সবুজ-মেরুন স্বপ্ন। ফুঁসছেন ওডাফাও।
একই সঙ্গে তিনি বিপদ ও বিপত্তারণ!
তিনি ওডাফা ওকোলি। দু’মরসুম আগের সবুজ-মেরুন ক্রাউডপুলার। শনিবার আই লিগে মোহনবাগান-স্পোর্টিং ক্লুব ম্যাচে তিনিই যে বাগানের ফিয়ার ফ্যাক্টর।
আই লিগে এই নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকারের বিক্রমেই বেঙ্গালুরু আর মুম্বই থেকে তিন পয়েন্ট নিয়ে এসেছে স্পোর্টিং ক্লুব। দুই শহরেই জোড়া গোল রয়েছে ওডাফার। যার সুবাদে সাত ম্যাচে এগারো পয়েন্ট নিয়ে খেতাব শিকারে ওডাফার মতোই চনমনে মেজাজে রয়েছে তাঁর দল। এ বার কি তা হলে মিশন কলকাতা? তাঁর কোচ ম্যাথিউ কোস্টা হোটেলে ফেরার আগে দিয়ে গেলেন প্রতিবেদনের হেডিংটাই। ‘‘ম্যাচটা আমার ওডাফা ভার্সাস বাগান। ও আমার অ্যাসেট। ওডাফা ইজ ওডাফা।’’
কলকাতায় পা দিয়েই একপ্রস্ত হুঙ্কার ছেড়েছিলেন ওডাফা। যা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে শোনাল শুক্রবার সকালে বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রীড়াঙ্গনে। এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন বাগান রক্ষণের ফাঁকফোকর নিয়ে। স্পোর্টিংয়ের নাইজিরিয়ান গোলমেশিন যার জবাবে বলে দেন, ‘‘নো মোহনবাগান। চার্চিলকে এক নম্বর করেছিলাম। এ বার স্পোর্টিংকেও চ্যাম্পিয়ন করাতে চাই। সমালোচকরা কাল সব উত্তর পেয়ে যাবেন।’’ এ বার উড়ে এল পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘গত বছর এই ম্যাচটা কলকাতায় তো হেরেছিলেন।’’ শুনে ফোঁস করে উঠলেন বাগান সমর্থকদের একদা প্রিয় ‘কিংগ কোবরা’। ‘‘এভরিডে ইজ নট সানডে। এখানে হারলেও গোয়ায় তো জোড়া গোল করে হারিয়েছিলাম। শনিবারও সেই তিন পয়েন্টের জন্যই ঝাঁপাচ্ছি।’’
জ্বরের কারণে বাগান কোচ সঞ্জয় সেন শুক্রবার অনুশীলন বা সাংবাদিক সম্মেলনে আসেননি। রাজু গায়কোয়াড়কে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এসেছিলেন সহকারী কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী। বাগান ডিফেন্সের সেই রাজুও ওডাফার নাম শুনে বললেন, ‘‘ও ভারতের সেরা তিন স্ট্রাইকারের এক জন। বারাসতে ওডাফা আমাদের কাছে একটা টাফ চ্যালেঞ্জ।’’ আর জ্বর গায়ে চেতলার বাড়িতে বসে সঞ্জয়ের ওডাফা-নিধন পরিকল্পনা সম্পর্কে বাগানের সহকারী কোচও বলে গেলেন, ‘‘কোচ প্র্যাকটিসে না এলেও সকাল থেকে সব কিছুর উপর নজর রাখছেন। ওদের আসল লোক তো ওডাফা। ওর জন্য গোপন পরিকল্পনা থাকছে আমাদের।’’
কী সেই পরিকল্পনা?
