চর্চায়: যে ছবি এখন বিতর্কের বিষয়। বেলগ্রেডে প্রীতি প্রতিযোগিতা আয়োজনের সময় এ ভাবেই দেখা গিয়েছে সস্ত্রীক জোকোভিচকে। দু’জনেই করোনা আক্রান্ত। ফাইল চিত্র
আশঙ্কাই সত্যি হল!
নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে নিজের দেশে টেনিস প্রতিযোগিতার আয়োজন করা বিশ্বের এক নম্বর, টেনিসের বর্তমান রাজা নোভাক জোকোভিচ মঙ্গলবার ঘোষণা করলেন, তিনি করোনা আক্রান্ত। একা তিনি নন, তাঁর স্ত্রী ইয়েলেনারও করোনা পরীক্ষার ফল ‘পজিটিভ’ এসেছে।
নিজেই সেই খবর জানিয়ে জোকোভিচ বলেছেন, তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। অজান্তে যাঁদেরই ক্ষতির কারণ হয়ে থাকুন না কেন, তার জন্য দুঃখিত। বলেছেন, ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে এগিয়ে এসেছিলেন, যাতে করোনার সময়ে সমস্যায় থাকা টেনিস দুনিয়ার খেলোয়াড় ও সঙ্গীদের পাশে দাঁড়ানো যায়। সেটা যে এ ভাবে ফিরে এসে তাঁদের আঘাত করবে, বুঝতে পারেননি। বলেছেন, ‘‘এটাই হয়তো জগতের নতুন বাস্তব। তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে আমাদের।’’
মঙ্গলবার খেলার দুনিয়ায় ভূকম্পন ঘটেছে জোকোভিচের করোনা ধরা পড়ার খবরে। মনে করা হচ্ছে, এর মারাত্মক প্রভাব পড়তে চলেছে টেনিসে। নতুন করে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, খেলা ফের চালু করার জন্য তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে কি না? ইতিমধ্যেই ঠিক হয়ে রয়েছে, নিউ ইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন হবে অগস্টে। প্যারিসে ফরাসি ওপেন হওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে। কিন্তু জোকোভিচ-সহ একই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া একাধিক টেনিস খেলোয়াড় করোনা সংক্রমিত হওয়ায়, টেনিসের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশ্বের খেলাধুলোর মহলে জোকোভিচই হয়তো সব চেয়ে বড় নাম, যাঁর করোনা ধরা পড়ল। এর আগে ইটালির প্রাক্তন ডিফেন্ডার, কিংবদন্তি পাওলো মালদিনি, জুভেন্টাসের পাওলো দিবালা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে পাকিস্তানের শাহিদ আফ্রিদি, বাংলাদেশের মাশরফি মর্তুজা সংক্রমিত হয়েছেন। তবে ১৭ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক করোনার কবলে পড়ায় নতুন উদ্বেগ তৈরি হতে বাধ্য। কার্যত টেনিস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গিয়েই জোকোভিচ এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন নিজের দেশ সার্বিয়ার বেলগ্রেড এবং ক্রোয়েশিয়ার জাদারে। সেই প্রতিযোগিতাই এখন ‘কোভিড হটস্পট’ হয়ে উঠেছে। গ্রিগর দিমিত্রভ, বোর্না কোরিচ এবং ভিক্টর ট্রয়স্কি প্রথম ফাঁস করেন, তাঁরা করোনা আক্রান্ত। এই তিন জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দু’জন ট্রেনারও আক্রান্ত বলে জানাজানি হয়। তালিকায় ছিলেন জোকোভিচের নিজস্ব ট্রেনারও। বেলগ্রেডে প্রথম যে পর্বটি হয়েছিল, সেখানে ট্রয়স্কির বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলেছিলেন জোকোভিচ।
সোমবার থেকেই তাই উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, জোকোভিচও না করোনার শিকার হন। বিশেষ করে তিনিই যখন ছিলেন প্রধান উদ্যক্তা। সব চেয়ে বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে, প্রতিযোগিতার সময় করোনা নিয়ে কোনও বিধিনিষেধই মানা হয়নি। যেখানে স্পেনে লা লিগা ফুটবল বা ইংল্যান্ডে প্রিমিয়ার লিগ ফের চালু হলেও দর্শকশূন্য স্টেডিয়াম রাখা হচ্ছে, সেখানে জোকোভিচদের প্রীতি টেনিসে গেট খুলে দেওয়া হয়েছিল সকলের জন্য। প্রচুর মানুষ খেলা দেখতে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কোনও রকম শারীরিক দূরত্ব না রেখেই মিশেছিলেন খেলোয়াড়েরা। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ছবি তুলেছেন খুদে ভক্তদের সঙ্গে। টেনিসের সঙ্গে বাস্কেটবল খেলতে দেখা গিয়েছে বেশ কাছাকাছি এসে। ম্যাচের পরে পার্টিও করা হয়েছে অবাধে। সে সব নিয়ে এখন রীতিমতো কাঠগড়ায় বিশ্বের এক নম্বর টেনিস খেলোয়াড়। প্রশ্ন উঠছে, আরও কত মানুষ না এই প্রতিযোগিতা থেকে আক্রান্ত হন!
জোকোভিচ জানিয়েছেন, যে সময়ে তিনি প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন বলকান অঞ্চলে করোনার প্রভাব অনেক কমে এসেছিল। ‘‘আমরা ভেবেছিলাম, এই সব জায়গায় ভাইরাস দুর্বল হয়ে গিয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, তা এখনও সক্রিয় রয়েছে। সেটাই বাস্তব। এর সঙ্গে মানিয়ে নিতেই শিখতে হবে আমাদের,’’ বিবৃতিতে বলেন জোকার। ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, ‘‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আশা করব, কারও স্বাস্থ্যের অবনতি হবে না আমাদের জন্য। আশা করব, সকলে যেন ভাল থাকেন।’’ জানিয়েছেন, তিনি এবং স্ত্রী ইয়েলেনা ১৪ দিনের নিভৃতবাসে যাচ্ছেন। যদিও টেনিস দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনের এক নম্বর ডান ইভান্স তোপ দেগে বলেছেন, ‘‘জোকোভিচকে এর দায় নিতে হবে। জানি না, এ রকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে গায়ে গা লাগিয়ে পার্টি আর নৃত্য করার কী দরকার ছিল!’’ মুখ খুলেছেন অ্যান্ডি মারেও। বলেছেন, ‘‘বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও খেলোয়াড়েরই করোনা সংক্রমণকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। হাল্কা ভাবে নেব কেন?’’ প্রশ্ন মারের।
বেলগ্রেড, জাদার এবং মন্টেনেগ্রোতে এই প্রতিযোগিতা করার কথা ভাবেন জোকোভিচ। প্রথম দু’টি জায়গায় হলেও বাকি অংশ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। রবিবার রাতে জাদারে বেশির ভাগ খেলোয়াড়ের করোনা পরীক্ষা করা হয়। শোনা যাচ্ছে, জোকোভিচ সেখানে পরীক্ষা করাতে চাননি। তিনি নাকি বলেন, তাঁর শরীরে কোনও উপসর্গ নেই। বেলগ্রেডে ফিরে পরীক্ষা হয় পুরো পরিবারের। জোকোভিচ এবং তাঁর স্ত্রী ইয়েলেনার ফল ‘পজিটিভ’ আসে। তবে জোকোভিচ জানিয়েছেন, তাঁর সন্তানদের ফল ‘নেগেটিভ’।