সেরা: সাংহাই মাস্টার্স ট্রফি নিয়ে জোকোভিচের উৎসব। ছবি: রয়টার্স।
ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন নোভাক জোকোভিচ। সাংহাই মাস্টার্স ফাইনালে তাঁর সামনে কার্যত দাঁড়াতে পারলেন না ক্রোয়েশিয়ার বোরনা চোরিচ। নোভাক জিতলেন ৬-৩, ৬-৪। তাও মাত্র ৩৭ মিনিটে। সেইসঙ্গে এখানে এই নিয়ে চার বার চ্যাম্পিয়ন হলেন।
গ্রাউন্ডস্ট্রোকের চতুর প্রয়োগে ৩১ বছরের নোভাক রবিবার চোরিচের সার্ভিস ভাঙেন প্রথম সেটের ষষ্ঠ গেমে। সঙ্গে বারবার নেটে টেনে এনে ক্রোয়েশীয় প্রতিপক্ষকে বোকা বানিয়ে। প্রথম সেটে তাঁর এতটাই দাপট ছিল যে নিজের সার্ভিসে মাত্র চারটি পয়েন্ট হারান। অথচ চোরিচকে এ দিন এতটা অসহায় দেখাবে কেউ ভাবতে পারেননি!
এখানে ১৩ নম্বর বাছাই চোরিচকে নিয়ে রীতিমতো প্রত্যাশাই ছিল। বিশেষ করে সেমিফাইনালে রজার ফেডেরারকে হারানোর পরে। বাস্তবে হল ঠিক উল্টো। টেনিস বিশ্লেষকদের হতাশ করে কোনও প্রতিরোধই গড়তে পারলেন না বছর একুশের ক্রোট তারকা। নোভাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁর খেলায় বলার মতো ঘটনা একটাই। ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকা টেনিস মহাতারকাকে বার তিনেক আটকে দেওয়া।
অস্ত্রোপচারের পরে ক্রমশ জোকোভিচ যে ভাবে নিজের ছন্দ ফিরে পেয়ে সেটা ধরে রাখছেন তা বেশ বিস্ময়কর। এই মরসুমেই দু’টি গ্র্যান্ড স্ল্যামে চ্যাম্পিয়ন। উইম্বলডন ও যুক্তরাষ্ট্র ওপেন। সোমবারই এটিপি-র নতুন ক্রমতালিকা প্রকাশিত হবে। সেখানে তিনি ফেডেরারকে পিছনে ফেলে দু’নম্বরে উঠবেন। টানা ১৮ ম্যাচে জয়ী নোভাক তাড়া করছেন বিশ্বের এক নম্বর রাফায়েল নাদালকেও। টেনিস বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ভাবে খেলে যেতে পারলে তাঁর এক নম্বরে ফিরে আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার উপর নাদাল এখন হাঁটুর চোট নিয়ে বিব্রত। সে ক্ষেত্রে এক নম্বরের জায়গা সার্বিয়ান মহাতারকার কাছে মোটেই অসম্ভব কোনও লক্ষ্য নয়। সাংহাইয়েই যেমন তাঁর কাছে সেমিফাইনালে হেরে আলেকজান্ডার জেরেভ মন্তব্য করেন, ‘‘আমার তো মনে হয় এই মুহূর্তে ও টেনিস জীবনের সেরা খেলাটা খেলছে। সম্ভবত নোভাকই এখন টেনিস বিশ্বের সেরা পুরুষ খেলোয়াড়। ফেডেরার আর নাদালের জন্য যা খুব খারাপ খবর।’’
এক নম্বরে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে জোকোভিচ নিজে বলছেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পরে আমার কী অবস্থা ছিল সেটা নিজেই জানি। সেখান থেকে মরসুমের প্রায় শেষে দু’নম্বরে ফেরা স্বপ্নের মতো। এক নম্বর নিয়ে ভাবছি না। সামনে একটাই লক্ষ্য। এই ছন্দটা পরের মরসুমেও টেনে নিয়ে যাওয়া।’’ সাংহাইয়ে ট্রফি জিতে তাঁর আরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘শেষ চার মাস সত্যিই চমৎকার কাটল। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ভাল লাগছে র্যাঙ্কিংয়ে রাফার এতটা কাছে আসতে পেরেও।’’ আর পরাজিত চোরিচ বলেছেন, ‘‘আমার কোনও অভিযোগ নেই। টেনিস ইতিহাসে সর্বকালের সেরা এক জনের কাছে হেরে যাওয়ায় কোনও লজ্জা থাকতে পারে না।’’
টেনিস মরসুমের শুরুতে বিপর্যস্ত জোকোভিচকে দেখা গিয়েছে। মরসুমের শেষে কিন্তু সিংহাসনের খুব কাছে তিনি। এ হেন অবস্থায় যে কেউ উৎসব করবেন। করেছেনও নোভাক। রবিবার সাংহাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে লকাররুমে রীতিমতো নাচানাচি করেছেন টেনিসের বিস্ময় প্রতিভা।