কখনও ‘বোল্ট’। মারাকানায় নেইমার। ছবি: টুইটার
ব্রাজিল সোনা জেতায় আমি অবাক নই। বাকি দলগুলোর বিচারে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল ব্রাজিল। আর্জেন্তিনা, পর্তুগাল যেখানে কোনও গুরুত্ব দেয়নি অলিম্পিক্স-কে, ব্রাজিলের লক্ষ্যটা ছিল উল্টো। কোপা স্বপ্নের জলাঞ্জলি দিয়ে অলিম্পিক্সের জন্যই তো নেইমারকে রেখে দেওয়া হয়।
কিন্তু ব্রাজিলের প্রাপ্তি কি শুধুই একটা সোনা? আমার তো মনে হয় না। হ্যাঁ, অধরা স্বপ্নটা পূরণ করল ব্রাজিল। যে দেশের এত ফুটবল ঐতিহ্য রয়েছে তাদের ঝুলিতে অলিম্পিক্স সোনা থাকবে না, সেটা তো মানায় না। কিন্তু সোনা ছাড়াও ব্রাজিল পেয়েছে নতুন প্রজন্মকে। গাবিগল, গ্যাব্রিয়েল জেসাস, লুয়ানের মতো তরুণ প্রতিভাদের হাতে ব্রাজিলের ভবিষ্যৎ যথেষ্ট উজ্জ্বল।
বিশ্বকাপ আর অলিম্পিক্স ফুটবল মোটেও এক নয়। অলিম্পিক্স ফুটবল এমন একটা মঞ্চ যেখানে তরুণ প্রতিভারা কতটা তৈরি, সেটা পরখ করে নেওয়া যায়। গত কয়েক বছরে ব্রাজিল যা খেলছিল তাতে কট্টর ভক্তরাও চিন্তিত ছিল। কিছু মাস আগে পেরুর বিরুদ্ধে হেরে কোপার গ্রুপ থেকে যখন ছিটকে যায় ব্রাজিল, তখন বিশ্বাসই হচ্ছিল না, এটা কি সেই ব্রাজিল যারা এক সময় বলে বলে ট্রফি তুলত? আর একটা ট্রফি সব সময় কোনও দলকে চাঙ্গা করে দেয়। ব্রাজিলের কাছে তাই এই সোনার মূল্য অনেক বেশি। হয়তো বা একটা মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।
ব্রাজিলের একটা নেইমার ছিল ঠিকই। যে বছরের পর বছর আরও বেশি পরিপূর্ণ ফুটবলার হচ্ছে। আগে শুধু ড্রিবল করত। এখন খেলাও তৈরি করে দেয়। কিন্তু নেইমারকে বাদ দিয়েও তো দলে একজন গ্যাব্রিয়েল জেসাস ছিল। ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এত টাকা দেওয়ার পর প্রশ্ন উঠৈ গিয়েছিল ছেলেটাকে নিয়ে। কিন্তু সমালোচকরা জবাবও পেয়ে গেল। কী সুন্দর বল কন্ট্রোল। যেমন গতি আছে, তেমন ব্যালান্স। শুধু ফিনিশটা একটু ভাল করতে হবে।
এ বার আসা যাক গাবিগোল প্রসঙ্গে। শক্তিশালী। উইং চিরে খেলতে পারে। পাশাপাশি লুয়ানের মতো নিঁখুত ড্রিবলারও আছে। যে ছোট জায়গায় বলটা নিয়ে মুভ তৈরি করতে পারে। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে নামা রাফায়েল আলকান্তারাও যথেষ্ট স্কিলফুল। আর দু’বছর পর বিশ্বকাপ। এই প্লেয়াররা আরও ম্যাচ পাবে। আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বোঝাপড়া তৈরি হবে।
তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে একটা খুব বিখ্যাত প্রবাদ আছে। ওদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়ে দাও, ওরা হাসিমুখে গুলি খাবে। এতটাই জেদ থাকে তারুণ্যে। আর এই অলিম্পিক্স সোনা গাবিগোলদের অনুপ্রেরণা জোগাবে ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করার।
নেইমারের নেতৃত্বকেও প্রশংসা করতে হবে। টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগে নেইমারের ওপর যথেষ্ট চাপ ছিল। ওর কাছে এই অলিম্পিক্সটা কোনও অগ্নিপরীক্ষার থেকে কম কিছু ছিল না। কিন্তু ওকে দশে দশ দিলাম। যেমন মাথা ঠান্ডা করে খেলেছে তার প্রশংসা করতেই হবে। চাপ নেয়নি অহেতুক। নিজের শক্তিগুলো কাজে লাগিয়েছে। নেইমার থাকায় বাকিরাও তেতে যায় আরও ভাল করতে।
বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ১-৭ হারের রেশ অলিম্পিক্স সোনা দিয়ে মোছে না। দু’বছরের আগের জার্মানি আর এই জার্মানির মধ্যে তুলনাও চলে না। তবে এটা বলব, চাপটা কিন্তু ব্রাজিলের উপর খুব বেশি ছিল। একে তো ঘরের মাঠে খেলা। তার উপর সোনা না পেলে শান্ত করা যেত না দেশবাসীকে। মনে রাখবেন, রোমারিও, বড় রোনাল্ডোর মতো ফুটবলাররাও তো কোনও দিন সোনা দিতে পারেনি দেশকে। ফাইনালে প্রতিপক্ষ আবার জার্মানি। যাদের অনূর্ধ্ব ২৩ দলও সেই জার্মান ব্লু-প্রিন্ট দিয়ে তৈরি। অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়া। প্রথমে গোল খেয়েও ব্রাজিলকে টাইব্রেকার অবধি টেনে নিয়ে গেল।
ব্রাজিলকে এই সোনা জয় কতটা আত্মবিশ্বাস দেবে সেটা সময়েই বলবে। কিন্তু এই জয় দেখিয়ে দিল ব্রাজিল এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ম্লান হতে থাকা সাম্রাজ্যকে অক্সিজেন দিয়ে গেল এই সোনা।