দাপট: তৃতীয় রাউন্ডে ওঠার পরে জোকোভিচ। বুধবার। এএফপি
বছরের পর বছর গ্র্যান্ড স্ল্যামে ছবিটা পাল্টাচ্ছে না। সেই তিরিশ পেরোনো তিন সিনিয়র খেলোয়াড়েরই দাপট দেখা যাচ্ছে। তা সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেন, ফরাসি ওপেন হোক বা উইম্বলডন। তিন তারকা মানে রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। ঘুরে ফিরে এই তিন জনেরই কারও না কারও হাতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফি উঠতে দেখা যাচ্ছে। একটা পরিসংখ্যান দেখছিলাম, গত ৬৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে ৫৩টিই জিতেছে এই তিন জন!
এ বারের উইম্বলডনেও তো প্রথম দু’দিনেই বাছাই খেলোয়াড়দের মধ্যে তরুণ তুর্কিদের তিন জনই প্রথম রাউন্ডে ছিটকে গেল— পঞ্চম বাছাই দমিনিক থিম, ষষ্ঠ বাছাই আলেকজান্ডার জেরেভ এবং সপ্তম বাছাই স্তেফানোস চিচিপাস। গত বছর জেরেভ রোম মাস্টার্স জেতার পরে অনেকে বলেছিলেন, ভবিষ্যতের তারকা এসে গিয়েছে। আমিও গত বার লিখেছিলাম জেরেভের সম্ভাবনার কথা। ছেলেটার ফোরহ্যান্ড ভাল, সার্ভিসে গতি রয়েছে। তখন মনে হয়েছিল লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারে ও। কিন্তু সেটা হল কোথায়! গত বার তৃতীয় রাউন্ডে ছিটকে গিয়েছিল উইম্বলডনে। এ বার তো বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১২৪ নম্বর জিরি ভেসেলির বিরুদ্ধে প্রথমেই হেরে গেল।
দমিনিক থিমের ব্যাপারটা অবশ্য অন্য। ও ক্লে কোর্টের খেলোয়াড়। পরপর দু’বার ফরাসি ওপেনের ফাইনালে খেললেও ঘাসের কোর্টে ও অতটা স্বচ্ছন্দ নয়। তাই ওর উইম্বলডনের প্রথম দিকে ছিটকে যাওয়াটা আমার কাছে অতটা আশ্চর্যের নয়। তবে চিচিপাস যে ভাবে হেরে গেল তাতে আমি খুব অবাক হয়েছি। ছেলেটার সার্ভিস ভাল, নেটে উঠে আসে। জানি না কী হল, ও থমাস ফাবিয়ানোর কাছে হেরে গেল। ইটালির ফাবিয়ানো কয়েক মাস আগেই ডেভিস কাপ খেলতে কলকাতায় এসেছিল। কিন্তু কোর্টে নামার সুযোগ পায়নি। রিজার্ভ বেঞ্চে ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন এই তরুণ খেলোয়াড়েরা ধারাবাহিকতা দেখাতে পারছে না? হয়তো একটা, দুটো ম্যাচে বা অন্য কোনও প্রতিযোগিতায় এই তিন জনকে হারিয়ে দিতে পারছে, কিন্তু গ্র্যান্ড স্ল্যামে সেই সাফল্যটা ধরে রাখতে পারছে না। তার কারণ কী?
আমার মতে, এই তরুণ প্রজন্মের সামনে এখন এত বেশি প্রচার এবং অর্থ উপার্জনের হাতছানি থাকে যে, তাদের খেলাটাই বোধহয় তাতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকতার এত অভাব দেখা যাচ্ছে তাই। আগে যেমন পিট সাম্প্রাসের দাপট দেখানোর সময় নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড় হিসেবে ফেডেরার উঠেছিল, পরে নাদাল এল, জোকোভিচ এল। কিন্তু সে রকম আর দেখা যাচ্ছে না এখন। টেনিসের জন্য এটা খুবই খারাপ। টেনিস দুনিয়ার এমন কোনও খেতাব নেই ফেডেরার জেতেনি। কিন্তু এখনও ফেডেরারের সাফল্যের কী খিদে! কয়েক দিন আগেই ১২ নম্বর ফরাসি ওপেন জিতেছে নাদাল। জোকোভিচ পরপর তিনটে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছে তার আগে। তাই আমার তো মনে হয় ফেডেরার-নাদাল-জোকোভিচ তিন জন আরও দু’-তিন বছর গ্র্যান্ড স্ল্যামে আধিপত্য দেখাবে। বুধবারও জোকোভিচ স্ট্রেট সেটে দ্বিতীয় রাউন্ডে জিতল ডেনিস কুলদার বিরুদ্ধে। ফল ৬-৩, ৬-২, ৬-২। ছিটকে গেল স্ট্যান ওয়ারিঙ্কা। অবাছাই রেইলি ওপেলকা পাঁচ সেটের লড়াইয়ে ছিটকে দিল তাঁকে।
তবে, এ বারের উইম্বলডনে আমার ভিনাস উইলিয়ামসকে প্রথম রাউন্ডে ছিটকে দেওয়া ১৫ বছর বয়সি স্কুলছাত্রী কোরি গফের খেলা দেখে দারুণ লেগেছে। মেয়েটার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল গতি। দুরন্ত কোর্ট কভারেজ! শুনলাম ওর বাবা বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন এবং মা ১০০ মিটার হার্ডলস দৌড়তেন ফ্লরিডায়। তাই হয়তো কোর্টে কোরি এতটা ক্ষিপ্র। তবে এখানেও ওই একটা কথাই বলার, অনেক নতুন প্রতিভাকেই উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তারা সাফল্যটা ধরে রাখতে পারছে কি না সেটাই বড় কথা!