নোভাক জোকোভিচ। — ফাইল চিত্র
কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে মাত্র এক সেট দূরে নোভাক জোকোভিচ। রবিবার হুবার্ট হুরকাজের বিরুদ্ধে চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচ দু’টি সেট খেলা হওয়ার পর রাত কার্ফুর কারণে বন্ধ করে দিতে হল। রেফারি স্থানীয় সময় রাত ১০.৩৫ নাগাদ খেলা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ রাত ১১টায় নাইট কার্ফু চালুর আগে ম্যাচ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ছিল। ম্যাচ স্থগিত রাখার সময়ে জোকোভিচ এগিয়ে ছিলেন ৭-৬, ৭-৬ গেমে।
তবে যত টুকু খেলা হল, ১৭তম বাছাই হুরকাজের প্রতিরোধের মুখে পড়লেন জোকোভিচ। হুরকাজের সার্ভিসের কোনও জবাব ছিল না তাঁর কাছে। দ্বিতীয় বাছাই জোকোভিচ প্রথম সেটে তিন বার সেট পয়েন্ট বাঁচিয়েছেন। প্রথম দুটি সেটে প্রথম সার্ভের ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য ছিলেন হুরকাজ। যখনই তিনি সমস্যায় পড়েছেন, র্যাকেট থেকে বেরিয়েছে ঘণ্টায় দুশো কিলোমিটার গতির সার্ভ।
কিন্তু রিটার্নের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন হুরকাজ। ফলে সার্ভিস ভাল থাকা সত্ত্বেও জিততে অসুবিধা হয়েছে তাঁর। সে কারণেই জোকোভিচ ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রথম সার্ভিস জিতেছেন। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্রেক পয়েন্ট কাজে লাগাতে পারেননি জোকোভিচ। পাঁচটি পেয়ে সবক’টিই হারিয়েছেন। একটি ব্যাকহ্যান্ড ড্রপ ভলি এমন মেরেছেন হুরকাজ, যেটি রিটার্ন করতে গিয়ে নেটের উপরে আছড়ে পড়েন হুরকাজ।
শেষ ১৪টি টাইব্রেকার জিতেছেন জোকোভিচ। শেষ বার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে একটি টাইব্রেকারে হেরেছিলেন। জিতলে ১৪তম উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবেন জোকোভিচ। রজার ফেডেরারের পরেই যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকবেন জিমি কোনর্সের সঙ্গে (১৪)। উইম্বলডনে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার জোকোভিচের কোনও ম্যাচের প্রথম দু’টি সেট গড়াল টাইব্রেকে।
অঘটন হল না
উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেলেন ইগা শিয়নটেক। রবিবার সেন্টার কোর্টে সুইৎজারল্যান্ডের বেলিন্ডা বেনচিচকে কঠিন লড়াইয়ে হারালেন তিনি। প্রায় হেরেই গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জিতলেন মহিলাদের এক নম্বর খেলোয়াড়। উইম্বলডনে রবিবার অঘটন হতে হতেও হল না। সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম এত কঠিন লড়াইয়ের সম্মুখীন হলেন শিয়নটেক। বেনচিচ খুব যে নামী খেলোয়াড় বা অঘটন ঘটাতে পারদর্শী তা নয়। কিন্তু স্বদেশী রজার ফেডেরারের মতোই তিনি ঘাসের কোর্টে ভাল খেলেন। শিয়নটেককে সেটাই দেখতে হল। বিশ্বের এক নম্বর হওয়ার পর এই প্রথম বার শিয়নটেকের কোনও ম্যাচের প্রথম দু’টি সেট টাইব্রেকারে গড়াল। পাশাপাশি এ বারের উইম্বলডনে এই প্রথম কোনও সেট হারালেন তিনি। শিয়নটেককে অবশ্য আগামী দিনে ভোগাতে পারে চোট। ম্যাচের আগে থেকেই তাঁকে ডান পায়ের গোড়ালির শুশ্রূষা করতে দেখা যাচ্ছিল। ম্যাচের আগে জুতো পরার সময় মোজা নামিয়ে গোড়ালিতে কিছু স্প্রে করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। প্রথম সেটে এক বার মেডিক্যাল টাইম-আউট নিয়ে কোর্টে চিকিৎসককে ডেকে শুশ্রুষা করান। প্রথম সেটে ভালই খেলেছিলেন শিয়নটেক। কিন্তু বেনচিচের অপ্রতিরোধ্য মনোভাব কিছুতেই শিয়নটেককে স্বাভাবিক ভাবে খেলতে দিচ্ছিল না। যে শটই মারছিলেন সবই বেনচিচ ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হেরে যান শিয়নটেক। দ্বিতীয় সেটেও পিছিয়ে পড়েন বেনচিচের কাছে। একটা সময় ৫-৬ পিছিয়ে পড়েন। ১২তম গেমে শিয়নটেকের সার্ভিসে ৪০-৩০ এগিয়ে গিয়েছিলেন বেনচিচ। অর্থাৎ একটি পয়েন্ট পেলেই অঘটন হয়ে যেত। সেখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন শিয়নটেক। টাইব্রেকে বেনচিচকে দাঁড়াতে দেননি।
