ভারোত্তোলনে সোনা জেতার পর ফুলন দেবী।
সে-ও এক দীপা! সে-ও এক সাক্ষী বা সিন্ধু। কিন্তু দীপা-সাক্ষী-সিন্ধুর মতো ফুলন-জশ-রণবীরদের নিয়ে এত মাতামাতি নেই। দীপাদের মতো তাঁদের খেলা দেখার জন্য রাত জেগে কেউ টেলিভিশনের সামনে বসে থাকেননি। অথচ তাঁদের হাত ধরেই এ দেশ এক অলিম্পিকে তৃতীয় স্থানটি ধরে রেখেছে। তাঁদের হাত ধরেই ১৭৩টি পদক আজ দেশের ঝুলির ওজন বাড়িয়ে তুলেছে।
প্যারা-অলিম্পিকের সমগোত্রীয় এই অলিম্পিকটির পরিচয় স্পেশ্যাল অলিম্পিক হিসাবে। স্পেশ্যাল চাইল্ডদের নিয়ে প্রতি দু’বছর অন্তর এই গেমটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্প্রতি ২০১৫-র জুলাইয়ে লস অ্যাঞ্জেলসে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিকে ১৭৭টি দেশ থেকে মোট ৬৫০০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেছিলেন। দেশের প্রতিনিধিদের কঠিন লড়াই বিশ্বের দরবারে দেশকে তৃতীয় স্থানের মর্যাদা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি পদক জিতে প্রথম স্থানে রয়েছে আমেরিকা আর দ্বিতীয়তে চিন। এই বিশেষ অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টন, সাঁতার, সাইক্লিং, টেনিস, গল্ফ, বাস্কেটবল— সব মিলিয়ে ভারত মোট ১৭৩টি পদক পেয়েছে। এর মধ্যে সোনা রয়েছে ৪৭টি, রূপো ৫৪টি এবং ব্রোঞ্জ ৭২টি। অথচ, যে অলিম্পিক নিয়ে এত মাতামাতি, সেই চলতি অলিম্পিকে ভারতের ভাগ্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র একটি ব্রোঞ্জ জুটেছে। ব্যাডমিন্টনে আরও একটি পদক নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। গল্ফার অদিতি অশোককে নিয়েও সবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে দেশবাসী। সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে, প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাওয়া অলিম্পিকের লেজটা ছুঁতে পেরেছে ভারত। সেটা অবশ্যই গর্বের বিষয়। তবে এ রকমই আরও এক গর্বের মুহূর্ত তৈরি করে দিয়েছিল ফুলন, জশদের মতো স্পেশ্যাল চাইল্ডরাও। কিন্তু বছর ঘুরে গেলেও সে গর্বের আঁচ বেশির ভাগের কাছেই পৌঁছতে পারেনি!
সাঁতারে রুপো জয়ী দিশা মারু।
যেমন, চলতি সামার অলিম্পিকে অদিতি পদক জিততে পারবেন কি না এখনও ঠিক নেই, কিন্তু অটিস্টিক গল্ফার রণবীর সিংহ সাইনি এক বছর আগেই তাতে সোনা জিতে নিয়েছেন। অথচ দেশের অধিকাংশ লোক তাঁর নামটাই জানেন না। একই ভাবে জিতেও দেশবাসীর মন জিততে পারেননি ভারোত্তোলনে সোনাজয়ী ফুলন দেবী বা সাঁতারে ব্রোঞ্জজয়ী অটিজমে আক্রান্ত জশ সিংহ। এই তালিকায় রয়েছেন তাঁদের মতোই আরও অনেকে। কিন্তু প্রচারের আলো থেকে এতটা দূরে কেন পড়ে রয়েছে এই স্পেশ্যাল অলিম্পিক? আয়োজকদের মতে, একে তো পরিকাঠামোর অভাব, তার উপর এ দেশের লোকেরা সাধারণত ক্রিকেটের মতো বিপুল বাজেটের খেলা নিয়েই বছরভর মেতে থাকেন। অন্য খেলা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না। সে কারণেই দেশকে এমন গর্বের মুহূর্তে দাঁড় করিয়েও তাঁদের পাওনা বলতে শুধু অলিম্পিক শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একখানি সংবর্ধনা টুইট।
পদক
আরও পড়ুন: জিতেই ফিরব, বলে গিয়েছিল সাক্ষী
ছবি: টুইটার।