চর্চায়: বোল্ট ও সাউদি প্রধান ভরসা নিউজ়িল্যান্ডের। ফাইল চিত্র
পরের মাসেই টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে বিরাট কোহালির ভারত এবং কেন উইলিয়ামসনের নিউজ়িল্যান্ড। সাউদাম্পটনে যে দ্বৈরথ শুরু হবে ১৮ জুন থেকে। তার আগে নিউজ়িল্যান্ডের বোলিং কোচ শেন য়ুর্গেনসেন জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের দলের পেস আক্রমণ তাঁকে সেই স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং আক্রমণকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
টেস্টে নিউজ়িল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ সামলাতে সাধারণত দেখা যায় চার পেসারকে। এঁরা হলেন, ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, কাইল জেমিসন এবং নিল ওয়াগনার। একটি ক্রিকেট ওয়েবসাইটকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে শেন বলেছেন, ‘‘আশির দশকের সেই চার ফাস্ট বোলার নিয়ে তৈরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের আক্রমণ দেখেছিলাম আমার তরুণ বয়সে। এখন বোল্ট, সাউদি, ওয়াগনার আর জেমিসনকে দেখে ক্যারিবিয়ান পেস আক্রমণের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। ওদের সঙ্গে আমাদের বোলিং আক্রমণের
মিলও আছে।’’
আশির দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং আক্রমণে দেখা যেত ম্যালকম মার্শাল, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, জোয়েল গার্নারদের। যাঁদের ভয়ঙ্কর গতির সামনে আত্মসমর্পণ করতেন ব্যাটসম্যানরা। কেন নিজের দলের আক্রমণকে তাঁদের সঙ্গে তুলনা করছেন? বোল্টদের বোলিং কোচের জবাব, ‘‘আমাদের দলে চার ধরনের বোলার আছে। জেমিসনের উচ্চতা আর লেংথের সামনে সমস্যায় পড়বে ব্যাটসম্যানরা। বোল্ট আর সাউদি হল দারুণ সুইং বোলার। এক জন বাঁ-হাতি, এক জন ডান-হাতি। আবার ওয়াগনার যেমন পিচে ঠুকে বলটা তুলতে পারে, তেমন এখন সুইংটাও ভাল পাচ্ছে। এই চার ধরনের বোলার চার রকম পরীক্ষার মুখে ফেলে দেয় ব্যাটসম্যানদের। যার ফলে প্রতিপক্ষ দল সব সময় চাপের মধ্যে থাকে।’’ যোগ করেন, ‘‘আমাদের এই বোলাররা যথেষ্ট পরিশ্রম করে। নিজেদের মধ্যে সব সময় আলোচনা চালায়। সবার মধ্যে একটা একাত্মবোধ আছে। ওদের দেখে তাই আমার ক্যারিবিয়ান বোলিং আক্রমণের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।’’
ভারত, ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের পেস আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করলে এখন কোথায় রাখবেন নিউজ়িল্যান্ড বোলিংকে? কুইন্সল্যান্ডের প্রাক্তন পেসার এবং নিউজ়িল্যান্ড দলের দীর্ঘদিনের বোলিং কোচ শেনের জবাব, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরে সব ধরনের ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে নিউজ়িল্যান্ডের পেস আক্রমণ। ম্যাচের পরিস্থিতি যাই থাক না কেন, আমরা যে কোনও সময় প্রতিপক্ষের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারি। আর এটাই আমাদের গর্বের বিষয়। আমরা চাই সব দলের কাছেই যেন বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারি। আমাদের লক্ষ্য ধারাবাহিক ভাবে উন্নতি করা। যাতে সব দলই যেন আমাদের ভয় করে।’’
অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটারের কাছে আবার ভারতীয় পেস আক্রমণ এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা। যেখানে আছেন যশপ্রীত বুমরা, ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি, উমেশ যাদবরা। এমনকি রিজার্ভ বেঞ্চে থাকবেন দুরন্ত ছন্দে থাকা মহম্মদ সিরাজ বা ভুবনেশ্বর কুমার। সঙ্গে বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার আর অশ্বিন। ফলে নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিংকেও যে কড়া পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে, এ ব্যাপারে অনেকেই নিশ্চিত।
কোচ হিসেবে নিজের সেরা তিনটে ম্যাচের মধ্যে শেন বেছে নিয়েছেন ২০২০ সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়কে। কোচের কথায়, ‘‘ভারত খুব ভাল একটা দল। তাই ওদের ২-০ হারানোর অনুভূতিটাই আলাদা। ওই সিরিজটা দারুণ ছিল। বিশেষ করে ক্রাইস্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টটা। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে পেরেছিলাম।’’
বোল্ট, সাউদি, ওয়াগনারদের বিশেষত্বের কথাও বলেছেন শেন। তাঁর কথায়, ‘‘বোল্ট তিন ধরনের ক্রিকেটেই সফল। আর তার কারণ হল, ওর দুর্দান্ত ফিটনেস। যে কারণে টেস্টে লম্বা স্পেল করতে সমস্যা হয় না।’’ দলের অভিজ্ঞতম পেসার সাউদিকে নিয়ে কোচের মন্তব্য, ‘‘এই বোলিং গ্রুপকে সাউদি খুব ভাল নেতৃত্ব দেয়। ওর হাতে ভাল আউটসুইং আছে। ইয়র্কারটাও দারুণ। এখন মন্থর বলগুলোও কাজে লাগাচ্ছে।’’ আর বাঁ-হাতি পেসার ওয়াগনারকে নিয়ে কী বলবেন? কোচের জবাব, ‘‘ধারাবাহিক ভাবে নিখুঁত লক্ষ্যে বল ফেলতে পারে ওয়াগনার। সঙ্গে রয়েছে বাঁ-হাতিদের ক্ষেত্রে আউটসুইং এবং ডান-হাতিদের ক্ষেত্রে একটা মারাত্মক ইনসুইং।’’