কলকাতা লিগের ডার্বি জট বুধবার কেটেও কাটল না! সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেখানেই রয়ে গেল।
মোহনবাগানের দাবি মেনে ভেস্তে যাওয়া টালিগঞ্জ ম্যাচ রিপ্লে দিয়ে তাদের মান ভাঙাতে পারল না আইএফএ। বাগান তাদের সিদ্ধান্তে এখনও অনড়। পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে আজ বৃহস্পতিবার ক্লাব তাঁবুতে কার্যকরী কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে মোহনবাগান। কেন তারা দাবি জানানোর তিনটে চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তড়িঘড়ি সভা ডাকল তা নিয়ে অবশ্য ময়দানে জোর গুঞ্জন। তা হলে কি মোহনবাগান আইএফএ সচিবের অনুরোধ মেনে নাটকীয় ভাবে খেলতে রাজি হয়ে যাবে? এখনও বাগান সূত্রে সে রকম নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। বরং তারা বুধবার রাতে চিঠি পাঠিয়ে আইএফএ-র গঠনতন্ত্রের নিয়ম নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বাগানের দাবি, নিয়মে আছে কোনও ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ রিপ্লে দিলে, সেটি সাত দিনের মধ্যে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে মোহনবাগান-টালিগঞ্জ রিপ্লে ম্যাচ কেন ১৪ তারিখের পর হবে? প্রশ্ন বাগানের। মোহনবাগান কর্তা দেবাশিস দত্ত বললেন, ‘‘ভেস্তে যাওয়া টালিগঞ্জ ম্যাচের পরই আমরা ডার্বি খেলব। এমনকী ডার্বির আগে সূচিতে যেমন ইউনাইটেড ম্যাচ রয়েছে সেটাও খেলব।’’
ম্যাচ কমিশনার, রেফারিরা ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের যে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তাতে লেখা আছে, বাগানের সদস্য গ্যালারি থেকে কোনও বোতল পড়েনি। খেলা চালানোর পরিস্থিতি ছিল না বলেই তাদের ম্যাচ বাতিল করতে হয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই ম্যাচ কমিশনারের রিপোর্ট যেহেতু বাগানের বিরুদ্ধে যায়নি এবং ওই রিপোর্টই শেষ কথা, তাই ম্যাচ রিপ্লে দিতে কোনও অসুবিধে হয়নি আইএফএ-র লিগ সাব কমিটির। আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘‘ম্যাচ কমিশনার এবং রেফারির রিপোর্ট দেখার পর নিয়মানুযায়ী ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রিপ্লে দেওয়া হয়েছে। আর সেটা হবে ১৪ সেপ্টেম্বরের পর। ডার্বি নির্ধারিত দিনেই হবে।’’ তাতেও অবশ্য ডার্বি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গিয়েছে। বরং উল্টে আইএফএ-কে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের। ক্লাবের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারের মন্তব্য, ‘‘সে দিন ম্যাচটা হতেই পারত। যে ক্লাবের মাঠে হয়েছে তারা যদি সহযোগিতা করত। ম্যাচটা রিপ্লে হওয়ার কথাই নয়। কেন ম্যাচটা রিপ্লে দেওয়া হল তা একমাত্র আইএফএ সচিবই জানেন।’’ সোমবারের ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রিপ্লে দেওয়া হলেও টালিগঞ্জ খেলবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ বুধবার তারা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, ম্যাচ রিপ্লে হলে তারা খেলবে না।
গত দু’দিন ধরে ইঙ্গিত ছিল ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রিপ্লে হচ্ছে। জানা গিয়েছে, সেটা বাগান কর্তাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়ে দিয়েছিলেন আইএফএ সচিব উৎপলবাবু। সেই মতোই চিত্রনাট্য সাজানো ছিল। তাই-ই হল। কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন হঠাৎ ডার্বি খেলা নিয়ে উল্টো সুর গাইছে মোহনবাগান? তা নিয়ে বাগান তাঁবুতেই জোর আলোচনা। আইএফএ সচিব বললেন, ‘‘আমরা ওদের দাবি মেনেই ডার্বির আগে ভেস্তে যাওয়া ম্যাচ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আশা করব, ওরা নিশ্চয়ই নির্ধারিত দিনে ডার্বি খেলবে।’’
ডার্বি পিছিয়ে গেলে বাগানের লাভ। সে ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল আইএসএলের জন্য প্রথম একাদশের অনেক ফুটবলারকেই পাবে না। সবুজ-মেরুন কর্তারা সমর্থকদের আবেগের কথা ভেবে সেই চেষ্টাই করছেন। ক্লাবের একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, আইএফএ যখন ভেস্তে যাওয়া ম্যাচের রিপ্লে দিয়েছে, তখন ডার্বি খেলা উচিত। ফলে, আজ বাগানের কর্মসমিতির সভার দিকে সবার নজর। আইএফএ অবশ্য কিছুতেই ডার্বি পিছোতে রাজি নয়। কারণ, কল্যাণীর অস্থায়ী গ্যালারি, পুলিশ-প্রশাসন, টিভি সম্প্রচার— সবই ঠিক হয়ে গিয়েছে। ম্যাচ পিছোলে সব ওলটপালট হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, সে ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গলও ঝামেলা পাকাতে শুরু করবে। লাল-হলুদ কর্তারাও ম্যাচ বয়কটের পথে হাঁটতে পারে। আইএফএ তাই তীব্র সমস্যায়। সে জন্যই ডার্বির তারিখ নিয়ে তারা কোনও সমঝোতা করতে চাইছে না। বাগান যদি রাজি হয়ে যায় ভাল। না হলে কিন্তু ডার্বি নিয়ে জট আরও বাড়বে।