নতুন বিতর্ক উস্কে রিভা স্টিনক্যাম্প হত্যা মামলায় ছ’বছরের কারাদণ্ড হল অস্কার পিস্টোরিয়াসের।
দক্ষিণ আফ্রিকার আইনে খুনের অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি পনেরো বছরের জেল। কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত প্যারালিম্পিয়ানের বিরুদ্ধে খুনের অপরাধ প্রমাণিত হলেও তাঁর ক্ষেত্রে শাস্তির মেয়াদ সর্বোচ্চ শাস্তির অর্ধেকেরও কম। যা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। প্রবল ক্ষুব্ধ দক্ষিণ আফ্রিকার একাংশ এবং স্টিনক্যাম্পের পরিবার। যাঁরা বলছেন, পাঁচ বছর জেলের প্রাথমিক শাস্তির বিরুদ্ধে নতুন আবেদন করে এত লড়াই বৃথা গেল। অনিচ্ছাকৃত হত্যার বদলে প্যারালিম্পিয়ানের খুনের অপরাধ সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও প্রায় কোনও শাস্তিই হল না তাঁর।
তীব্র প্রতিবাদ করেছে আফ্রিকান জাতীয় কংগ্রেসের মহিলা শাখা। মুখপাত্র জ্যাকি মোফোকেং বলেছেন, ‘‘আমরা অসম্ভব হতাশ। এই রায় দক্ষিণ আফ্রিকার মহিলাদের প্রতি চরম অপমান। পাঁচ বছরের জেলের বিরুদ্ধ আমরা লড়াই করলাম। তাতে জেলের মেয়াদ মাত্র এক বছর বাড়িয়ে ছয় করা হল। এটা কী হচ্ছে!’’ পিস্টোরিয়াস মামলার বিচারপতি থকোজিলে মাসিপাকে ‘‘দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারব্যবস্থার লজ্জা’’ বলতেও ছাড়েনি মহিলা সংগঠনগুলি।
হাইকোর্টের বিচারপতি মাসিপাই প্রাথমিক বিচারে পিস্টোরিয়াসের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত হত্যার রায় দিয়েছিলেন। যাতে পাঁচ বছর জেল হয় প্যারা অ্যাথলিটের এবং এক বছর জেলে খাটার পর শর্তাধীনে মুক্তি পেয়ে যান তিনি। কিন্তু স্টিনক্যাম্পের পরিবার রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেলে গত ডিসেম্বর পিস্টোরিয়াসকে খুনি সাব্যস্ত করে মাসিপার এজলাসেই নতুন বিচারের নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
যার রায় হল এ দিন। পিস্টোরিয়াস খুনি সাব্যস্ত হলেও মাসিপা একাধিক কারণ দিয়েছেন লঘু শাস্তির পক্ষে। যাতে রয়েছে হাঁটুর তলা থেকে দুই পা না থাকা পিস্টোরিয়াসের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, তাঁর গভীর মানসিক অবসাদ। সঙ্গে বিচারপতি বলেছেন, ‘‘সেই রাতে কী হয়েছিল তা নিয়ে সংবাদমাধ্যম অনেক লেখালেখি করলেও সেটাই সত্যি, এমন নয়। জনমত যা-ই হোক না কেন, বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে না। আমি মনে করি আসামির লম্বা জেলে হলে সেটা সুবিচার হবে না।’’ শাস্তি শুনে উনত্রিশ বছরের পিস্টোরিয়াস জড়িয়ে ধরেন তাঁর পরিবারকে। এর পর তাঁকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ দিনের রায়ের আগে একটা জল্পনা ছিলই যে, পিস্টোরিয়াসের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যার দিকগুলি বিচার করে তাঁকে হয়তো পুরো পনেরো বছর জেলে পাঠাবে না আদালত। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন এগারো থেকে চোদ্দো বছরের শাস্তি হতে পারে তাঁর। কিন্তু ছ’বছর কেউই ভাবতে পারেননি।