গ্যালারিতে বল মেরে হঠাৎ মেজাজ হারালেন জকোভিচ

অ্যান্ডি মারের কাছ থেকে এক নম্বরের তাজ ফের নিজের মাথায় চড়াতে চলতি এটিপি ট্যুর ফাইনালস টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হলেই বোধহয় চলবে না নোভাক জকোভিচের! ফাইনালের আগে কোনও অঘটন না ঘটলে সামনের রবিবার সামিট যুদ্ধ বিশ্ব টেনিসের নতুন এক নম্বর মারে বনাম সদ্য দু’নম্বরে নেমে যাওয়া জকোভিচের মধ্যে হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৫৫
Share:

উত্তেজিত জকোভিচ। ছবি: রয়টার্স

অ্যান্ডি মারের কাছ থেকে এক নম্বরের তাজ ফের নিজের মাথায় চড়াতে চলতি এটিপি ট্যুর ফাইনালস টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়ন হলেই বোধহয় চলবে না নোভাক জকোভিচের! ফাইনালের আগে কোনও অঘটন না ঘটলে সামনের রবিবার সামিট যুদ্ধ বিশ্ব টেনিসের নতুন এক নম্বর মারে বনাম সদ্য দু’নম্বরে নেমে যাওয়া জকোভিচের মধ্যে হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা। কিন্তু সেই মহালড়াই জিতলেই কি জকোভিচের লক্ষ্যপূরণ হয়ে যাবে? সম্ভবত না। কারণ, তাতে তো শুধু কোর্টে জোকারের শাসন ফিরে আসবে। কিন্তু কোর্টের বাইরে? সেখানে তো এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে মারের পাশাপাশি তাঁর প্রবল ‘দেশপ্রেমী’ টেনিস মিডিয়াকেও হারাতে হবে জকোভিচকে।

Advertisement

যে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এখন লন্ডনের ‘ও-টু’ এরিনায় সর্বদা জকোভিচের প্রতিদ্বন্দ্বী! তা সে কোর্টের ভেতর জকোভিচের ম্যাচ গ্রেট ব্রিটেনের সর্বকালের অন্যতম টেনিস প্লেয়ার মারের সঙ্গে থাকুক বা না থাকুক। জকোভিচও ব্রিটিশ টেনিসের সঙ্গে এমন সব সময় লড়াই-লড়াই পরিস্থিতি তৈরির জন্যও খানিকটা দায়ী। যেমন রবি আর সোমবার। রবিবার নিজের গ্রুপের প্রথম ম্যাচে জকোভিচ প্রথম সেট হেরে পিছিয়ে পড়ার পর পরের দু’টো সেট দারুণ খেলে ডমিনিক থিয়েমকে হারান ৬-৭ (১০-১২), ৬-০, ৬-২। জকোভিচের তরুণ অস্ট্রিয়ান প্রতিপক্ষের এটা শুধু জীবনের প্রথম এটিপি ট্যুর ফাইনালস নয়, টমাস মুস্টারের ১৯ বছর পরে তিনিই অস্ট্রিয়ার প্রথম প্লেয়ার হিসেবে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রথম দশে ঢোকার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন এই মুহূর্তে। সেই থিয়েমের বিরুদ্ধে চার বারের সাক্ষাতে গত রাতে জকোভিচ প্রথম কোনও সেট হারেন। এবং বার পাঁচেক সেট পয়েন্ট বাঁচানোর পরে ম্যারাথন টাইব্রেকারে ওই সেট হারতেই মেজাজ হারিয়ে একটা বল সজোরে মেরে সটান গ্যালারিতে উড়িয়ে দেন।

এবং সেটা নিয়েই এ দিন ব্রিটিশ প্রেস জকোভিচকে একের পর এক তীক্ষ্ম প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তোলে। যেখানে একটা সময় ‘স্কাই স্পোর্টস’ ও ‘মিরর’-এর টেনিস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে উত্তেজিত ভাবে জকোভিচ বলে ওঠেন, ‘‘বলিহারি আপনাদের!’’ অ্যান্ডি মারের দেশের সাংবাদিকদের মধ্যে একজনের প্রশ্ন ছিল জকোভিচকে— কাল হতাশায় কোর্ট থেকে ওই ভাবে গ্যালারিতে বল মারার পরে আপনার আশঙ্কা হয়নি যে, এমন কাণ্ডের জেরে পেনাল্টি পয়েন্ট দিতে পারেন চেয়ার আম্পায়ার আপনার বিরুদ্ধে? তার জবাবেই স্বভাবরসিক জকোভিচ খিঁচিয়ে উঠে বলেন, ‘বলিহারি আপনাদের!’’