পাঁচ সেটের লড়াইয়ে জিতলেন রুবলেভ
অনায়াসে যে ম্যাচ জেতার কথা, সেই ম্যাচ গড়াল পাঁচ সেটে। চতুর্থ সেটে দু’বার ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচাতে হল। শেষ মেশ উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন সপ্তম বাছাই আন্দ্রে রুবলেভ। ৭-৫, ৬-৩, ৬-৭, ৬-৭, ৬-৪ হারালেন আলেকজান্ডার বুবলিককে। অষ্টম বাছাই ইয়ানিক সিনার অনায়াসেই কোয়ার্টারে উঠে গেলেন। রুবলেভ কোয়ার্টারে খেলবেন নোভাক জোকোভিচ বনাম হুবার্ট হুরকাজ ম্যাচের বিজয়ীর বিরুদ্ধে। ম্যাচের বেশিরভাগ সময়েই নিয়ন্ত্রণ ছিল রুবলেভের। প্রথম দু’টি সেট খুব বেশি কষ্ট না করেই জিতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তৃতীয় সেট থেকে শুরু হয় বুবলিকের ফিরে আসার লড়াই। রুবলেভ গোটা ম্যাচে ২০টি ‘এস’ মেরেছেন। বুবলিক ৩৯টি। দুই খেলোয়াড়ের শক্তির প্রদর্শন দেখা গেল উইম্বলডনের সেন্টার কোর্টে। কিন্তু দু’টি কারণে বুবলিককে হারতে হল। প্রথমত, ম্যাচে পাঁচটি ব্রেক পয়েন্ট পেলেও একটিও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। দ্বিতীয়ত, এমন সময় ‘ডাবল ফল্ট’ করেছেন, যা ক্ষতি করেছে তাঁর। ম্যাচে মোট ১৪টি ‘ডাবল ফল্ট’ করেন। তার মধ্যে প্রথম সেটে তাঁর টানা দু’টি ‘ডাবল ফল্ট’-এর কারণে সেট হাতছাড়া হয়। পঞ্চম সেটের অষ্টম গেমে ‘ডাবল ফল্ট’ করার কারণে রুবলেভ ৫-৩ এগিয়ে যান এবং ম্যাচ জিতে নেন। তা সত্ত্বেও দুই খেলোয়াড়ের লড়াই মন জিতে নিয়েছে সমর্থকদের। তিন ঘণ্টা ১৭ মিনিটের লড়াইয়ের শেষ পয়েন্টের পর দর্শকেরা দাঁড়িয়ে দুই খেলোয়াড়কেই হাততালিতে ভরিয়ে দেন। পরে রুবলেভ বলেন, “প্রতিটা সেটে সুযোগ ছিল আমার কাছে। দু’বার ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচালাম। এক বার তো দুশো কিলোমিটার বেগে সার্ভ করেছিল। মন শক্ত করে ভাবছিলাম, চেষ্টা করতেই হবে। তার পরে যা হওয়ার হবে।”
কোয়ার্টারে সিনার
অষ্টম বাছাই ইয়ানিক সিনার সরাসরি সেটে হারিয়েছেন ড্যানিয়েল এলাহি গালানকে। ফল ৭-৬, ৬-৪, ৬-৩। প্রথম সেটে পাঁচটি ব্রেক পয়েন্ট হারান সিনার। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে টাইব্রেকারে সেট বের করে নেন। দ্বিতীয় সেটে ২-৪ পিছিয়ে থাকার সময় টানা সাতটি গেম জেতেন। তৃতীয় সেটে প্রতিপক্ষকে সুযোগ দেননি। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি রোমান সাফিউল্লিনের বিরুদ্ধে খেলবেন।
কোয়ার্টারে পেগুলা
মহিলাদের বিভাগে কোয়ার্টারে উঠেছেন জেসিকা পেগুলা। চতুর্থ রাউন্ডে লেসিয়া সুরেঙ্কোকে ৬-১, ৬-৩ গেমে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। গত তিন বছরে এই নিয়ে ছ’বার গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টারে উঠলেন তিনি। এ বার তাঁর সামনে মার্কেটা ভনড্রোউসোভা। ভিনাস ও সেরিনা উইলিয়ামস, ম্যাডিসন কিস এবং স্লোয়েন স্টিফেন্সের পর গত ২৫ বছরে পেগুলাই প্রথম আমেরিকার খেলোয়াড়, যিনি চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামেরই অন্তত কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলেন।
ভারতীয়দের বিদায়
ভারতের ডাবলস জুটি ইউকি ভামব্রি এবং সাকেথ মাইনেনি হেরে গেলেন পুরুষদের ডাবলসে। তারা ৪-৬, ৬-৪, ৪-৬ হেরেছেন স্পেনের জুটি আলেসান্দ্রো ডেভিডোভিচ ফোরিনা এবং আদ্রিয়ান মানারিনো জুটির কাছে। অন্য দিকে, মিক্সড ডাবলসে রোহন বোপান্না এবং গ্যাব্রিয়েলা ডাব্রোস্কি জুটি ৭-৬, ৩-৬, ৪-৬ হেরেছেন ইভান ডডিজ-লাতিশা চান জুটির বিরুদ্ধে।