ভরসা: অ্যান্থনি উলফ ভরসা সুভাষ ভৌমিকের । ফাইল চিত্র
বিপক্ষের গোলের সামনে তাঁর ক্ষিপ্রতা দেখে মোহনবাগান সমর্থকরা সিংহের সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করে দিয়েছেন। তিনি, কামো বায়ি।
আর এক জনের নামের মধ্যেই নেকড়ে। তিনি, টালিগঞ্জ অগ্রগামীর স্ট্রাইকার অ্যান্থনি উলফ।
রবিবার মোহনবাগান মাঠে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে সেরা আকর্ষণ সিংহ বনাম নেকড়ের এই দ্বৈরথ।
সবুজ-মেরুন জার্সিতে অভিষেকের মরসুমেই ছয় গোল করে সাত বছর পর লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কামো। আর ২০০৬ বিশ্বকাপে ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো জাতীয় দলে থাকা অ্যান্থনিকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা টালিগঞ্জ অগ্রগামী শিবিরে।
দ্বৈরথের আগে দুই তারকা অবশ্য দু’রকম মেজাজে।
শনিবার সকালে মোহনবাগান মাঠে সতীর্থদের সঙ্গে খোশমেজাজেই দেখা গেল কামো-কে। অ্যান্থনির সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীদের মধ্যে উন্মাদনা তুঙ্গে। রবিবার মাঠের বাইরে জায়ান্ট স্ক্রিনও বসানো হচ্ছে। যা উদ্বোধন করবেন হোসে রামিরেজ ব্যারেটো। অথচ আশ্চর্যরকম নির্লিপ্ত কামো। ঘনিষ্ঠমহলে তিনি বলেছেন, ‘‘ম্যাচটা মোহনবাগান বনাম টালিগঞ্জ অগ্রগামীর মধ্যে। আমার সঙ্গে অ্যান্থনির কোনও লড়াই নেই।’’
টালিগঞ্জ অগ্রগামীর ‘নেকড়ে’ অবশ্য প্রচণ্ড তেতে রয়েছেন। মনঃসংযোগ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় গত দু’দিন ধরে সতীর্থদের সঙ্গেও প্রয়োজন ছাড়া কথা বলছেন না। কে বলবে এই অ্যান্থনি-ই সপ্তাহখানেক আগে রেনবো এসসি-র বিরুদ্ধো জোড়া গোলের পর হুঙ্কার দিয়েছিলেন, মোহনবাগান কিন্তু অপারেজেয় নয়।
টালিগঞ্জ অগ্রগামী কোচ সুভাষ ভৌমিকের গলায় হুঙ্কারের বদলে মোহনবাগানের প্রশংসাই শোনা গেল। তিনি বললেন, ‘‘মোহনবাগান দারুণ দল। আর কামো-ক্রোমা তো সিংহের বিক্রম নিয়ে খেলছে। আমাদের লক্ষ্য লড়াই করা।’’ আসিয়ানজয়ী কোচ রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে এ দিন অনুশীলনে জোর দিলেন কামো-ক্রোমা জুটিকে আটকে কী ভাবে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠতে হবে, তার মহড়াতেই। যদিও প্রধান ডিফেন্ডার চিকা ওয়ালি স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য অনুশীলনের মাঝপথে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান।
রবিবার মোহনবাগান বনাম টালিগঞ্জ অগ্রগামী ম্যাচ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে গুরু বনাম শিষ্য দ্বৈরথকে কেন্দ্র করেও। চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া শঙ্করলাল চক্রবর্তীর পুনর্জন্ম হয়েছিল সুভাষের কোচিংয়ে। কলকাতা ময়দানে তাঁর কোচ হিসেবে অভিষেকের নেপথ্যেও সুভাষ।
বছর তিনেক আগে মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সুভাষ। সহকারী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শঙ্করলালকে। শনিবার অনুশীলনের পরে শঙ্করলাল বললেন, ‘‘সুভাষদার কাছেই তো কোচিং শিখেছি। উনিই আমার শিক্ষক।’’
আসিয়ানজয়ী কোচের কাছে কী শিখেছেন? শঙ্করলাল বললেন, ‘‘সুভাষদা শিখিয়েছেন, কখনও হাল ছাড়তে নেই। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে।’’ প্রিয় শিষ্যের কথা শুনে সুভাষ হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘শঙ্করলাল খুব বুদ্ধিমান ফুটবলার ছিল। কোচ হিসেবেও তাই। তা বলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই, ও আমাদের সহজে জিততে দেবে।’’
সিংহ বনাম নেকড়ে।
গুরু বনাম শিষ্য।
রবিবাসরীয় দ্বৈরথে জিতবে কে, তা অবশ্য সময়ই বলবে।