Advertisement

পাল্টা প্রশ্ন সাংবাদিকের, কেন এমন বলছেন? জকোভিচ এ বার বলেন, ‘‘কেননা আপনারা টেনিস খেলাটা ছেড়ে সব সময় এ রকম কিছু নিয়েই পড়ে থাকেন।’’ সাংবাদিকটি তখন বলেন, কিন্তু আপনি যদি সে রকমই কিছু করেন, তা হলে মিডিয়া সেটা নিয়ে প্রশ্ন করবে না কেন? আসলে গত মাসেই সাংহাইয়ে বিশ্বের ১৯ নম্বর রবোর্তো অগাটের কাছে হেরে মাস্টার্স টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়ে কোর্টেই গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন জকোভিচ তীব্র হতাশা ও নিজের উপর রাগে। ইদানীং তো আবার শোনা যাচ্ছে, স্ত্রী জেলেনা-র সঙ্গে জোকারের সুখের সংসারেও নাকি চিড় ধরেছে। যার পর টেনিস বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, ফর্মের পাশাপাশি সাংসারিক সমস্যাও সার্বিয়ান মহাতারকার খারাপ খেলার পিছনে হয়তো ফ্যাক্টর।

এ দিন জকোভিচ দুই ব্রিটিশ সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করে বসেন, ‘‘আমিই এ রকম কাণ্ড করে থাকি? তা হলে আমি সাসপেন্ড হইনি কেন কখনও?’’ নাছোড় মিডিয়া তাঁকে বলেন, আপনি সাসপেনশনের কাছাকাছি পৌঁছেছিলেন। উত্তেজিত জকোভিচ তখন বলেন, ‘‘আমি নির্বাসিত হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম? কী, কাছাকাছি? কিন্তু সাসপেন্ড তো হইনি। তার মানে আমি নির্বাসনের কাছাকাছিও যাইনি। বুঝলেন তো, যাইনি!’’ আবার তাঁর দিকে প্রশ্ন ধেয়ে যায়, যদি বলটা দর্শকের গায়ে লাগত তা হলে তো সিরিয়াস কিছু ঘটতে পারত। এ বার জকোভিচ নিজেকে কিছুটা সামলে উত্তর দেন, ‘‘হ্যাঁ, সেটা ঘটতে পারত। কিন্তু ও-টু’তে সেটাও হয়নি।’’ পাশাপাশি এ-ও স্বীকার করেন যে, নিজের খেলায় হতাশ হয়ে তিনি এ জাতীয় কাণ্ড অনেক বার করেছেন। সঙ্গে অবশ্য যোগ করেন, ‘‘কিন্তু আমিই কি একমাত্র প্লেয়ার যে কোর্টে হতাশা প্রকাশ করে? সাংবাদিকেরা দেখছি তেমনই বলছেন।’’

জকোভিচকে সংবাদমাধ্যম এ দিন সবশেষে মনে করিয়ে দেয়, আপনি বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় প্লেয়ার। এই সে দিনও বিশ্বের এক নম্বর ছিলেন!

জকোভিচ: তো?

ব্রিটিশ সাংবাদিক: সেই আপনি যদি এ রকম হতাশা দেখান কোর্টে সেটা কি একটা বড় আলোচ্য বিষয় নয়?

জকোভিচ: দেখুন ভাই, আমার কাছে অন্তত এটা কোনও বিষয় নয়। আমি এ রকম কাজ এই প্রথম বার করলাম তাও নয়!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement