দিনের শেষ। রজার কিন্তু মধ্যগগনে।ছবি: এএফপি।
বয়সে দু’জনে মাস কয়েকের ছোট-বড়। তবে দু’জনই পঁয়ত্রিশ অতিক্রান্ত। একজনের প্রথম দু’রাউন্ডেই প্রতিপক্ষ ছিলেন কোয়ালিফায়ার। তবু তাঁকে জেতার পথে সাবলীল দেখায়নি। তৃতীয় রাউন্ডে দশম বাছাই সামনে পড়ায় টেনিসপণ্ডিতদের কেউ কেউ বলেছিলেন, এ বারই সত্যিকারের কঠিন সরণিতে এসে পড়লেন তিনি। কিন্তু তাঁকে দেড় ঘণ্টাতেই ধ্বংস করে তিনি প্রি-কোয়ার্টারে। অন্য জন শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছেন ন’বছর আগে। মেয়েদের সিঙ্গলসে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বয়স্ক প্লেয়ার। কিন্তু নিজের চেয়ে দশ বছরের জুনিয়রকে গোটা ম্যাচে মাত্র একটা গেম জিততে দিয়ে নিজে শেষ যোলোয় উঠে গেলেন।
তাঁরা— শুক্রবারের অস্ট্রেলীয় ওপেনের রজার ফেডেরার আর ভিনাস উইলিয়ামস। কী আশ্চর্য! দু’জনই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এখনও প্রথম কুড়ির মধ্যে। এবং একই নম্বরে। ১৭।
হাঁটুর অস্ত্রোপচারের ধাক্কায় ছ’মাস কোর্টের বাইরে থাকার পর টমাস বার্ডিচ ম্যাচ ছিল ফেডেরারের মাত্র তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিমূলক ম্যাচ। চার বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনালিস্ট, প্রাক্তন উইম্বলডন রানার্সকে এ দিন ফেডেরার হারালেন, যেমন কোনও শল্য চিকিৎসক নিখুঁত অস্ত্রোপচার করে থাকেন! ৬-২, ৬-৪, ৬-৪। চল্লিশটা উইনার মারার পাশাপাশি নিজের সার্ভিস খোয়ানো তো দূরের কথা, বিপক্ষকে একটা ব্রেক পয়েন্টের সুযোগও দেননি টেনিসের রাজা রজার। ‘‘আমি নিজেই আমার পারফরম্যান্সে অবাক!’’ বলার পর ফেডেরার ম্যাচ শেষে আরও যোগ করেন, ‘‘দুর্দান্ত সার্ভ করেছি। কোর্ট দ্রুত ছিল। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য! আগের দু’টো রাউন্ডে আমি একটু সমস্যায় পড়লেও আজকের দিনটা একেবারে আলাদা।’’ র়ড লেভার এরিনায় রাত সওয়া এগারোটায় ম্যাচ শেষ হওয়ার সময়ও গ্যালারি পরিপূর্ণ ছিল। ফেডেরার সারাক্ষণ প্রচণ্ড সমর্থন পান। পরের ম্যাচে তাঁর প্রতিপক্ষ পঞ্চম বাছাই নিশিকোরি। যে জাপানি তরুণ তাঁর শটের তীক্ষ্মতা, কোর্টে দ্রুত মুভমেন্ট ও অ্যাথলেটিসিজমের জন্য ট্যুরে বিখ্যাত। ছন্দে ফেরা ফেডেরার অবশ্য বলছেন, ‘‘মনে তো হচ্ছে, এখন আমি তৈরি। আর পিছন ফিরে দেখার ব্যাপার নেই। নিশির খেলার আমি ফ্যান। ওর ব্যাকহ্যান্ড এই মুহূর্তে হয়তো সবার সেরা। আশা করি, আমাদের একটা ভাল ম্যাচ হবে।’’
ভিনাসের সেখানে চতুর্থ রাউন্ড লড়াই সহজ। চিনের দুয়ানকে ৬-০, ৬-১ উড়িয়ে তিনি এ বার জার্মান কোয়ালিফায়ার মোনা বার্থহেলের মুখোমুখি। মেলবোর্নে ভিনাসের বেসলাইনে দাঁড়িয়ে খেলতে খেলতে আচমকা নেটে উঠে আক্রমণাত্মক স্ট্র্যাটেজিতে যুদ্ধ জেতার কায়দা দেখে তাঁকে ‘গেরিলা’ না ‘গোরিলা’ কী বলা হয়েছে টিভি কমেন্ট্রিতে তা নিয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনে জোর জল্পনা। সেই ভাষ্যকার ডাগ অল্ডারকে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ তৎক্ষণাৎ সাসপেন্ড করেছেন। কিন্তু সব মিলিয়ে তাতে ভিনাসের কোর্টে পারফরম্যান্সের ভয়ঙ্করতা যে বিন্দুমাত্র কমছে না সেটা অনস্বীকার্য। এ সবের মধ্যেই শেষ ষোলোয় উঠে পড়েছেন পুরুষ-মেয়ে দু’বিভাগের শীর্ষ বাছাইদ্বয় অ্যান্ডি মারে ও কের্বার। আর মেয়েদের ডাবলসে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে পা দিল সানিয়া-স্ট্রাইকোভা জুটি।