১০ বছর বয়সেই উচ্চতা পেরিয়েছিল ৬ ফুট। এখন তিনি ৭ ফুট ৬ ইঞ্চির যুবক। লাহৌরের বাসিন্দা, ২১ বছর বয়সি মুদাস্সির গুজ্জর স্বপ্ন দেখেন পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে খেলার।
তিন ভাই এবং এক বোনের মধ্যে গুজ্জর সবথেকে ছোট। তাঁদের বাবা হাসিমের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। মা পরভীন ৫ ফুট ৩ ইঞ্চির সাধারণ মহিলা। বাকি তিন ভাইবোনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
স্কুল এবং পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে গুজ্জর সবসময়েই ছিলেন সবথেকে লম্বা। এই নিয়ে স্কুলে বন্ধুদের হেনস্থার মুখেও পড়তে হয়েছে যথেষ্ট।
কিন্তু এখন এই উচ্চতাকে সম্বল করেই জাতীয় দলের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। স্বপ্নপূরণের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে সুযোগও পেয়েছেন স্থানীয় ‘লাহৌর কলন্দরস’ দলে খেলার।
এক সময় ছেলের জন্য উদ্বিগ্ন বাবা মা চিকিৎসকদের দরজায় ছোটাছুটিও করেছেন। করাচি, লাহৌর-সহ বিভিন্ন শহরের ডাক্তাররা একই কথা জানিয়েছেন তাঁকে। বলেছেন, তাঁদের ছেলে হরমোন সমস্যার শিকার।
চারপাশের সবার কৌতূহল তো ছিলই। পাশাপাশি ছোট থেকেই আরও অসুবিধের মুখোমুখি হতে হয়েছে গুজ্জরকে। রিকশা বা বাস, কোনও যানের আসনেই ঠিকমতো বসতে পারতেন না। অসুবিধে হত স্কুলের ডেস্ক-বেঞ্চেও।
বরাবর অর্ডার দিয়ে তৈরি করানো হয় তাঁর জুতো এবং পোশাক। ছোট থেকেই এই অসুবিধেগুলির সঙ্গে মানিয়ে চলতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন তিনি এবং তাঁর পরিবার।
সবসময়েই নিজের পা জোড়া নিয়ে সমস্যায় পড়েন গুজ্জর। কোথায় রাখবেন, কী ভাবে রাখবেন ভেবে পান না। পায়ের এই বেমানান অবস্থার জন্যই কোনও দিন গাড়ি চালাতে পারেননি তিনি। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে মোটরবাইক চালিয়ে। সেখানেও বেশ কসরত করে বসতে হয় তাঁকে।
তবে সবটুকুই অভিশাপ নয় তাঁর কাছে। এই অস্বাভাবিক উচ্চতার জন্যই তিনি সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়েছেন। স্বীকার করেছেন তাঁর কাছে উপভোগ্য সেটাও। উচ্চতাকে ঈশ্বরের দান হিসেবেই মেনে নিয়েছেন তিনি।
স্কুল পাশ করার পর থেকেই ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ‘লাহৌর কলন্দরস’ দলের হয়ে আপাতত পাকিস্তান সুপার লিগ-এর জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন, এক দিন বিশ্বের সবথেকে লম্বা ক্রিকেটার হিসেবে খেলবেন পাকিস্তানের জাতীয় দলে।
গত ৬ মাস ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তিনি। আতিমারি পরিস্থিতির জন্য সাময়িকভাবে কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে প্রশিক্ষণ।
লাহৌরের এই তরুণ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত উচ্চতার জন্য ফাস্ট বোলিং করতে তাঁর সুবিধে হয়। জন্মগত অসুবিধাকে এ ভাবেই নিজের তুরুপের তাস করে নিয়েছেন তিনি।