দেশ-বিদেশের ৮ হাজারি শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন রয়েছে এভারেস্টজয়ী পিয়ালি বসাকের। —নিজস্ব চিত্র।
ব্রেন স্ট্রোক হয়ে শয্যাশায়ী বাবা। তাঁর ওষুধপথ্যের খরচ তো রয়েইছে। সঙ্গে সংসার খরচের জন্যও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকে গোটা পরিবার। এ হেন অবস্থায় মার্চে অন্নপূর্ণা এবং মাকালুর মতো ৮ হাজারি শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন রয়েছে এভারেস্টজয়ী পিয়ালি বসাকের। তবে সে স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর আর্থিক সংস্থান। প্রাথমিক স্কুলের চাকরি রয়েছে। তবে বাবার চিকিৎসা এবং সংসার খরচ সামলে পর্বতারোহণের জন্য আরও মোটা বেতনের চাকরির আবেদন করছেন ‘পাহাড়ি কন্যা’।
কয়েক মাস পরে জোড়া ৮ হাজারি শৃঙ্গের অভিযানে ৩০ লক্ষ টাকা প্রয়োজন পিয়ালির। গত বছরের মে-তে একসঙ্গে এভারেস্ট এবং লোৎসে জয় করে যিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর নামে জয়জয়কার হলেও বিশেষ আর্থিক লাভ হয়নি পিয়ালির। তবে শত আর্থিক অনিশ্চিয়তা সত্ত্বেও সাহসে ভর করে আবার পর্বতাভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সে জন্য কেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের কাছে পিয়ালির আবেদন, ‘ভাল’ চাকরির। বুধবার চুঁচুড়ায় এক সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর পাশে থাকার আবেদন করেছেন পিয়ালি।
হুগলির কাঁটাপুকুরের বাড়িতে অসুস্থ বাবা, মা-বোনকে নিয়ে ৪ জনের সংসার পিয়ালিদের। শয্যাশায়ী বাবার ওষুধপথ্যের খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। চন্দননগর কানাইলাল প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকতা করেও সংসার খরচ কুলোয় না। তিনি বলেন, ‘‘বাবা শয্যাশায়ী। তাঁর ব্রেন স্ট্রোক হয়ে গিয়েছে। বাবার চিকিৎসা ছাড়াও আমার উপার্জনের উপর নির্ভরশীল গোটা পরিবার। মা-বাবা, বোন এবং আমার, পরিবারের সকলের নামেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করলেও সেই উপার্জনে সংসার চলে না। ট্রেনিং বা খাওয়াদাওয়াও ঠিকমতো হয় না। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করছি, আমার একটা ভাল চাকরি পেলে সুবিধা হয়।’’
শত প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর্থিক সমস্যাও পিছু ছাড়েনি। তা সত্ত্বেও পর্বতারোহণে বেরিয়ে পড়েন ছোটখাটো চেহারার পিয়ালি। বিনা অক্সিজেনে পাহাড় চড়ার অভ্যাস যেন তাঁর সহজাত। ওজন মাত্র ৪২ কিলোগ্রাম। ওজন কম হওয়ায় ফুসফুসের সহজাত ক্ষমতায় অনেক উঁচু শৃঙ্গে অনায়াসে চড়েন পিয়ালি। তবে এভারেস্ট জয় করেই থেমে থাকতে চান না। দেশ-বিদেশের ৮ হাজারি শৃঙ্গগুলিও একে একে জয় করতে চান। এভারেস্ট জয়ের জন্য ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করেছিলেন পিয়ালি। অর্থাৎ সমাজমাধ্যমে অর্থের সংস্থানে তাঁর আবেদনে অনেকেই আর্থিক সাহায্য করেছিলেন তাঁকে। এ বার আরও কঠিন লক্ষ্য পিয়ালির। পর্বতারোহণে তাঁর শিক্ষক সনৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এভারেস্ট জয় করা কঠিন কাজ। তার চেয়েও কঠিন, দেশ-বিদেশের ১৪টি দুর্গম ৮ হাজারি শৃঙ্গের শীর্ষে ওঠা।’’
আর্থিক সাহায্যের জন্য উদ্যোগী হয়েছেন পিয়ালি। তিনি বলেন, ‘‘চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী মহাশয়কে এ বিষয়ে জানিয়েছি। যাতে আমার বক্তব্য কোনও সরকারের কাছে পৌঁছে দেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল ২০১৮ সালে। অরূপ বিশ্বাস মহাশয়ের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। তখন আর্থিক সাহায্যের কথা বলেছিলেন তিনি।’’ প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশেষ সুরাহা হয়নি। পিয়ালির কথায়, ‘‘আমি নিজে বিভিন্ন সংস্থার কাছে আবেদন করব। চন্দননগরের বিধায়ক বা ক্রীড়ামন্ত্রীর এবং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করব, যাতে তাঁদের মাধ্যমে আমাকে স্পনসরের ব্যবস্থা দেন। তাতেও সুরাহা হবে।’’