কুক ফিরে যাওয়ার উচ্ছ্বাস। শুক্রবার চেন্নাইয়ে।
রোগটা আর গেল না। রাজকোট হয়ে বিশাখাপত্তনম। মুম্বই ঘুরে চেন্নাই।
সেই ক্যাচ ফেলার রোগ।
চলতি ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ সত্যিই এক আশ্চর্য টেস্ট সিরিজ বটে! ক্রিকেটে একটা প্রবাদ আছে—ক্যাচেস উইন ম্যাচেস। ক্যাচ জেতো, ম্যাচ নাও। ক্যাচ ফেললে মানে কপালে তোমার অশেষ দুঃখ। কিন্তু চলতি সিরিজে অদ্ভুত ভাবে ব্যাপারটা উল্টো চলছে। ভারত ক্যাচ ফেলছে। টানা ফেলছে। টেস্টের পর টেস্ট। কিন্তু তার পরেও ঠিক ম্যাচ জিতে বেরিয়ে যাচ্ছে!
চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনও একটা মোক্ষম পড়ল। লোকেশ রাহুলকে এমনিতে বিশ্বস্ত ফিল্ডার হিসেবেই ধরা হয়। কিন্তু মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে মইন আলির ক্যাচটা ফেলে দিলেন তিনি। ইংরেজ অলরাউন্ডার তখন একটা রানও করেননি! প্রথম দিনের খেলা শেষে মইন অপরাজিত ১২০। জো রুটকে (৮৮) ছাপিয়ে টিমের পক্ষে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এবং ক্যাচটাকে কেন মোক্ষম বলা হচ্ছিল, এর পর সন্দেহ থাকার কথা নয়।
মুশকিল হল, মইনের সেঞ্চুরি, রুটের বড় রানের পরেও চেন্নাই টেস্টে অ্যাডভান্টেজ ইংল্যান্ড বলার কোনও জায়গা নেই। এমনিতে অবশ্য চেন্নাই টেস্ট সিরিজে কোনও প্রভাব ফেলবে না। সিরিজটা শেষ হয়েই গিয়েছে, ভারত জিতে ফেলেছে। তবু ৪-০ একটা স্বপ্নের সংখ্যা— যে কোনও অধিনায়কের সেই কীর্তিতে হাত রাখতে ইচ্ছে করবে। ভারত প্রথম দিন পারেনি। কিন্তু শনিবার পারবে না, তার গ্যারান্টি নেই। বরং সিরিজের উপাখ্যান দেখলে ভাল রকম সম্ভাবনা। মুম্বই টেস্টেও তো একই জিনিস হল। প্রথম দিন ব্যাট করে ইংল্যান্ড ২৮৮-৫। পরের দিন চারশো অলআউট এবং শেষ পর্যন্ত ইনিংসে টেস্ট হার! চিপকের প্রথম দিন স্কোর বলতে গেলে মুম্বই টেস্টের প্রথম দিনের মতোই, গায়ে-গায়ে। দিনের শেষে ইংল্যান্ড ২৮৪-৪। বাকি দিনগুলো কী হয়, এখন সেটাই প্রশ্ন।
সে়ঞ্চুরির পর মইন।
দিনের খেলা শেষে জো রুটের গলা অবশ্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী শোনাল। রুট বলে গেলেন, ‘‘শুরুর ধাক্কা সামলে আমরা যে ভাবে চাপটা ভারতীয় বোলারদের উপর ঠেলে দিয়েছি, সেটা ধরে রাখা যাবে পাঁচশো তুলে ফেললে।’’ ভাল। কিন্তু সেটা তো তুলতে হবে জাডেজা-অশ্বিনকে খেলে।
