অপ্রতিরোধ্য: চতুর্থ রাউন্ডে ওঠার পথে দুরন্ত জোকোভিচ। ছবি: এএফপি
কার্যত ঝড় তুলে যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠলেন নোভাক জোকোভিচ। কে বলবেন, ফ্লাশিং মেডোজে নামার আগে কাঁধের ব্যথায় তিনি মারাত্মক কষ্ট পাচ্ছিলেন! মনে হয়েছিল, তিনি হয়তো খেলতেই পারবেন না। বাস্তবে দেখা গেল উল্টোটাই। এ বার একের পর এক ম্যাচ অনায়াসে জিতছেন। টুর্নামেন্টে একটি সেট হারানো ছাড়া আক্ষরিক অর্থেই নিখুঁত টেনিস খেলছেন। শুক্রবার তিনি এ’বছরের টানা ২৬ নম্বর জয় পেলেন। হারালেন জার্মানির ইয়ান-লেনাড স্টুফকে। সার্বিয়ান মহাতারকা জিতলেন ৬-৩, ৬-৩, ৬-১ সেটে।
গোটা ম্যাচে একটাই নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হয়েছিল। যখন প্রথম গেমে একবার জোকোভিচের সার্ভিস ভাঙার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্টুফ অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেননি। এবং ম্যাচের বাকি সময়টা জার্মান প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বের এক নম্বর তারকাকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছেন। অবশ্য টেনিস জীবনে এর আগে কোনওদিনই স্টুফ বিপদে ফেলতে পারেননি নোভাককে। পাঁচ বার খেলে এক বার মাত্র একটি সেট জিতেছিলেন!
আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে শুক্রবার নিজের খেলায় খুশি জোকোভিচ। ‘‘সত্যিই আজ খুব ভাল খেললাম। আসলে শুরু থেকেই ওর সার্ভিসের ধরনটা বুঝে যাই। প্রথম সেটে তাই ব্রেকও পেয়ে গেলাম,’’ বলেছেন ১৭টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী তারকা। যোগ করেছেন, ‘‘এটা ঘটনা যে স্টুফ রীতিমতো বড় চেহারার প্রতিপক্ষ। ওর বিরুদ্ধে সার্ভিস নষ্ট করলে যে কোনও সময় ম্যাচ অন্যদিকে চলে যেতে পারে। ওর সার্ভিস খুব ভাল। আগ্রাসীও। এবং টেনিসটা খেলে শক্তি দিয়ে। তাই আজ ফল যাই হোক, আমি কিন্তু প্রথম থেকেই সতর্ক ছিলাম।’’
জোকোভিচ মনে করেন, প্রথম সেটের পরে কোর্টে তাঁর নড়াচড়া খুবই ভাল হয়েছে। যার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। পুরোপুরি ছন্দে ছিলেন বলেই শেষ দুই সেটে মাত্র চারটি গেম হারিয়ে ম্যাচ বার করে নেন। টেনিস বিশ্লেষকদের ভবিষ্যদ্বাণী, চতুর্থ রাউন্ডেও জোকোভিচের কাজটা বেশ সহজ। আজ, রবিবার তাঁর প্রতিপক্ষ স্পেনের পাবলো কারেনিয়ো বুস্তা। যিনি ক্রমতালিকায় এখন ২৭ নম্বরে। অতীতে তিন বার জোকোভিচের বিরুদ্ধে খেলেছেন। কখনও জেতেননি। এবং প্রায় তিন বছর আগে একবার মাত্র সার্বিয়ান তারকার বিরুদ্ধে একটা সেট পান! শুধু বুস্তার বিরুদ্ধে জোকোভিচকে এগিয়ে রাখা হচ্ছে, এমন নয়। টেনিস মহলের মতে, তিনি এখানে জীবনের ১৮ নম্বর গ্র্যান্ডস্ল্যামও জিততে চলেছেন। সেটা সত্যি হলে, সব চেয়ে বেশি গ্র্যান্ড স্ন্যাম জয়ের দৌড়ে তিনি রজার ফেডেরার ও রাফায়েল নাদালের আরও কাছে পৌঁছে যাবেন। এই দু’জনের সঙ্গে কোর্টের বাইরেও এখন ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে জোকোভিচের। সেটা তাঁর উদ্যোগে তৈরি খেলোয়াড়দের ইউনিয়ন (প্রফেশনাল টেনিস প্লেয়ার্স অ্যাসোশিয়েসন) তৈরি নিয়ে। নাদালরা মনে করছেন, এখন এমন একটা ইউনিয়ন তৈরির অর্থ খেলোয়াড়দের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা। জোকোভিচ কিন্তু পাশে পেয়েছেন অ্যান্ডি মারেকে। তবে মারে চান, মেয়েদেরও এই সংস্থায় নেওয়া হোক। এ দিন তাঁকে আশ্বস্ত করে জোকোভিচ বলেছেন, ‘‘মেয়েরাও আমাদের সংস্থায় স্বাগত। ওদের সঙ্গেও গত পাঁচ-ছ’দিন কথা হচ্ছে। আশা করছি মেয়েদেরকেও আমরা পাশে পাব।’’
শুক্রবারের সেরা ম্যাচটা ছিল নিঃসন্দেহে বোর্না কোরিচ বনাম স্তেফানোস চিচিপাসের। ক্রোয়েশীয় বোর্না ম্যাচ জিতেছেন ছ’বার ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়ে। চতুর্থ সেটে তো ৫-১ এগিয়ে ছিলেন চিচিপাস। সেখান থেকে বোর্না ম্যাচ বার করে চতুর্থ রাউন্ডে উঠলেন। ফল ৬-৭ (২), ৬-৪, ৪-৬, ৭-৫, ৭-৬(৪)।