন অমিতাভে। বললেন, ‘‘ভাবতে পারেন একটা মানুষ এই অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার জন্য নিজের পকেট থেকে তিরিশ লাখ টাকা খরচা করেছেন! নিজে ফ্লাইট ভাড়া করে এসেছেন। নিজে টিকিট কেটেছেন। নিজের পয়সায় হোটেল। আমি প্রায় ভিক্ষা করেছি, স্যর কিছু নিন। উনি বলেছেন, না ভালবাসার ডাকে এসেছি। পয়সার কোনও ব্যাপার নেই।’’
জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে অমিতাভ ঠিক মাঠ ছাড়ার মুখে সৌরভ দেখা গেল এগিয়ে গিয়ে তাঁকে কিছু বললেন। বললেন, ‘‘আমি এগিয়ে গিয়ে শুধু বললাম, স্যর আপনিই পারেন। আপনার পক্ষেই সম্ভব।’’ বৃষ্টির মাঝে অমিতাভ চলে আসেন ইডেনে রিহার্সাল করতে। সিএবি-র লোকেদের মনে হচ্ছিল যেহেতু তিনি লিপ সং করবেন বাড়তি রিহার্সালের তাঁর দরকার পড়বে না। কিন্তু অমিতাভ ফোনে সৌরভকে জানিয়ে দেন তিনি সোজা ইডেনে আসছেন। এখন হোটেলে যাবেন না। ওই বৃষ্টিভেজা মাঠে রিহার্সাল করেন।
তারপর ছেলে অভিষেককে নিয়ে ঢুকে যান সৌরভের ঘরে। সেখানে একে একে ঢোকেন পাক বোর্ড প্রধান শাহরিয়র খান। এসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসেই অভিষেককে বলেন, বাবার স্বাস্থ্যর দিকে খেয়াল রেখো। অমিতাভ তখন ঘরের এককোণে বসা। অন্য দিনের তুলনায় অনেক চুপচাপ।
কিছু পরে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সেখানে ঢুকে পড়েন ইমরান। ঘরের ছবি যেন মুহূর্তে বদলে যায়। পঁচিশ বছর বাদে তিনি আর অমিতাভ একসঙ্গে তাও ছোট একটা ঘরে। যেখানে থাকথাক ভিড় দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ভিডিও তুলছেন ইমরানের সেক্রেটারি। অমিতাভের ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার।
ইমরান ঢুকেই বলেন, ‘‘অমিতসাব আপনার কাছে আমি আজও কৃতজ্ঞ। আপনি আমার হাসপাতালের ফান্ড তোলার কাজে যে ভাবে হেল্প করেছিলেন সেটা আজও মনে আছে। আপনি আর মিক জ্যাগার একসঙ্গে।’’
অমিতাভ হাসলেন। বললেন, ‘‘কেমন আছ?’’
ইমরান বলেন, ‘‘অমিতসাব আপনি নাকি আজ পারফর্ম করছেন শুনলাম?’’
গোটা ঘর তখন নিস্তব্ধ হয়ে ওঁদের কথোপকথন শুনছে, সেখানে রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস আর ববি হাকিমও। অমিতাভ এত ভিড়ে হঠাৎই যেন নিজেকে গুটিয়ে নিলেন, ইমরান তখন মমতাকে বলছেন, ‘‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পাকিস্তানকে এমন উষ্ণ অভিনন্দন জানানোর জন্য। যেখানে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী ওই রকম বিদ্বেষমূলক কথা বলেন সেখানে আপনি আমাদের যেমন স্বাগত জানিয়েছেন, আমরা অভিভূত।’’ মমতা পাল্টা বললেন, ‘‘আপনার যখন মনে হবে আমাদের এই শহরের দরজা আপনার বা আপনাদের জন্য খোলা।’’
তিনি— অমিতাভ কিছুই বললেন না। জাতীয় সঙ্গীত পরবর্তী সময় ফিরহাদ হাকিমকে অবশ্য বলতে শোনা গেল, উনি কেন এত চুপচাপ ছিলেন এখন বুঝছি। কনসেনট্রেট করছিলেন গানের জন্য।
এই জন্যই হয়তো তিয়াত্তর বছর বয়সেও শনিবার ই়ডেনের বাইশ গজের বাইরের ম্যাচের তিনিই মহানায়ক!