রবিচন্দ্রন অশ্বিন শুক্রবার পারেননি। ঘরের মাঠ, চেনা কিউরেটর (কে পার্থসারথী, যাঁকে অশ্বিন ছোট থেকে ডাকেন ‘পাচা’ বলে)—তাঁর আরও একবার নায়ক হয়ে ওঠার আদর্শ মঞ্চ ছিল। কিন্তু আজ হয়নি। বরং অশ্বিনের ঘরের মাঠ এ দিন রবীন্দ্র জাডেজার আস্ফালন দেখে রাখল। দিনের নবম ওভারেই তাঁকে বল করতে পাঠান বিরাট কোহালি। ইংল্যান্ড অধিনায়ককে করা তাঁর প্রথম বলেই জোর অ্যাপিল করেছিলেন জাডেজা, যা নাকচ হয়ে যায়। কোহালি অনেকক্ষণ ভেবে, আলোচনা করে রিভিউ চাইলেও আখেরে লাভ হয়নি। তবে জাডেজার যে ধরনের বলে এর আগে তিন-তিন বার এলবিডব্লিউ-র ফাঁদে পড়েছিলেন কুক, প্রায় সে রকমই একটা বল তাঁর হাত থেকে বেরয় দু’ওভার পর।
এ বারেরটা অবশ্য অফ স্টাম্পের বাইরে। স্লোয়ার। কুক বোধহয় ভেবেছিলেন বল একটু বেশিই ঘুরবে। নিশ্চিত না হয়েই শট নিতে যান। ব্যাট ছুঁয়ে তা স্লিপে কোহালির কাছে চলে যায়। বলটা নিচু হয়ে গেলেও ক্যাপ্টেন অবশ্য এই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। আর বিদেশি অধিনায়ক দেখলে জাডেজার কিছু একটা হয় বোধহয়! ২০১২-তে যখন অস্ট্রেলিয়া এসেছিল, তখন মাইকেল ক্লার্ক পাঁচ বার জাডেজার বলে আউট হয়েছিলেন। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্যাপ্টেন হাসিম আমলাকে তিন বার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর এ বার কুক শিকার করলেন পাঁচ বার! ইংরেজ অধিনায়কের শুধু একটাই এ দিন প্রাপ্তি হল। এগারো হাজারি ক্লাবে ঢুকে পড়া।
ইংল্যান্ডের ভাগ্য ভাল, ওখান থেকে খেলাটা নিজেদের দিকে আবার ঘুরিয়ে নিলেন রুট-মইন। মইন তবু একটা সুযোগ দিয়েছেন, রুট তা-ও দেননি। রুট-মইন পার্টনারশিপে উঠল ১৪৬ রান। রুটকে পরে জাডেজাই তুললেন। কিন্তু জনি বেয়ারস্টো খেলে দেওয়ায় ইংল্যান্ড ইনিংস নতুন আতঙ্কের মধ্যে এ দিনের মতো পড়েনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কালো মাটির চিপক পিচ ক্রমশ গতিহীন হয়ে উঠবে। লাল মাটির উইকেট হলে যে ব্যাপক টার্ন পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকত, তা হয়তো হবে না। কিন্তু তার প্রয়োজনও আছে কি? চলতি সিরিজে কোথাওই মারাত্মক টার্ন পায়নি ভারত। তাতেও ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। দুরন্ত ঘূর্ণি না পেলেও বিশেষ অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। আর রবিচন্দ্রন অশ্বিনও যে রোজ চুপচাপ থাকবেন, সেটাও বা কে বলল?
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
কুক ক কোহালি বো জাডেজা ১০
জেনিংস ক পার্থিব বো ইশান্ত ১
রুট ক পার্থিব বো জাডেজা ৮৮
মইন ন.আ. ১২০
বেয়ারস্টো ক লোকেশ বো জাডেজা ৪৯
স্টোকস ন.আ. ৫
অতিরিক্ত ১১
মোট ২৮৪-৪।
পতন: ৭, ২১, ১৬৭, ২৫৩।
বোলিং: উমেশ ১২-১-৪৪-০, ইশান্ত ১২-৫-২৫-১,
জাডেজা ২৮-৩-৭৩-৩, অশ্বিন ২৪-১-৭৬-০,
মিশ্র ১৩-১-৫২-০, করুণ ১-০-৪-০।
ছবি: পিটিআই।