সাকিব আল হাসান।
বয়সের ব্যবধান তাঁদের ১ বছর ৩৬১ দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ৫ মাস ১২ দিন পর হয়েছে তামিমের অভিষেক। তবে বয়সের ব্যবধান প্রায় ২ বছর হলেও তাঁদের বন্ধুত্ব সবার জানা। ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের সর্বশেষ আসর প্রিমিয়ার ডিভিশনেও দুই বন্ধু খেলেছেন এক সঙ্গে। গত রবিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই বন্ধুই আবার বিশেষ মাইলস্টোনে পা রেখেছেন। তিন ফর্ম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রানের সমস্টিতে ন’হাজার রানের মাইলফলকে ওই দিন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রেখেছেন পা তামিম। তামিমের ইতিহাসের দিনে অনন্য রেকর্ড করে ফেলেছেন বন্ধু সাকিব আল হাসানও। বিখ্যাত স্পিনার মুরলিধরন, শেন ওয়ার্ন তো দুরের কথা দেশের হয়ে তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটের সব ক’টিতে কোনও বোলারের সর্বাধিক উইকেটের এই কৃতিত্ব নেই। ৪২ টেস্টে ১৪৭ উইকেট এবং টি২০তে ৬৫ উইকেট নিয়ে দুই ফর্ম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বাধিক উইকেট শিকারি এই বোলার। রবিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২ উইকেট পেয়ে ৫০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও দেশের পক্ষে সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলারের রেকর্ডটা করে ফেললেন তিনি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এতদিন ১৫৩ ম্যাচে ২০৭ উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন বাঁ হাতি স্পিনার আবদুর রজ্জাক। তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে ২ বছর লেগে গেল সাকিবের। দেশের হয়ে সাকিবের এই কৃতিত্ব শুধু একারই। প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে তিন ধরণের ক্রিকেটের মোট উইকেট ৪০০ এবং রান ৮ হাজার। সাকিব টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটেও প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে ২০০ উইকেটের মাইলফলকে দিয়েছেন পা। দলের মধ্যে ওয়ানডেতে মাশরাফির সঙ্গে বোলিংয়ে পাল্লা দিয়ে তাঁকে পিছনে ফেলে রজ্জাককে টপকে অনন্য রেকর্ড করেছেন তিনি।
একই দিনে দুই বন্ধুর দু’টি মাইলস্টোন। সঙ্গত কারনেই এক বন্ধু অন্য বন্ধুকে অভিনন্দিত করবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে তামিমের সঙ্গে ব্যাটিংয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না সাকিব। গত ২২ মাসে ব্যাটিংয়ে তামিমের ব্যাটিংয়ে ম্লান সাকিব। ওডিআইয়ে তিন হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ তামিমের আগেই পেয়েছিলেন, সেই তামিমই কী না চার হাজারি ক্লাবের প্রথম বাংলাদেশি! পাঁচ হাজারি ক্লাবের সদস্যপদের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা এখন এই বাঁ হাতি ওপেনারের ২০৭ রান। সেখানে তামিমের পর চার হাজারের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়ে পাঁচ হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ পেতে সাকিবকে করতে হবে ৫৬৪ রান।
টেস্টে হাবিবুল বাশারের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে গত বছরই তিন হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ পেয়ে সেই হাবিবুলকে টপকে গিয়েছেন তামিম। সেখানেও তামিমের চেয়ে পিছিয়ে সাকিব। তিন হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ পেতে এখনও তাঁকে অপেক্ষা করতে হবে ১৭৭ রানের। টি২০তেও দু’জনেই হাজারি ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন সর্বশেষ টি২০ বিশ্বকাপে। তবে ওই আসরেই তৈরি হয়েছে ব্যবধান। পিছন থেকে সাকিবকে ধরে ফেলে উপরে উঠে ইতিমধ্যে ৫১ রান বেশি করে ফেলেছেন তামিম। দুই বন্ধুর ব্যাটিংয়ে পার্থক্যটা তৈরি করেছে গত বছরের খেলা। ২০১৫ সালে টেস্টে তামীমের রান যেখানে ৩৭৫ সেখানে সাকিবের রান ২৯৪। ওয়ানডেতে তামিমের ৪৫৬ রানের বিপরীতে সাকিবের রান সমস্টি ৪২১। টি২০তে গত বছর এবং এই বছর মিলিয়ে সেখানে তামিমের ৪৫২র বিপরীতে সাকিবের ৩৫১!
এত রেকর্ড করেও এই নায়কের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে আক্ষেপ,‘‘ অবশ্যই এই সাফল্য ভাল লাগছে। তিন ফরম্যাটে সর্বোচ্চ রান করতে পারলে আরও ভাল লাগত। তবে গত এক বছরে বাংলাদেশ দল এত ভাল খেলছে যে সেভাবে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছি না। ব্যাটিংয়ে আরও বেশি সুযোগ পেলে হয়ত বা তিন ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান থাকত। তবে এখনও সুযোগ আছে। দেখা যাক, এখনও আরও অনেকদিন ক্রিকেট খেলব। কোথায় গিয়ে শেষ করি।’’ দেশের হয়ে সব ভার্সনের ক্রিকেটে সর্বাধিক রান সংগ্রহের লক্ষ্যটাও তাহলে স্থির করে ফেলেছেন এই অল রাউন্ডার।
ছবি: সংগৃহিত।
আরও খবর
বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে নুতন মুখ মোসাদ্দেক, বাদ পড়লেন আল আমিন