বিদায়ী অধিনায়ক বুঝে পাচ্ছেন না, ক্রিকেট ছেড়ে বাঁচবেন কী ভাবে।
ভবিষ্যৎ অধিনায়ক ভেবে আকুল, ইংরেজ সুইং সামলাবেন কী করে।
মাইকেল ক্লার্ক এবং স্টিভ স্মিথ— অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের দুই আইকনের সময়টা মোটেও ভাল যাচ্ছে না। তার উপর আবার ব্যাগি গ্রিন ড্রেসিংরুমে বিভাজন নিয়ে নতুন জল্পনার গুঞ্জন। সব মিলিয়ে দুঃস্বপ্নের অ্যাসেজের মধ্যে টিম অস্ট্রেলিয়া।
‘‘আমার গোটা জীবন ধরে ছিল শুধু ক্রিকেট। যত দূর মনে পড়ে, প্রতি দিনই ক্রিকেট নিয়ে ভেবেছি,’’ এ দিন অস্ট্রেলীয় সংবাদপত্রে তাঁর কলামে লিখেছেন ক্লার্ক। অবসরের সিদ্ধান্তের কথা সবাইকে জানানোটা কত কঠিন ছিল, বলে ক্লার্ক আরও লিখেছেন, ‘‘আমার দাদুকে বলা সবচেয়ে কঠিন ছিল। উনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন। পপ্স গত এক দশক ধরে বারবার বলেছেন যে, আমাকে ক্রিকেট খেলতে দেখাটা ওঁর বেঁচে থাকার বড় একটা কারণ ছিল। চেষ্টা করেছিলাম আবেগের কাছে হার না মানতে। এই ক’বছরে প্রচুর কেঁদেছি!’’
যে সংবাদপত্রে ক্লার্কের এই কলাম প্রকাশিত হয়েছে, সেই সংবাদপত্রেরই আবার খবর যে, বছরের পর বছর অস্ট্রেলীয় ড্রেসিংরুমে নানান ঝামেলা চলেছে। ক্লার্কের জনপ্রিয়তা হারানোর দুটো বড় কারণ হিসেবে তারা বলেছে, তিনি টিম বাস ছেড়ে নিজস্ব গাড়িতে ট্র্যাভেল করেন। টিমের সঙ্গে মিশতে খুব একটা পছন্দ করেন না। জনপ্রিয় সহ-অধিনায়ক ব্র্যাড হাডিনকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও হজম করতে পারেননি অনেকে। এত দূরও বলা হয়েছে যে, গত এক বছর ধরে মাঠের বাইরে টিমের সঙ্গে ক্লার্কের সম্পর্কের ভাঙনই অ্যাসেজ-বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় কারণ। অবসর ঘোষণার রাতে তাঁদের সঙ্গে হোটেল বারে ক্লার্ককে সময় কাটাতে দেখে নাকি দলেরই সবাই স্তম্ভিত হয়ে যান। যদিও রাতের শেষে নাকি টিমমেটদের উপেক্ষা করে শেন ওয়ার্নের সঙ্গে বেশি সময় কাটান ক্লার্ক।
গুঞ্জনের ব্যাপারটা ক্লার্ক নিজেও খুব ভাল করে জানেন। তাই রেডিওয় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্ষুব্ধ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘‘এই টিমে কোনও বিরোধ নেই। প্লেয়ারদের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভাল। আমি আলাদা গাড়িতে ট্র্যাভেল করি? স্ত্রী-বান্ধবীরা সফরে ফোকাস নষ্ট করে? এগুলো সব ফালতু কথা!’’ ওয়্যাগ প্রসঙ্গে তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমার স্ত্রী কাইলির যদি আমার কেরিয়ারে কোনও অবদান না থেকে থাকে, তা হলে নিজের টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে দশটা ফেরত দিয়ে দেব!’’
ক্লার্কের উত্তরসূরির সমস্যা অবশ্য একেবারেই ক্রিকেটীয়। এবং যিনি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হিসেবে বন্দিত হচ্ছেন, তাঁর মুখ থেকে এমন স্বীকারোক্তি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের খুব স্বস্তিতে রাখবে না। এক নম্বর টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে অ্যাসেজ শুরু করা স্টিভ স্মিথ খোলাখুলি বলে দিয়েছেন, ইংরেজ বোলারদের সুইং সামলাতে পারছেন না তিনি। ‘‘ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের খেলা দেখুন। বুঝতে পারবেন, ওদের সব বোলার দু’দিকেই বল সুইং করায়। এই অবস্থায় ব্যাট করা অনেক বেশি কঠিন,’’ বলে স্মিথ আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমাদের বোলাররা এক দিকে সুইং করায়। সে রকম দেশ থেকে এখানে এসে যখন দেখছি দু’দিকে বল সুইং করছে, তখন এমন কিছু শট খেলে ফেলছি যেগুলো এমনিতে কখনওই খেলি না।’’
উদাহরণ— এজবাস্টন আর তার পর ট্রেন্টব্রিজে প্রথম ইনিংসে স্মিথের খোঁচা মেরে আউট হওয়া। ট্রেন্টব্রিজে অ্যাসেজ হারানোর পাশাপাশি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসনটাও জো রুটের কাছে হারাতে হয়েছে তাঁকে। লর্ডসে ডাবল সেঞ্চুরির পরের চারটে ইনিংসে তাঁর স্কোর এক অঙ্ক পেরোয়নি। চার বারই এমন ডেলিভারিতে উইকেটটা দিয়ে এসেছেন, যেগুলো ছেড়ে দিলেই বেঁচে যেতেন। শেন ওয়ার্নও বলেছেন, স্মিথের আউট হওয়ার ধরন ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।
তবে শুধু স্মিথের ব্যর্থতা নয়, অ্যাসেজে অস্ট্রেলিয়ার গোটা টিমের পারফরম্যান্সকেই ওই একটা শব্দে ধরা যায়।