বাগান ব্রিগেড জানে, ওডাফা কাউন্টার অ্যাটাক স্ট্রাইকার নন। একদম পেনাল্টি বক্স স্ট্রাইকার। গায়ে অসুরের মতো শক্তি, সঙ্গে দুরন্ত কভারিং। ঘাড়ের কাছে দু’তিন জনকে নিয়ে গোল করে আসতে পারেন যখন-তখন। আর স্কোরিং জোনে শট মারবো মারবো করেও হঠাৎই ফলস দিয়ে ইনসাইড ড্রিবল করে গোলের মুখ খুলে ফেলেন। দু’পায়ে গোলার মতো শট। তবে কিংগ কোবরা তখনই বিষাক্ত, যখন তাঁকে বল বাড়ান কর্নেল গ্লেনের দেশোয়ালি মিডিও ডেনসিল থিওবাল্ড, ডেনসন দেবদাস, ভিক্টোরিনোরা। তাই শনিবার বাগানের প্ল্যান এ— ওডাফার সাপ্লাই লাইন কাটো। প্ল্যান বি— জোনাল মার্কিংয়ের সঙ্গে ডাবল কভারিংটা মিশিয়ে দাও।
সেই থিওরিতে লাজং ম্যাচের দল থেকে বাদ যাচ্ছেন রাইট ব্যাক সার্থক। সে জায়গায় আসছেন রাজু। আর মিডফিল্ডে বিক্রমজিতের জায়গায় প্রণয়— ওডাফা বল ধরলেই প্রথম টক্কর নেওয়ার জন্য।
আর গোল করতে সঞ্জয়ের টিমে ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বরের ভূমিকায় সনি-গ্লেন-কাতসুমি তো থাকছেনই। রাইট উইংয়ে কেন লুইসের জায়গায় খেলতে দেখা যেতে পারে ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজকে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে কাতসুমি।
লিগ টেবলে সাত ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে আই লিগের ফার্স্ট বয় মোহনবাগান। স্পোর্টিং ফোর্থ। ক্লান্তি এড়াতে এ দিন দলের সঙ্গে পুরোদস্তুর প্র্যাকটিস করেননি সনি-জেজে-লুসিয়ানো-কাতসুমিরা। সনি আবার প্র্যাকটিস সেরেই ছুট লাগালেন বাড়িতে। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, ‘‘বান্ধবী পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছে। হাসপাতালে দেখতে যাচ্ছি।’’ তাই সকলের হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে জেজে বলছেন, ‘‘সুযোগগুলো থেকে সে ভাবে স্কোর হচ্ছে না তো! জানি। তবে আমাদের কেউ না কেউ ঠিক গোল করে দেবে।’’
জেজে যখন এ কথা বলছেন, ঠিক তখনই বারাসত থেকে খবর এল ওডাফা চটে লাল। কেন? কেউ তাঁকে খুঁচিয়েছেন, কেন তিনি টপ স্কোরারের তালিকায় তৃতীয়— র্যান্টি, ডাফির পিছনে। যা শুনে বিরক্ত নাইজিরিয়ানের ফের হুঙ্কার, ‘‘ওরা কি ক্যাপ্টেন? দলকে জেতানোয় আমাকে বিশেষ দায়িত্ব নিতে হয়।’’
সেই বিশেষ দায়িত্ব যদি শনিবার বিকেলে ফের কাঁধে তুলে নেন ওডাফা তাঁর পুরনো ক্লাবকে গুঁড়িয়ে দিতে? শুনে হাসছেন বাগানের লুসিয়ানো। বলছেন, ‘‘ওডাফা বড় স্ট্রাইকার। তবে ওর সঙ্গে জেজে, গ্লেন, র্যান্টিদেরও গত কয়েক বছরে থামিয়েছি। আমরা তৈরি।’’
ঠিকই বলেছেন ম্যাথিউ। স্পোর্টিং ক্লুব নয়। শনিবার বারাসতে গোয়ান ক্লাবের ছায়ার আড়ালে ওডাফার কায়ার সঙ্গেই লড়াই সবুজ-মেরুনের।
শুক্রবারে আই লিগ
মোহনবাগান-স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া (বারাসত, ৪-৩০)
আইজল এফসি-মুম্বই এফসি (আইজল, ২-০০)।
ছবি: উৎপল সরকার।