ছবি এএফপি
করোনাভাইরাসের আক্রমণে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ক্রীড়া জগৎ। এক বছরের জন্য পিছিয়ে গিয়েছে অলিম্পিক্সও। কিন্তু এই দুঃসময়েও অভাবিত ভাবে আলোর সন্ধান পাচ্ছেন বাংলার কয়েক জন তরুণী ক্রীড়াবিদ। এই বছর অলিম্পিক্স হলে হয়তো তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে যেত টোকিয়োর ছাড়পত্র পাওয়া। কিন্তু একটা বছর পিছিয়ে যাওয়ায় এই বঙ্গ কন্যাদের সামনে চলে এসেছে নতুন এক সুযোগ। এই তালিকায় আছেন ভারোত্তোলক রাখি হালদার, টিটি-র সুতীর্থা মুখোপাধ্যায় এবং শুটিংয়ের মেহুলি ঘোষ। আবার রিয়ো অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য চতুর্থ হওয়া ত্রিপুরার দীপা কর্মকারও নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পাওয়ার।
বাংলার রাখি এখন পাটিয়ালার সাইয়ে রয়েছেন। সেখান থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমার সামনে একটা ভাল সুযোগ এসেছে। যদি এ বছর অলিম্পিক্স হত, তা হলে মাত্র একটা সুযোগ থাকত নিজের র্যাঙ্কিং ভাল করার। কিন্তু এ বার আশা করছি অন্তত তিনটে প্রতিযোগিতা পাব নিজেকে প্রমাণ করার।’’ ৬৪ কিলো বিভাগের জাতীয় চ্যাম্পিয়নের সমস্যা একটাই। স্পনসরের অভাব। বলছিলেন, ‘‘আমাদের ব্যক্তিগত ডায়েট এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট জোগার করতে অনেক টাকা লাগে। নিজেকে নিংড়ে দিতে আমি তৈরি। একটু যদি সাহায্য পেতাম, তা হলে অনেক উপকার হত।’’
মেহুলির সামনেও একই ভাবে সুযোগ চলে এসেছে। এই বছর দিল্লিতে বিশ্বকাপ শুটিং বাতিল হয়ে যাওয়ার ফলে অষ্টাদশী শুটারের সামনে আর কোনও সুযোগ ছিল না নিজেকে প্রমাণ করার। কিন্তু এই একটা বছরে অনেক কিছুই হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মেহুলির প্রশিক্ষক জয়দীপ কর্মকার বলছিলেন, ‘‘আশা করব, শুটিং ফেডারেশন সামনের বছর অলিম্পিক্সের দল ঘোষণা করার আগে শুটারদের ফর্মের ব্যাপারটা মাথায় রাখবে। মেহুলি এখন খুবই ভাল ফর্মে আছে।’’ লকডাউনে গৃহবন্দি মেহুলি কিন্তু বাড়িতে থেকেই অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে কমনওয়েলথ গেমসে পদকজয়ী মেহুলি বলছিলেন, ‘‘লকডাউন উঠে গেলে যাতে কোনও ভাবে পিছিয়ে না পড়ি, সেটা মাথায় রাখছি। বাড়িতে শুটিং অনুশীলনের পাশাপাশি ফিটনেস ট্রেনিংটাও করছি।’’
টেবল টেনিসে ভারতীয় দল অলিম্পিক্সের যোগ্যতা পায়নি। কিন্তু ব্যক্তিগত ইভেন্টে এখনও অলিম্পিক্সে ছাড়পত্র পাওয়ার সুযোগ আছে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের সামনে। সুতীর্থা বলছিলেন, ‘‘টিম ইভেন্টে আমরা অল্পের জন্য যোগ্যতা পাইনি। তবে আমি বিশ্বের ২৪ নম্বর বার্নাদেত জকসকে হারিয়েছিলাম। এখন আমার সামনে একটাই লক্ষ্য। অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত ইভেন্টে যোগ্যতা পাওয়া।’’
গত মাসেই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম একশো জনের মধ্যে চলে এসেছেন সুতীর্থা (৯৫)। মানিকা বাত্রার পরে তিনিই একমাত্র ভারতীয় মেয়ে যাঁর র্যাঙ্কিং একশোর মধ্যে। সুতীর্থা বলছিলেন, ‘‘অলিম্পিক্সের ব্যক্তিগত ইভেন্টে যোগ্যতা পাওয়ার ক্ষেত্রে র্যাঙ্কিং একটা বড় ব্যাপার। আশা করছি, সব ঠিক হয়ে গেলে বেশ কিছু প্রতিযোগিতা পাব নিজের র্যাঙ্কিং ভাল করার। সেই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাই।’’
চোটের কারণে এই বছর লড়াই থেকে প্রায় ছিটকেই গিয়েছিলেন জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার। রিয়ো অলিম্পিক্সে সাড়া ফেলে দেওয়া দীপা নতুন লড়াইয়ের জন্য তৈরি হচ্ছেন। লকডাউনের মধ্যে অনলাইনে দীপা-সহ প্রায় ৬০ জিমন্যাস্টের কোচিং করাচ্ছেন বিশ্বেশ্বর নন্দী। বুধবার সেই অনলাইন ক্লাস শুরু করার আগে আগরতলা থেকে দীপার কোচ বলছিলেন, ‘‘দীপা ৯৫ শতাংশ সুস্থ হয়ে গিয়েছে। আমরা জানি না সামনে কী প্রতিযোগিতা পাব। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, নিজের সেরাটা দিতেই নামবে দীপা।’’
রাখি বা সুতীর্থার মতো মেহুলি অবশ্য এখনই অলিম্পিক্স নিয়ে ভাবতে চাইছেন না। এই শুটারের কথায়, ‘‘আমি নিজের সামনে কোনও লক্ষ্য রাখিনি এখনও। অলিম্পিক্সের ভবিষ্যৎ কী হবে, আমাদের সামনে কী সুযোগ থাকবে, সে সব কিছু জানি না। তাই ওই নিয়ে ভেবে এখন টেনশন করব না।’’
আরও পড়ুন: সচিন আউট হোক, চাইতেন না লতিফ