চমক: মোহনবাগান মাঠে ঘুড়ি নিয়ে ব্যস্ত ডিকা। —নিজস্ব চিত্র।
আকাশে ওড়া ঘুড়ির সুতোটা তাঁর হাতে ধরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে ছিল সমর্থকদের। কিন্তু সেটা না ধরে শেষ পর্যন্ত লাটাই-ই ধরলেন দিপান্দা ডিকা।
বিশ্বকর্মা পুজোর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ বঙ্গ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কলকাতা লিগের শেষ প্রস্তুতির দিন, সোমবার সকালে দলের এক নম্বর তারকার হাতে সেটা ধরিয়ে দিয়েই উৎসবে মাতলেন মোহনবাগান সমর্থকরা। লাটাই হাতে ডিকা একটু নেচেও নিলেন।
আট বছর পর লিগ খেতাব হাতের মুঠোয়। ছোট ডার্বিতে মহমেডানের বিরুদ্ধে শঙ্করলাল চক্রবর্তীর দলের লক্ষ্য এখন একটাই—অপরাজিত থেকে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এবং কী আশ্চর্য, সেই ম্যাচে দলকে মসৃণ রাখার লাটাই তুলে দিতে হচ্ছে ডিকার হাতেই। গোলের জন্য তাঁর দিকেই তাঁকিয়ে থাকবেন সমর্থকরা। কারণ চোটের জন্য তাঁর সঙ্গী স্ট্রাইকার হেনরি কিসেক্কা আজ মঙ্গলবার যুবভারতীতে নামতে পারছেন না। এ বারের লিগে ডিকা-হেনরি জুটিই তো সুপার হিট! মোহনবাগানের ২৫ গোলের ১৬টা গোলই ওদের দু’জনের। ডিকার ১০, হেনরির ৬। ডিকার নিজেরও সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার জন্য এটাই শেষ ম্যাচ। তাঁর সঙ্গে পিয়ারলেসের আনসুমানা ক্রোমাও যে করে ফেলেছেন ১০ গোল।
মোহনবাগান বনাম মহমেডান (যুবভারতী ৪-৩০)
ইস্টবেঙ্গল বনাম এফ সি আই (ইস্টবেঙ্গল ৪-৩০)।
মহড়া: মহমেডানের প্রস্তুতিতে ফিলিপ আজা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ঢাকের বাদ্যিতে উৎসবের আবহ চারিদিকে। দুর্গাপুজোর বোধনের অনেক আগেই অবশ্য গোষ্ঠ পাল সরণিতে শুরু হয়ে গিয়েছিল লিগ জেতার উৎসব। গত বুধবার কাস্টমস ম্যাচের পর থেকেই তা চলছে পাড়ায় পাড়ায়, অলিতে-গলিতে। এ দিনও দেখা গেল সেই ধারা অব্যাহত। অনুশীলনের পর ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’-এর সঙ্গে সবুজ-মেরুন আবিরও উড়ল গ্যালারিতে। ‘স্মোক বোম্ব’-এর ধোঁয়ায় ঢেকে গেল মাঠ। শ’খানেক সমর্থকের এই উচ্ছ্বাস দেখে ডিকা-পিন্টু মাহাতোরা সেখানে গিয়ে তাদের পাল্টা অভিবাদনও জানিয়ে এলেন। তাতে উৎসবের মাত্রা আরও বাড়ল।
‘‘এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই যে, খেতাব জেতার পর উৎসবের একটা পরিবেশ ঢুকে পড়েছে দলে। একটা লক্ষ্য নিয়ে এগিয়েছিলাম। সেটা হয়ে গিয়েছে। ফলে একটু সমস্যা তো হচ্ছেই। তাই ছেলেদের বলেছি, নিজেদের সম্মান, ক্লাবের সম্মান বাঁচিয়ে, অপরাজিত থেকে লিগ শেষ করার জন্যই ম্যাচটা জিততে হবে,’’ অনুশীলনের পর এ ভাবেই ড্রেসিংরুমের আবহ সামনে এনে দেন মোহনবাগান কোচ শঙ্করলাল। রঘু নন্দীর দলের বিরুদ্ধে দলে কয়েকটি পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন তিনি। যেমন ডিকার সঙ্গে আজহারউদ্দিন মল্লিককে খেলানো হচ্ছে ফরোয়ার্ডে। ব্রিটোকে না খেলিয়ে শুরু থেকেই অবিনাশ রুইদাশকে নামাতে চাইছেন তিনি মাঝমাঠে। গোলে খেলবেন রিকার্ডো কার্ডোজো। শুরুতে গোল হয়ে গেলে জাপানি মিডিও ইউতা কিনওয়াকিকে শেষ দিকে নামিয়ে পরখ করে নেওয়ার ভাবনা ঘুরছে মোহনবাগান কোচের মাথায়। ডিকাদের কোচ বলেও ফেললেন, ‘‘লিগ শেষ হলে দিন দশেকের ছুটি দিয়ে দিচ্ছি। ইউতাকে একটু দেখে নিতে চাই।’’
অপরাজিত থাকা ছাড়া অন্য কোনও লক্ষ্য নেই। প্রতিদ্বন্দ্বী মহমেডানের অবস্থাও প্রায় একই রকম। লিগ টেবলের যা পরিস্থিতি, তাতে জিতলে বা ড্র করলেও রানার্স হতে পারছেন না ফিলিপ আজা’রা। এই অবস্থায় মহমেডান কোচ রঘু নন্দী বলে দিলেন, ‘‘আমাদের তো হারানোর কিছু নেই। জিতলে মোহনবাগানের অপরাজিত থাকার স্বপ্ন সফল হবে না।’’ ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে অঘটন ঘটানোর পর অবনমনে পড়ে যাওয়া টালিগঞ্জ অগ্রগামীর কাছে হেরেছেন আজা’রা। কেন এমন হল? চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিলেন সাদা-কালো শিবিরের কোচ। বললেন, ‘‘পাঁচ ফুটবলারের একটা করে হলুদ কার্ড রয়েছে। মোহনবাগান ম্যাচ খেলবে বলে ওরা টালিগঞ্জ ম্যাচে পা বাঁচিয়ে খেলেছে।’’ মাঠে নামার আগে অবশ্য প্রতিপক্ষকে এগিয়ে রাখছেন ময়দানের পোড় খাওয়া কোচ। বলে দিলেন, ‘‘এ বারের লিগে সবথেকে ধারাবাহিক খেলছে মোহনবাগান। ওদের রোখা কঠিন। কিন্তু আমাদেরও কোনও চাপ নেই। সেটাই সুবিধা।’’ শেষ ম্যাচে এসে লিগ জয়ে চোনা পড়ুক, চাইছে না মোহনবাগান। দলে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেও মহমেডানকে তাই খাটো চোখে দেখছেন না শঙ্করলাল। বলছিলেন, ‘‘মহমেডান যে কোনও সময় অঘটন ঘটিয়ে দেয়। ওদের আজা’র একটা চোরা গতি আছে। সেটা আমরা মাথায় রাখছি।’’ বোঝাই যায়, খেতাব জিতলেও জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেই আই লিগের পথে পা বাড়াতে চাইছে মোহনবাগান।
পুজোর পরেই আই লিগ। ডিকা বনাম আজার লড়াই শেষে বোঝা যাবে, মোহনবাগানের পুজো কেমন কাটবে।